এইচ আর তুহিন, যশোর

  ১১ অক্টোবর, ২০২১

যশোর শিক্ষা বোর্ড

আড়াই কোটি টাকা লোপাটের ঘটনায় দুদকে অভিযোগ

যশোর শিক্ষা বোর্ডের আড়াই কোটি টাকা লোপাটের ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদকে) অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। বোর্ডের সচিব এ এম এইচ আলী আর রেজা গতকাল রবিবার সকালে দুদক যশোর কার্যালয়ে গিয়ে এ অভিযোগ দাখিল করেন। পরে দুপুর ১২টার দিকে দুদক কর্মকর্তারা বোর্ডে গিয়ে তদন্ত শুরু করেন। ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন হিসাব সহকারী আবদুস সালাম।

এদিকে, টাকা আত্মসাতের ব্যাপারে বোর্ড চেয়ারম্যান ও চেক ইস্যু হওয়া ভেনাস প্রিন্টিং মালিক একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারোপ করছেন। ঘটনা জানাজানির পর থেকেই হিসাব সহকারী আবদুস সালাম অফিসে অনুপস্থিত রয়েছেন জানিয়ে যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোল্লা আমীর হোসেন বলেন, ‘ভেনাস প্রিন্টিংয়ের মালিকসহ অভিযুক্তরা টাকা ফেরত দিতে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। এটি একটি আইনি প্রক্রিয়া। টাকা ফেরত দিলেও যা হবে তা আদালতের মাধ্যমেই নিষ্পত্তি হবে।’ অপরদিকে যশোরের ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক শরিফুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘আড়াই কোটি টাকা লোপাটের সঙ্গে চেয়ারম্যান মোল্লা আমীর হোসেন, উপসহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেনসহ চারজন জড়িত।’ সাংবাদিকদের তিনি আরো বলেন, ‘ভুয়া প্যাড, সিল ব্যবহার করে প্রকৌশলী কামাল হোসেন ও চেয়ারম্যান টাকা লুটপাটের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। সব টাকা তাদের কাছে আছে। আমার কাছ থেকে ফিরতি চেকে তারা এ টাকা নিয়ে গেছে।’

চলতি অর্থবছরে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড সরকারি কোষাগারে জমার জন্য আয়কর ও ভ্যাট বাবদ ১০ হাজার ৩৬ টাকার ৯টি চেক ইস্যু করে। এই ৯টি চেক জালিয়াতি করে ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের নামে ১ কোটি ৮৯ লাখ ১২ হাজার ১০ টাকা এবং শাহীলাল স্টোরের নামে ৬১ লাখ ৩২ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। সরকারি ছুটি থাকায় ঘটনা প্রকাশ্যে আসার দুই দিন পর গতকাল রবিবার বোর্ডের সচিব এ এম এইচ আলী আর রেজা দুদক কার্যালয়ে গিয়ে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় অভিযোগ দাখিল করেন। এরপর দুপুর ১২টার দিকে দুদক কর্মকর্তারা বোর্ডে গিয়ে তদন্ত শুরু করেন। দুদক কর্মকর্তারা সব কাগজপত্র সংগ্রহ করেছেন বলে জানিয়েছেন।

এদিকে, গত বৃহস্পতিবার দুর্নীতির বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর পালিয়ে যান হিসাব সহকারী আবদুস সালাম। গতকালও তিনি অফিসে আসেননি। বোর্ডে গিয়ে তার কক্ষটি তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়।

যশোর শিক্ষা বোর্ড এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবুল বলেন, ‘হিসাব সহকারী আবদুস সালামের আগেও অনেক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১২ লাখ টাকার একটি দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। সেই সময় তদবির করে তিনি সেখান থেকে রক্ষা পান। এরপর আড়াই কোটির টাকা দুর্নীতির সঙ্গেও আবদুস সালাম জড়িত হয়েছেন।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আবদুস সালাম দুর্নীতির মাধ্যমে উপশহরে দুটি আলিশান বাড়ি, শ্বশুরবাড়ি এলাকায় ১০ বিঘা জমি, যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্রে একটি বেসরকারি ক্লিনিকের মালিকানা রয়েছে।

যশোর শিক্ষা বোর্ডের একটি সূত্র জানায়, অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক শরিফুল ইসলাম বাবু ও ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্তরা টাকা ফেরত দিতে যোগাযোগ করছে। অপরদিকে, শাহীলাল স্টোরের মালিক আশরাফুল ইসলাম বোর্ড কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন তার কাছে থাকা লক্ষাধিক টাকা ফেরত দিতে ইচ্ছুক।

বোর্ডের সচিব এ এম এইচ আলী আর রেজা বলেন, ‘মাঝে দুই দিন সরকারি ছুটি থাকায় আমরা রবিবার দুদকে একটি অভিযোগ দিয়েছি। দুদক কর্মকর্তারা সেটি গ্রহণ করেছেন।’

দুর্নীতি দমন কমিশন যশোর কার্যালয়ের উপপরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাত বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি। রবিবার সব নথি তলব করা হয়েছে। এরই মধ্যে কিছু কাগজপত্র হাতে পেয়েছি। তদন্ত কাজ চলছে। সরকারের টাকা আত্মসাতের সঙ্গে যারাই জড়িত হোক না কেন কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close