reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১

টিকা-বৈষম্যে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে করোনা : প্রধানমন্ত্রী

প্রবাসীদের দেশে বিনিয়োগের আহ্বান

শাহজাহান সাজু, নিউইয়র্ক থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনের ভাষণে কোভিডমুক্ত বিশ্ব গড়তে সর্বজনীন ও সাশ্রয়ী মূল্যে টিকা প্রাপ্যতায় বৈশ্বিক পদক্ষেপ দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, বর্তমান ‘টিকা-বৈষম্য’ প্রবণতা করোনা মহামারিকে দীর্ঘস্থায়ী করবে। তাই কোভিডমুক্ত বিশ্বের জন্য, আমাদের অবশ্যই সর্বজনীন ও সাশ্রয়ী মূল্যে টিকার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। গত শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাতে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ১৭তম ভাষণ দেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী বাংলায় ভাষণ দেন।

শেখ হাসিনা ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে টিকা-বৈষম্য বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এ যাবৎ উৎপাদিত টিকার ৮৪ শতাংশ উচ্চ ও উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মানুষের কাছে পৌঁছেছে। অন্যদিকে, নিম্ন আয়ের দেশগুলো ১ শতাংশেরও কম টিকা পেয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে এ টিকা-বৈষম্য দূর করতে হবে। লাখ লাখ মানুষকে টিকা থেকে দূরে রেখে কখনোই টেকসই পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। আমরা পুরোপুরি নিরাপদও থাকতে পারব না।

শেখ হাসিনা বলেন, অবিলম্বে টিকাপ্রযুক্তি হস্তান্তর টিকার সমতা নিশ্চিত করার একটি উপায় হতে পারে। প্রযুক্তি সহায়তা ও মেধাসত্বে ছাড় পেলে বাংলাদেশও বিপুল পরিমাণে টিকা তৈরি করতে সক্ষম।

প্রধানমন্ত্রী বর্তমান সময়কে ‘ক্রান্তিলগ্ন’ উল্লেখ করে জাতিসংঘকে ‘ভরসার সর্বোত্তম কেন্দ্রস্থল’ হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আসুন সেই ভরসাকে বাঁচিয়ে রাখার প্রত্যয়ে আমরা সবাই হাতে হাত মিলিয়ে একযোগে কাজ করি। বহুপাক্ষিকতাবাদ ও জাতিসংঘ ব্যবস্থার দৃঢ় সমর্থক হিসেবে বাংলাদেশ এই সংকটকালে জাতিসংঘকে আশা ও আকাক্সক্ষার প্রতীক হিসেবে দেখে। সব ধরনের মতভেদ ভুলে গিয়ে আমাদের অবশ্যই ‘অভিন্ন মানবজাতি’ হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াতে হবে, সম্মিলিত শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সবার জন্য আবারও এক সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়ে তুলতে হবে।

মহামারি করোনা মোকাবিলার পাশাপাশি, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলা, রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সুনির্দিষ্ট ৬ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেন তিনি। ফিলিস্তিন এবং আফগান সমস্যাও তার আলোচনায় উঠে আসে। এ সময় তিনি রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন ইস্যুতে পুনরায় বিশ্বনেতাদের জোরালো ভূমিকা ও অব্যাহত সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।

এদিকে, একই দিন নিউইয়র্কের ম্যারিয়ট হোটেলে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের দেওয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, বিদেশে অবস্থানরত কিছু লোক দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে ব্যস্ত। এমন সময়ে তারা এসব করছে, যখন আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে গেছে। কেউ কেউ আওয়ামী লীগ সরকারকে অবৈধ হিসেবে আখ্যায়িত করছে- উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার প্রশ্ন- তারা কীভাবে এই কথাগুলো বলার সুযোগ পায়? তারা বর্তমান সরকারের তৈরি ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগেরই সমালোচনা করছে। যদি তাদের আদর্শ থাকে, তারা কখনোই তা করতে পারে না। যারা সরকারের সমালোচনা করছে, তারা মূলত বিএনপি-জামায়াত চক্রের কেনা গোলাম।

শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান এবং এরশাদ দেশের সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় এসেছিলেন এবং হাইকোর্ট তাদের সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া এতিমদের অর্থ আত্মসাতের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং তার ছেলে (তারেক রহমান) ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। এমনকি আমেরিকার এফবিআইয়ের হাতেই দুর্নীতিতে ধরা খেয়েছে। আর সেই মামলা করতে গিয়ে ধরা পড়ে যে বিএনপি অর্থ দিয়েছে জয়কে (সজীব ওয়াজেদ জয়) আমেরিকায় বসে কিডন্যাপ করার, হত্যা করার জন্য। এটা আমরা জানতাম না। এই মামলা চলার পরেই বেরিয়েছে তাদের নাম। যারা জনগণের অর্থ-সম্পদ লুট করে, খুন করে অথবা অস্ত্র পাচার করার অথবা গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি, সেই আসামিদের হাতের টাকা খেয়েই তো তারা বড় বড় কথা বলে।

শেখ হাসিনা বলেন, সমালোচনাকারীরা ভুলে যায় যে, আমি জাতির পিতার মেয়ে। আমরা দেশের জন্য কাজ করি, আর ক্ষমতাটা আমাদের কাছে দেশসেবা করা, মানুষের সেবা করা। আমরা অর্থ-সম্পদের জন্য লালায়িত না। আমার কাছে ক্ষমতা হচ্ছে মানুষের ভাগ্য গড়া, বাঙালির ভাগ্য গড়া, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য গড়া। তাই দেশের মানুষের উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

পরে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা বাংলাদেশি প্রবাসীরা মার্কিন নাগরিকদের পাশাপাশি দেশেও বিনিয়োগ করতে পারেন। বর্তমান সরকার দেশের এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন উদ্দীপনা প্যাকেজ ও অন্যান্য সুবিধা দিচ্ছে। সারা দেশে প্রায় ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সবাইকে ভালো সুযোগ দিচ্ছি। প্রবাসীদের আরো সুবিধা (অন্যদের তুলনায়) দেওয়া হচ্ছে। সুতরাং তারা এ সুযোগটি গ্রহণ করতে পারেন এবং বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারেন।’

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ৭৬তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর সাহসী ভূমিকার ফল সম্পর্কে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সঙ্গে সব কথা না বললে সমস্যার সমাধান হবে না। ভারসাম্যহীন উন্নয়ন টিকবে না। সমগ্র মানবজাতির কল্যাণের জন্য ব্যবস্থা না নিলে সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত হবে না।

সাংবাদিকদের কাছ থেকে তিনি কী চান, সে প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, সংবাদপত্র সমাজের আয়না। সমাজের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। সুতরাং নির্বিচারে সমালোচনা না করে একটি গঠনমূলক ভূমিকা পালন করা উচিত।

জাতিসংঘের ৭৬তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে গত শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে রওনা হয়ে ফিনল্যান্ডে দুদিন যাত্রাবিরতি শেষে রবিবার নিউইয়র্কে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। ফিরতি যাত্রায় আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র থেকে রওনা হয়ে ফিনল্যান্ডে যাত্রাবিরতির পর ১ অক্টোবর তিনি দেশে ফিরবেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close