সংসদ প্রতিবেদক

  ১৩ অক্টোবর, ২০২১

আইনি ভিত্তি পাচ্ছে বিরোধীদলীয় নেতা ও উপনেতার পদ

প্রতিবেদন চূড়ান্ত

জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও উপ-নেতার পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার-সংক্রান্ত সামরিক আমলের আইন বাতিল করে নতুন আইন করতে সংসদে উত্থাপিত বিলের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে সংসদীয় কমিটি। সংসদের আগামী অধিবেশনে এটি পাসের সুপারিশ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আইনি ভিত্তি পাচ্ছে বিরোধীদলীয় নেতা ও উপ-নেতার পদ। এদিকে, বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় সংসদে উত্থাপিত বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) বিলের প্রতিবেদন চূড়ান্ত হয়েছে।

জাতীয় সংসদ ভবনে গতকাল মঙ্গলবার আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বিল দুটির প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়। কমিটির সভাপতি মো. শহীদুজ্জামান সরকারের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, মো. শামসুল হক টুকু, শামীম হায়দার পাটোয়ারী এবং গ্লোরিয়া ঝর্না সরকার অংশ নেন। লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ এবং আইন ও বিচার বিভাগের সচিব, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব, মন্ত্রণালয় এবং সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বিরোধীদলীয় নেতা বা উপ-নেতার বিষয়ে দেশের সংবিধানে কিছু বলা নেই। তবে ‘বিরোধীদলীয় নেতা বা উপ-নেতার (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) অধ্যাদেশ-১৯৭৯’-এ তাদের পারিতোষিক ও মর্যাদার কথা বলা হয়েছে। বিরোধীদলীয় নেতা ও উপ-নেতার স্বীকৃতি দেওয়ার একক ক্ষমতা স্পিকারের।

বিরোধীদলীয় নেতা মনোনয়নের বিষয়ে সংসদের কার্যপ্রণালি বিধির ২(১)(ট) বিধিতে বলা হয়েছে, ‘বিরোধী দলের নেতা’ অর্থ স্পিকারের বিবেচনামতে যে সংসদ সদস্য সংসদে সরকারি দলের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চসংখ্যক সদস্য লইয়া গঠিত ক্ষেত্রমত দল বা অধিষঙ্গের নেতা। তবে সংসদে কার্যপ্রণালি বিধিতে বিরোধীদলীয় উপনেতার বিষয়ে কিছু বলা নেই। বিরোধীদলীয় নেতা বা উপ-নেতার (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) অধ্যাদেশ-১৯৭৯ বলেই বিরোধীদলীয় নেতা মন্ত্রী এবং উপনেতা প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন।

প্রচলিত নিয়ম ও বিধিবিধান অনুযায়ী, জাতীয় নির্বাচন শেষে সংসদ গঠনের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাওয়া রাজনৈতিক দল সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। প্রধান বিরোধী দলের পার্লামেন্টারি পার্টি বৈঠকের মাধ্যমে বিরোধীদলীয় নেতা ও উপনেতা মনোনীত করা হয়। পরে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দলের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে স্পিকারকে জানাতে হয়। স্পিকার কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন।

তবে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও বিরোধীদলীয় উপনেতা মনোনয়নে সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা জটিলতার সৃষ্টি হয়। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর বর্তমান সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রয়াত চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ দলের পার্লামেন্টারি পার্টির কোনো বৈঠক ছাড়াই ২০১৯ সালের ৪ জানুয়ারি গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে ঘোষণা দেন, দলের পদাধিকার বলে তিনিই হবেন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা এবং তার ভাই জি এম কাদের হবেন বিরোধীদলীয় উপনেতা। পরদিন এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে চিঠি দিয়েছিলেন এরশাদ। এরপর ২০১৯ সালের ১০ জানুয়ারি এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতা ও জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে স্বীকৃতি দেন স্পিকার। তবে একই বছরের ২২ মার্চ স্পিকারকে দেওয়া চিঠিতে জি এম কাদেরের পরিবর্তে রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় উপনেতা করার অনুরোধ জানান এরশাদ। পরদিন ২৩ মার্চ রওশনকে বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে স্বীকৃতি দেন স্পিকার।

বঙ্গবন্ধু পরিবারের নিরাপত্তা দেবে এসএসএফ : এদিকে গতকালের বৈঠকে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) বিল-২০২১ এর প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে কমিটি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় সংসদের গত অধিবেশনে একটি বিল আনা হয়। সংসদ কাজে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বিলটি উত্থাপন করার পর পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল।

১৯৮৬ সালের একটি অধ্যাদেশ দিয়ে বর্তমানে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর (এসএসএফ) কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সামরিক আমলে প্রণীত ওই আইন বাতিল করে বাংলায় নতুন আইন করতে বিলটি আনা হয়েছে। অবশ্য জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা আইন-২০০৯ এর অধীনে জাতির পিতার পরিবারের সদস্যরা বর্তমান নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন। নতুন আইনের ফলে এসএসএফ তাদের নিরাপত্তা দেবে।

বিলে জাতির পিতার পরিবারের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা এবং তাদের সন্তান ও ক্ষেত্রমতো ওই সন্তানের স্বামী বা স্ত্রী এবং তাদের সন্তান। আগের বিষয়গুলোকে প্রস্তাবিত আইনে রাখার পাশাপাশি নতুন করে যুক্ত হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্য ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দৈহিক নিরাপত্তা প্রদান। সরকারি গেজেট দিয়ে ঘোষিত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, কোনো বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানরাও এই আইনের অধীনে নিরাপত্তা পাবেন।

বিলে বলা হয়েছে, এসএসএফের তত্ত্বাবধান ও নেতৃত্ব প্রধানমন্ত্রীর ওপর ন্যস্ত থাকবে। খসড়া আইনে বলা হয়েছে, তল্লাশি, আটক ও গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসহ থানার একজন ওসির যেসব ক্ষমতা আছে এসএসএফের একজন কর্মকর্তার এই আইনের অধীনে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সারা দেশে সে ক্ষমতা থাকবে। বিলে আরও বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং জাতির পিতার পরিবারের সদস্যরা যেখানেই অবস্থান করুন না কেন এসএসএফ তাদের নিরাপত্তা দেবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close