নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ অক্টোবর, ২০২১

শেখ রাসেল দিবসে প্রধানমন্ত্রী

শিশুর জীবন অর্থবহ করাই হোক আদর্শ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে আর কোনো শিশুকে যেন শেখ রাসেলের মতো ভাগ্যবরণ করতে না হয় সে বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শিশুদের নিরাপত্তা এবং ভালোবাসা দেওয়া, তাদের সুন্দরভাবে গড়ে তোলা, তাদের জীবনকে সার্থক এবং অর্থবহ করাই হোক সবার আদর্শ। গতকাল সোমবার বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে শহীদ শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত ‘শেখ রাসেল দিবস-২০২১’-এর উদ্বোধনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি গণভবন থেকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নেন।

‘আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর কোনো শিশুর জীবনে যাতে শেখ রাসেলের মতো

ঘটনা না ঘটে। তাদের জীবন যাতে সুন্দর হয়। কারণ, একজন শিশুকে হত্যা করা মানেই লাখো কোটি শিশুর জীবনকে শঙ্কায় ফেলে দেওয়া। আমরা এ রকম চাই না। চাই বাংলাদেশ একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হবে। প্রত্যেকটি শিশুর জীবন অর্থবহ এবং সুন্দর হবে। কেউ অকালে ঝরে যাবে না।’

দেশের মানুষকে একটা উন্নত জীবন দেওয়ার সঙ্গে শিশুদের নিরাপত্তা প্রদানেও নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে শিশু নিরাপত্তার জন্য আইন প্রণয়ন করে যান। কিন্তু দুর্ভাগ্য ঘাতকের হাতে তারই সন্তানদের হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয়।

দেশের শিশুদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তোলার জন্যই তিনি শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদ গড়ে তোলা হয়েছে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শিশুদের মেধা ও মনন বিকাশে নিয়োজিত এই সংগঠনটি পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রথমবারের মতো পালিত ‘শেখ রাসেল দিবস ২০২১’-এর প্রতিপাদ্য ‘শেখ রাসেল দীপ্ত জয়োল্লাস, অদম্য আত্মবিশ্বাস’- যথার্থ হয়েছে বলে আমি মনে করি। কারণ, আমাদের দেশের শিশুরা একটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ে গড়ে উঠুক। শিশুদের ভেতরের যে সুপ্ত প্রতিভা এবং জ্ঞান রয়েছে তা বিকশিত হোক এবং আগামীর বাংলাদেশ যেন স্বাধীন দেশের আদর্শ নিয়ে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে গড়ে উঠতে পারে।

ছোট ভাই রাসেলের স্মৃতিচারণা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাসেল ছোটবেলা থেকে শিশুদের নিয়ে প্যারেড করত। সে বড় ভাই শেখ জামালের মতো সেনা অফিসার হতে চাইত। বেঁচে থাকলে হয়তো সে আজ সেনাবাহিনীর বড় অফিসার হতো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্পদ চুরি হতে পারে বা হারাতে পারে। কিন্তু লেখাপড়া এবং শিক্ষা এটা এমন একটা সম্পদ যেটা কেউ কারো কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারে না। তিনি করোনাকালীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর এখন তার সরকার ধীরে ধীরে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনা শিশুদের প্রযুক্তি শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত আমাদের উৎকর্ষ করে। আর এই প্রযুক্তি পরিবর্তনশীল। কাজেই আমাদের শিশুরা ছোটবেলা থেকে প্রযুক্তিশিক্ষা নিয়ে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে- সেটাই আমার কামনা। সারা দেশে কম্পিউটারপ্রাপ্ত ছেলেমেয়েদের জীবনের মাধ্যমে উন্নত হবে এবং দারিদ্র্যের হাত মুক্তি পাবে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম বক্তব্য দেন। শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের মহাসচিব এবং শিশু বক্তা আফসার জাফর সৃজিতা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ পরিবেশিত শেখ রাসেলের দুরন্ত শৈশবভিত্তিক অডিও ভিজ্যুয়াল পরিবেশনা ‘শেখ রাসেল এক অনন্ত বেদনার কাব্য’ এবং ‘থিম সঙ্গ’ পরিবেশিত হয়।

অনুষ্ঠানে শিক্ষা, ক্রীড়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, শিল্পকলা-সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু- এই পাঁচটি ক্যাটাগরিতে প্রতিটি ১ ভরি করে ১০টি ‘শেখ রাসেল স্বর্ণপদক’, ১০টি ল্যাপটপ ও সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। এ ছাড়া, শেখ রাসেল অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের ১০টি ল্যাপটপ এবং লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের (এলইডিপি) আওতায় প্রশিক্ষণার্থীর মধ্য থেকে সর্বোচ্চ উপার্জনকারীদের মধ্যে চার হাজার ল্যাপটপ দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের উদ্যোগে সারা দেশে আয়োজিত ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতারও পুরস্কার বিতরণ করা হয়। একই সঙ্গে অনুষ্ঠানে সংযুক্ত শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং স্টেডিয়াম প্রান্তে শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী রোলার স্কেটিং প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয় এবং ‘শেখ রাসেল শৈশবে ঝরে যাওয়া ফুল’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ প্রকাশিত ‘শেখ রাসেল দৃপ্ত জয়োল্লাস, অদম্য আত্মবিশ্বাস’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় পর্বে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের উদ্যোগে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও পরিবেশিত হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close