গাজী শাহনেওয়াজ

  ১০ অক্টোবর, ২০২১

প্র্রতারণা রুখবে সফটওয়্যার

ভোটার হওয়ার যোগ্য নাগরিকের তথ্য যাচাইয়ের জন্য অটোমেটেড ফিঙ্গার আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম (এএফআইএস) মাঠপর্যায়ে ছড়িয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে প্রতারণা করে ভোটার হওয়ার পথ বন্ধে একধাপ এগিয়ে গেল সাংবিধানিক এই সংস্থাটি। আগে এই পদ্ধতি শুধু ইসির প্রধান কার্যালয়ে সীমাবদ্ধ ছিল। ফলে কে ভোটার হয়েছেন, কে হননি তা যাচাইয়ের সুযোগ ছিল না। এখন মাঠপর্যায়ে এই পদ্ধতির ব্যবহার শুরু হয়েছে। ফলে অবৈধভাবে দ্বিতীয়বার ভোটার হওয়া, নাম-ঠিকানা বদলে পুনরায় ভোটার হওয়া, অন্যের সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়া, মিথ্যা তথ্য দিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া, দ্বৈত ভোটার হয়ে বিদেশেও পাড়ি জমানো সহজ হবে না। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

সম্প্রতি রাজধানীর আগারগাঁওয়ে কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে এএফআইএস প্রযুক্তি মাঠ কর্মকর্তাদের মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে। দেশের ৬৪ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং ঢাকার ১৫ থানা নির্বাচন কর্মকর্তা প্রাথমিকভাবে এ ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়েছেন। এতে তাদের মধ্যে ফিরেছে স্বস্তি। পর্যায়ক্রমে সারা দেশে এর ক্ষেত্র ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রযুক্তি ব্যবহার করে এসব কর্মকর্তা নাগরিকের দুই ধরনের প্রতারণা সহজেই ঠৈকিয়ে দিতে পারবেন। একটি হচ্ছে একাধিকবার (দ্বৈত) ভোটার হওয়ার সুযোগ বন্ধ হবে এবং তথ্য গোপন করে নাম-ঠিকানা বদলে পুনরায় ভোটার হওয়ার চেষ্টাও ব্যর্থ হবে। তবে এই পদ্ধতি তথ্যপ্রাপ্তিতেও বাড়তি সুবিধা পেতে সহায়তা করবে নাগরিকদের। সুবিধার মধ্যে ভোটার হওয়ার আগে-পরে কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার আগে কোনো নাগরিক তার সংরক্ষিত তথ্য হারিয়ে ফেললে এএফআইএস সেই তথ্য দ্রুত খুঁজে দিতে সহায়তা করবে। এজন্য প্রয়োজন হবে ইসির সংশ্লিষ্ট অফিসে ভুক্তভোগীর উপস্থিত হওয়া এবং বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে তথ্য দেওয়া। বর্তমানে ইসির সার্ভারে ১১ কোটি ১৭ লাখ ২০ হাজার ৬৬৯ ভোটার হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, অ্যাফিস সিস্টেম মাঠপর্যায়ে থাকলে অন্যের প্রতারণা রুখে দিতে ইসির কর্মকর্তাদের জন্য এটা সুরক্ষা হিসেবে কাজ করত। বিলম্বে এই প্রযুক্তি মাঠপর্যায়ে দেওয়ায় স্বস্তিতে থাকবেন কর্মকর্তারা। পাশাপাশি আগামীতে অন্যায় করলে দায় এড়িয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থাকবে না কর্মকর্তাদের। ভোটার কার্যক্রমের সবক্ষেত্রে ফিরে আসবে স্বচ্ছতা বলে জানান কর্মকর্তারা। কারণ, কুষ্টিয়ায় একটি দালাল চক্র অন্যের জমি হাতিয়ে নিতে তথ্য গোপন করে ভোটার হওয়ার কারণে সেখানে কর্তব্যরত ইসির কর্মকর্তারা শাস্তির মুখে রয়েছেন। শুধু কুষ্টিয়া নয়; প্রধান কার্যালয়সহ ইসির মাঠ অফিসের অনেক কর্মকর্তা চাকরি হারিয়েছেন। অনেকের বিরুদ্ধে চলছে তদন্ত।

জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি উইং) মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ুন কবীর প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য ইসির মাঠ-অফিস শক্তিশালী করা। এরই ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। এখন থেকে কোনো ব্যক্তি ভোটার হতে এলে তাকে যাচাই করে নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। কারণ, এএফআইএস পদ্ধতি ওই কাজে সহায়ক প্রযুক্তি। তাই কোনো নাগরিক তথ্য গোপন করে ভোটার হওয়ার চেষ্টা করলে ইসির ফাঁদে আটকে যাবেন। তবে এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই প্রযুক্তি মাঠপর্যায়ে দেওয়া হয়েছে, সৎভাবে তার দায়িত্বটি কতটুকু পালন করবেন, সেটা ওই কর্মকর্তার বিষয়। এজন্য তাদের তাড়নার মধ্যে রাখা। এ ছাড়া সেবাটা মানুষের দৌরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়াও ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের উদ্দেশ্য।’ প্রশাসন সার্ভিসের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘আগে নাগরিকের ভোটার হতে ভোগান্তি পোহাতে হতো। আমরা এজন্য ব্যক্তি শনাক্তকরণের ব্যবস্থা জেলাতেই করেছি। তাই কারো আঙুলের ছাপ মিলে গেলেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বুঝে নেবেন তিনি আগেই ভোটার হয়েছিলেন। এখন থেকে এসব ছোটখাটো যাচাই কাজের জন্য ঢাকায় আসতে হবে না। মাঠপর্যায়েই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’

জানতে চাইলে এনআইডির পরিচালক (অপারেশন) মো. নুরুজ্জামান তালুকদার প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, এএফআইএস (অ্যাফিস) এমন একটি পদ্ধতি দ্বিতীয়বার ভোটার হওয়ার পথ সহজেই আটকে দেয়। কারণ ভোটারের তথ্য ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট সার্ভারে আপলোড করা মাত্রই ওই ভোটারকে দ্রুত শনাক্ত করা যাবে।

এনআইডির সিস্টেম ম্যানেজার মোহাম্মদ আশরাফ হাসেন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, প্রযুক্তির ব্যবহার যত বেশি সম্প্রসারণ করা যাবে ততই অনিয়ম-দুর্নীতির পথ সংকুচিত হবে। এএফআইএস পদ্ধতি ঠিক ওই ধরনের একটি সুরক্ষিত প্রযুক্তি। সন্দেহভাজন ব্যক্তির ফিঙ্গার এএফআইএস পদ্ধতিতে ছোঁয়ালে তাৎক্ষণিক প্রতারণার ছলচাতুরী সামনে এনে দেবে। এর মাধ্যমে প্রকৃত জাতীয় পরিচয়পত্র বদলে নতুন আরেকটি জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিতে চাইলে তা সম্ভব হবে না। তা ছাড়া কোনো ব্যক্তির এনআইডি যদি হারিয়ে যায়, সংশোধনের প্রয়োজন পড়ে কিংবা জীবিত থাকা সত্ত্বেও ভুলে মৃত হিসেবে ইসির সার্ভারে অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকেন, এসব ক্ষেত্রে সব সেবা তিনি ওই ব্যবস্থার কারণে জেলাতেই পেয়ে যাবেন।

সাতক্ষীরার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নাজমুল কবীর প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘সম্প্রতি একজন বৃদ্ধ তথ্য গোপন করে ভোটার হতে আসেন। বয়স বিবেচনায় আমাদের সন্দেহ হয়। তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাচাই করে ধরা পড়ে তার প্রতারণা অর্থাৎ উনি আগেই ভোটার ছিলেন। নতুন কেউ যদি ভোটার হতে আসেন, তার ঠিক একইভাবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাচাই করলে পুরো তথ্য চলে আসবে। এর মাধ্যমে ভোটার জালিয়াতি করে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার যে খবর এত দিন চাউর ছিল, সেটা বন্ধ হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close