জিয়াউদ্দিন রাজু

  ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১

ঐক্য অটুট রাখার চ্যালেঞ্জ

জোটের পরিধি বাড়াতে পারে আওয়ামী লীগ

আগামী নির্বাচনের আগে দলীয় কোন্দল মিটিয়ে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করাই এখন মূল চ্যালেঞ্জ আওয়ামী লীগের। তৃণমূলে কাউকেই নিজস্ব বলয় তৈরি করতে দেওয়া হবে না। সেই লক্ষ্যে সাংগঠনিক সফর শুরু করছেন ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা।

আওয়ামী লীগ চাইছে নির্বাচনের আগে সাংগঠনিক জেলাসহ উপজেলা, থানা, পৌরসভা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের সম্মেলন আয়োজন করতে। সেই সঙ্গে ভোটের হিসাব-নিকাশ মেলানোর জন্য কয়েকটি ইসলামী দল এবং বামপন্থি রাজনৈতিক দল নিয়ে মহাজোটে নির্বাচনী জোটের পরিধি বাড়ানো নিয়ে ভাবছে দলটি। পাশাপশি রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির দিকে কড়া নজর রাখছে। নির্বাচনী মাঠে বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার প্রস্ততিও রয়েছে ক্ষমতাসী দলের।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ সেপ্টেম্বর গণভবনে আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় তৃণমূলের সাংগঠনিক দুরবস্থার নানা চিত্র তুলে ধরেন বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা। এতে উঠে আসে জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, সংসদ সদস্যদের দলীয় সাংগঠনিক বিষয়ে প্রভাব বিস্তার, দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়াসহ নানা বিষয়। যার প্রভাব আগামী নির্বাচনে পড়তে পারে। তবে দলটির নেতারা মনে করেন, এসব কোন্দল অবশ্যই সমাধানযোগ্য। তাই দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের মুরব্বির দায়িত্বে রেখে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা কাজ শুরু করেছেন।

একই সঙ্গে আগামী সংসদ নির্বাচন মাথায় রেখে প্রার্থী যাচাইও শুরু করছে আওয়ামী লীগ। চলতি মাসের শুরু থেকে সারা দেশে সংসদীয় এলাকা ধরে বর্তমানের সব নিবন্ধিত দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করছে দলটি। একাধিক সংস্থার পাশাপাশি সাংগঠনিকভাবে এ কাজ করা হচ্ছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক দল। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের এ দলের নির্বাচনী প্রস্তুতি সব সময়ই থাকে। জনগণের মতামতের প্রতিফলন হয় নির্বাচনের মাধ্যমে। আওয়ামী লীগ তা বিশ্বাস করে বলেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। দলকে আরো শক্তিশালী করতে নির্বাচনের আগে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোতে সম্মেলনের মধ্যমে আমরা যোগ্য নেতৃত্ব বাছাই করা হবে।’

জোটে শরিক বাড়ানোর বিষয়ে নানক বলেন, ‘নির্বাচনের সময় এলে শরিক দল নিয়ে বলা যাবে। তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে এবং বঙ্গবন্ধুর চেতনা ধারণ করে এমন দলের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হতেই পারে।’

এদিকে, বিএনপির বৈঠক ও তাদের আন্দোলনকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। তবে একটি সতর্ক অবস্থান বজায় রাখতে চায় তারা। আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, নিজ দল শক্তিশালী হলে বিএনপি আন্দোলন করে বেশি কিছু করতে পারবে না। রাজনীতির মাঠ দখলে থাকলে বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলা করা কঠিন কোনো বিষয় হবে না। তবে জনগণের সম্পদের ওপর কোনো হামলা এলে দল হিসেবে আওয়ামী লীগও পাল্টা জবাব দেবে। আর বিএনপি গুজব ছড়ালে তা প্রতিরোধ করা হবে বলে বলছেন দলটির নেতারা। অনলাইনে গুজব ও অপপ্রচার মোকাবিলায় ১ লাখ অনলাইন অ্যাবটিভিস্টকে প্রশিক্ষণের আওতায় এনেছে দলটি। ইস্যু তৈরি করে জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনো অপশক্তি আন্দোলনের চেষ্টা করলে রাজপথেই তার জবাব দিতে প্রস্তুত দলটি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘বিএনপিকে তো মোকাবিলা করার দরকার নেই। তারা তো সব সময় হাঁক-ডাকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে, যাদের ওপর জনগণের আস্থা নেই। তারা কীভাবে আন্দোলন করবে? আমরা ভাবছি, কীভাবে আওয়ামী লীগকে আরো শক্তিশালী করা যায়, কীভাবে তৃণমূলে দলকে আরো জনপ্রিয় করা যায়। এজন্যই আমরা কাজ করছি।’

শরিক দলের বিষয়ে জানতে চাইলে বাহাউদ্দিন নাছিম আরো বলেন, ‘আমাদের চেতনার সঙ্গে মিল রয়েছে এমন বড় বা শক্তিশালী শরিক আসতে চাইলে বিবেচনায় রাখা হবে।’

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর বলেন, ‘নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী তত বেশি গুজব ও অপপ্রচার ছড়ানোর চেষ্টা করবে। এটা সঠিক। কিন্তু সেটা আমাদের বিবেচ্য বিষয় নয়। সেই সঙ্গে দলের নেতাকর্মীরা যাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারে, সে প্রস্তুতিও রয়েছে।’

গত শনিবার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এ মুহূর্তে দেশে বিএনপির কথিত আন্দোলনের কোনো অবস্থা নেই। করোনাভাইরাসের অভিঘাত মোকাবিলায় সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি দেশের মানুষ এখন নিজের অবস্থান উন্নয়নে প্রাণান্ত প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। এ সময় গণ-অভ্যুত্থানের দিবাস্বপ্নে বিভোর বিএনপি। দলটি ভাবছে, আন্দোলনের ডাক দিলেই মানুষ হুড়মুড় করে বেরিয়ে আসবে। প্রকৃতপক্ষে এসব তাদের আকাশ-কুসুম ভাবনা। বিএনপি নেতারা যা বলছেন, নিজেরাও সেটি বিশ্বাস করেন না।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close