নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১০ অক্টোবর, ২০২১

৩৩ মন্ত্রী-এমপি-সচিবের নাম ভাঙিয়ে প্রতারণা

৫ প্রতারক গ্রেপ্তার

রাজধানীর কারওয়ানবাজার, মিরপুর ও গুলশান থেকে ভুয়া অতিরিক্ত সচিব পরিচয় দিয়ে প্রতারণার অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ডিবি জানায়, আসামিরা ৩৩ মন্ত্রী-এমপি এবং সচিবের নাম ভাঙিয়ে নানা কৌশলে প্রতারণা করতেন। এ ধরনের প্রতারক হিসেবে চিহ্নিত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।গতকাল শনিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। গ্রেপ্তাররা হলেন আবদুল কাদের চৌধুরী, শারমিন চৌধুরী ছোঁয়া, শহিদুল আলম ও আনিসুর রহমান।

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া আবদুল কাদের চৌধুরী তার নিজস্ব দালাল ও মিডিয়াম্যানের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রলুব্ধ করে বড় অঙ্কের ঋণ প্রদান এবং ওয়ার্ক অর্ডার, সাব-কন্ট্রাক্ট, ঠিকাদারি কাজ পাইয়ে দেওয়ার প্রসেসিং করতেন। সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য তিনি ভুয়া অতিরিক্ত সচিবের পরিচয়, ভুয়া সিআইপি, নামিদামি গাড়ি, বডিগার্ড ও ওয়্যারলেস সেট ইত্যাদি ব্যবহার করতেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সেনাবাহিনীর কাছ থেকে প্রাপ্ত ভুয়া কার্যাদেশ, শমসের বিন মুসার সঙ্গে তোলা ছবি ও লেনদেনের ভুয়া কাগজপত্র ব্যবহার করতেন। সচিবসহ ৩৩ উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তির সঙ্গে তার কনসোর্টিয়াম, ব্যবসা আছে বলে প্রচার করতেন।

এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, আবদুল কাদের চৌধুরী ঢাকা ট্রেড করপোরেশন, জমিদার ট্রেডিং, সামীন এন্টারপ্রাইজ, চৌধুরী গ্রুপ, হিউম্যান ইমপ্রুভমেন্ট ফাউন্ডেশন, সততা প্রোপার্টিজ, ডানা লজিস্টিকস, ডানা মোটর্স ইত্যাদি নামসর্বস্ব কয়েকটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে প্রতারণা কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। তিনি হিউম্যান ইমপ্রুভমেন্ট ফাউন্ডেশনের ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের’ মাধ্যমে বড় রকমের প্রতারণা করেছেন। ২০০৪ থেকে ২০০৬ সালে দেশের শত শত মানুষের কাছ থেকে সরকারি অনুদানে বাড়ি ও খামার তৈরির নামে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আরো বলেন, গ্রেপ্তাররা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ২০ কোটি বা এর চেয়ে বেশি টাকার লোন পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণা করেছেন। এ ক্ষেত্রে গ্রেপ্তাররাসহ অন্যরা ঠিকাদার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে অ্যাডভার্টাইজমেন্ট করেন। ভুয়া অতিরিক্ত সচিব সেজে সাক্ষাতে প্রার্থীদের কাছ থেকে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা ভিজিট ফি নিতেন আবদুল কাদের চৌধুরী। ব্যাংক থেকে ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার লোন পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রসেসিং ফি বাবদ ৫ থেকে ১০ শতাংশ টাকা ডাউনপেমেন্ট হিসেবে নিতেন। মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হওয়ার জন্য সেনাবাহিনী পরিচালিত ও বিভিন্ন সরকারি প্রজেক্টের শত শত কোটি টাকার ঠিকাদারি পেয়েছেন বলে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে প্রচার করতেন। এসব ভুয়া ওয়ার্ক অর্ডার বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে তাদের থেকে বড় অঙ্কের টাকা জামানত রেখে প্রতারণা করতেন।

ডিবি প্রধান বলেন, তারা বিভিন্ন সরকারি ব্যাংকে লোক নিয়োগ দেওয়ার নামে বিপুল টাকা হাতিয়ে নেন। সততা প্রপার্টিজের নামে নামমাত্র কিছু টাকা বায়নার মাধ্যমে জমি ও স্থাপনা ক্রয়ের জন্য চুক্তি করেন। যেগুলো দিয়ে পরবর্তী সময়ে মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করে টাকা আদায় করে থাকেন। এসব প্রতারণার কাজে অশিক্ষিত কাদের নিজেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন শেষে সর্বশেষ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পরিচয় দিতেন।

হাফিজ আক্তার বলেন, প্রতারক আবদুল কাদের নিজেকে কথিত ধনকুবের প্রিন্স মুসা বিন শমসেরের প্রতিষ্ঠান ড্যাটকোর লিগ্যাল অ্যাডভাইজার হিসেবে পরিচয় দিতেন। তিনি প্রিন্স মুসা বিন শমসেরের নগদ অর্থ ও বিভিন্ন স্থাপনার কাস্টোডিয়ান হিসেবে টাকা-পয়সা কোনো ব্যাপার না বলে জাহির করতেন। এভাবে চাকরিপ্রার্থী, ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারদের প্রতারিত করতেন।

তাদের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় অস্ত্র মামলা ও তেজগাঁও থানায় প্রতারণার মামলা করা হয়েছে। এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে পাসপোর্ট জালিয়াতি, বিভিন্ন প্রতারণা, ব্যাংকে নিয়োগের প্রতারণার ঘটনায় কমপক্ষে অর্ধ ডজন মামলা করা হয়েছে মর্মে এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close