এমডির দক্ষতায় এগিয়েছে এসেনসিয়াল ড্রাগস
বছরে বিক্রি হচ্ছে ৯০০ কোটি টাকার ওষুধ
এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) দেশের সেবায় কী ধরনের ভূমিকা রাখছে, বর্তমানে কী পরিকল্পনা হাতে নিয়ে এগোচ্ছে এই ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক ডা. এহসানুল কবির জগলুল এসব বিষয়ে প্রতিদিনের সংবাদের প্রতিবেদক মারুফ মালেকের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এর ইতিহাস এবং আগামী দিনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলেছেন।
অধ্যাপক ডা. এহসানুল কবির জগলুল জানান, এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় ঢাকার তেজগাঁওয়ে অবস্থিত। দেশে সরকারিভাবে ওষুধ উৎপাদনের জন্য এ কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সরকারি এ কোম্পানিটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ন্ত্রিত হয়। ঔষধ শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সরকারি এই কোম্পানি উৎপাদনের ক্ষেত্রে শক্ত অবস্থানে আছে। শুরুতে কোম্পানিটি ১৯৬২ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের অধীনে সরকারি ফার্মাসিউটিক্যাল গবেষণাগার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৯ সালে নামকরণ করা হয় ফার্মাসিউটিক্যালস উৎপাদন ইউনিট নামে। এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৮৩ সালে। এরপর এটি একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয়। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান জনবল ২ হাজার ৬০০ জনের বেশি।
অধ্যাপক ডা. এহসানুল কবির জগলুল বলেন, ‘আমি ২০১৪ সালে এই প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পাই। যখন আমি আসি তখন বছরে ওষুধ বিক্রি ছিল ৩০০ থেকে ৩৫০ কোটি টাকা। বর্তমানে আমাদের বার্ষিক ওষুধ বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা। আমি আসার পর আগের তুলনায় কাঁচামালের দাম ৪০ শতাংশ কমে কেনা হচ্ছে। আমি শ্রমিকদের বেতন দ্বিগুণ করেছি এবং তাদের আসা-যাওয়ার জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করেছি। আমাদের শ্রমিকরাও করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করেছেন।’
আগামী পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা ভ্যাকসিন তৈরির কাজ হাতে নিয়েছি। গোপালগঞ্জ প্রজেক্টের সঙ্গেই সাত একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে ভ্যাকসিন প্লান্ট তৈরি করা হবে এবং আমরা করোনার ভ্যাকসিনসহ বিভিন্ন ধরনের ভ্যাকসিনও উৎপাদন করব।’
প্রতিষ্ঠানের সেবা ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অধ্যাপক ডা. এহসানুল কবির জগলুল বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের ১০০টির মতো ওষুধ উৎপাদন হচ্ছে। সারা দেশে প্রতিদিন প্রায় দেড় কোটি রোগী আমাদের ওষুধ সেবন করেন। আমাদের প্রধান কাজ এখন তিনটি। উৎপাদন নিশ্চিত করা, কোয়ালিটি-সম্পন্ন ওষুধ উৎপাদন করা, নিজস্ব পরিবহনে ডিস্ট্রিবিউশন করা। দেশের সব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কমিউনিটি ক্লিনিক, আর্মি, বিজিবি, আনসার, পুলিশসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আমাদের ওষুধ সুশৃঙ্খলভাবে প্রতিদিন সাপ্লাই দিচ্ছি। আমাদের তৈরি ওষুধ সরকার ৫ শতাংশ লাভ দিয়ে কিনে নেয়।’
দেশের ঔষধ শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে বর্তমানে ৯০ শতাংশের বেশি ওষুধ তৈরির কাঁচামাল আমদানি করতে হচ্ছে। নরসিংদীতে এপিআই পার্ক তৈরি করা হচ্ছে। এটা কমপ্লিট হলে দেশেই কাঁচামাল তৈরি হবে এবং তখন ঔষধ শিল্পের দেশ হিসেবে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ যথেষ্ট পজিটিভ পরিচিতি লাভ করবে। দেশেই আমাদের ওষুধের চাহিদা অনেক বেশি। সবার সহযোগিতায় দেশের চাহিদা পূরণ করে এক দিন বিদেশে এসেনসিয়াল ড্রাগের ওষুধ যাবে, সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
"