নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১

কর্মশালায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী

সমন্বিত উদ্যোগে শিগগিরই নিয়ন্ত্রণে আসবে ডেঙ্গু

নগরবাসীর সচেতনতা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, সিটি করপোরেশন ও মন্ত্রণালয়ের সর্বাত্মক কার্যক্রমের ফলে আগামীতে শিগগিরই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘ইইউ সাপোর্ট টু হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন টু দি পুওর ইন আরবান বাংলাদেশ’ প্রকল্পের সমাপনী কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করছে। সকাল-বিকাল নিয়মিত মশা মারার ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে। কীভাবে এডিস মশার প্রজনন ধ্বংস করা যাবে সেসব বিষয়ে মানুষকে বিভিন্নভাবে সচেতন করা হয়েছে। আমি আশা করি, মাসখানের মধ্যেই এডিস মশা একটি সহনশীল জায়গায় চলে আসবে।

তিনি জানান, ডেঙ্গু একটি গ্লোবাল চ্যালেঞ্জ। শুধু বাংলাদেশই এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে না, এশিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশেই এই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা করছে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় যেসব দেশ সফলতা পেয়েছে তাদের অভিজ্ঞতা এবং আমাদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

মো. তাজুল ইসলাম বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বে প্রতি বছর ১০ কোটি থেকে ৪০ কোটি মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয় এবং ৭ লাখের বেশি মানুষ মারা যায়। ২০১৯ সালে আমাদের দেশে মারাত্মক আকার ধারণ করলেও ২০২০ সালে এটিকে আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছিলাম।

গত বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থাকলেও সবচেয়ে বড় বিষয়টি হচ্ছে লকডাউন এবং ঈদের ছুটি। এ সময় অনেকেই বাসাবাড়ি ছেড়ে নিজ এলাকায় যাওয়ায় এবং নির্মাণ শ্রমিকরা ছুটিতে থাকায় এডিস মশার প্রভাব কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। মে-জুন থেকে আরম্ভ করে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত এডিস মশার প্রকোপ বেশি থাকে। কারণ এ সময় থেমে থেমে বৃষ্টি হয়।

এর আগে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, পৌরসভাগুলো শক্তিশালী করতে কাজ করছে সরকার। এরই মধ্যে কিছু পৌরসভায় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর কিছু জনবল সংকট রয়েছে। আগামী ২ বছরের মধ্যে পৌরসভাগুলো তাদের সংকট কাটিয়ে সক্ষমতা অর্জন করবে। তিনি আরো বলেন, গ্রামীণ এলাকার তুলনায় নগর এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা কিছুটা ভালো তবে এটি সন্তোষজনক অবস্থায় নেই। পৌরসভাগুলো স্বাস্থ্যসেবায় পর্যাপ্ত জনবল নেই উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এই প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে যাতে করে তারা নিজেরা নাগরিকসেবা দিতে পারে। মন্ত্রী জানান, সমাপ্ত এই প্রকল্পের মাধ্যমে এমন কিছু কাজ শুরু হয়েছে যার সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। এরই মধ্যে নগর এলাকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। এ সময় তিনি প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান পরবর্তীতে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন।

স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মরণকুমার চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূর, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মেজবাহ উদ্দিন, প্রকল্প পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব মুস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকী এবং বাংলাদেশে ইইউ প্রতিনিধি মারিজিও চিয়ান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, প্রকল্পের আওতায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কর্তৃক সরাসরি নির্বাচিত এনজিওর মাধ্যমে চারটি সিটি করপোরেশন, দশটি হয়। এ ছাড়া, দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ্যে পৌরসভার ৩ হাজার ৬১৮ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং পৌরসভা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১ হাজার ৮০১ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

জার্মান রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ : গতকাল বিকালে মন্ত্রণালয়ে জার্মানির রাষ্ট্রদূত আচিম ট্রোস্টার স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর সঙ্গে মন্ত্রণালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী জানান, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে জার্মানি বাংলাদেশ সরকারের পাশে থাকবে।

জার্মান দূত বলেন, মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে হত্যা, নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হওয়া রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে মানবিকতার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে দেশটি। এই সমস্যা সমাধানে জার্মানি সব সময় বাংলাদেশ সরকারের পাশে থেকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের জনমত আদায়ে ভূমিকা রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করছে বলেও জানান।

সায়েদাবাদ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ফেজ-৩ এ জার্মান সরকারের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে ভবিষ্যতেও যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প যা মানুষের জন্য কল্যাণকর এসব সরকারি প্রকল্পে জার্মানির সহযোগিতা কামনা করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে দেশের অবকাঠামোগত, খাদ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক ও অর্থনৈতিকসহ সব ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্যের প্রশংসা করে রাষ্ট্রদূত বলেন, জার্মান সরকার বাংলাদেশের পাশে সবসময় আছে এবং থাকবে। বাংলাদেশের উন্নয়ন খাতে জার্মানির সর্বোচ্চ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান আচিম ট্রোস্টার।

এ সাক্ষাৎকালে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান, স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মরণকুমার চক্রবর্তী এবং মুহাম্মাদ ইব্রাহিম এবং যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ নুরে আলম সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close