reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১

রোহিঙ্গাদের ফেরানো দেরি হলে নিরাপত্তা বিপন্ন হবে : প্রধানমন্ত্রী

করোনা টিকাকে ‘বৈশ্বিক জনস্বার্থসামগ্রী’ ঘোষণার দাবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমারে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই মানবিক সংকট সমাধানে সম্মিলিত দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ এর প্রভাব বিশ্বে পড়ছে। এ সংকট সমাধানে দেরি করা মানে সম্মিলিত নিরাপত্তাকে বিপন্ন করা।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ অধিবেশনের সাইডলাইনে গত মঙ্গলবার ‘ফোর্সিবলি ডিসপ্লেসড মিয়ানমার ন্যাশনালস (রোহিঙ্গা) ক্রাইসিস : ইমপেরেটিভস ফর এ সাসটেইনেবল সল্যুশন’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে অগ্রগতি না থাকার হতাশা অনেককে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে প্ররোচিত করে। এমনকি তারা চরমপন্থি মতাদর্শেরও সহজ শিকার হতে পারে যা পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। তাই আমাদের এখনই বিষয়টি নিয়ে প্রকৃত তৎপরতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। এ সময় রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে ৫টি প্রস্তাব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে হবে। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমাদের সব প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। মিয়ানমারের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনিশ্চয়তা তৈরি করলেও সংকট সমাধানের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা উচিত। এক্ষেত্রে আমরা বিশ্বাস করি, আসিয়ানের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। আসিয়ানের বিশেষ দূত নিয়োগকে স্বাগত জানাই। আমরা আশা করি, বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের দ্রুততার সঙ্গে টেকসই প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে এই সংকটের সমাধানকে আসিয়ান তার উচ্চ পর্যায়ের এজেন্ডা হিসেবে গ্রহণ করবে। আমাদের মনে রাখতে হবে মানবিক সহায়তা অপরিহার্য কিন্তু কোনোভাবেই স্থায়ী সমাধান নয়। জাতিসংঘ এবং অংশীদারদের রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসনে অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে মিয়ানমারে বাস্তব পদক্ষেপ এবং প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু এখনো আমরা এ রকম কোনো অগ্রগতি দেখিনি। রোহিঙ্গাদের আস্থা তৈরিতে তাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নির্যাতনের জবাবদিহি গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের জঘন্য অপরাধের দায়মুক্তি দেওয়া উচিত নয়।

শেখ হাসিনা বক্তব্যের শুরুতেই তিনি বলেন, জাতিসংঘের ৭৬তম অধিবেশনে অংশ নিচ্ছেন বিশ্বনেতারা। যেখানে মূল প্রতিপাদ্য ‘আশা’ পুনরুদ্ধারের আশা; টেকসই পুনর্গঠনের আশা। আমার প্রতিনিধি দলও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ‘আশা’ নিয়ে অধিবেশনে অংশ নিচ্ছেন। যার একটি হলো মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, চার বছর ধরে আমরা আশায় ছিলাম যে বাস্তুচ্যুত এই মানুষরা নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারবে। আমরা তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য বিশ্ব সভা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আস্থা রেখেছি। আমাদের আহ্বান-আশা অপূর্ণ রয়ে গেছে। এখন আমরা সংকটের পঞ্চম বছরে আছি। তারপরও এখনো এই সংকটের টেকসই সমাধান আশা রাখি।

প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ঝুলে থাকায় বাংলাদেশের সংকটের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সম্পদ এবং ভূমির সীমাবদ্ধতা থাকার পরও বাংলাদেশে তাদের অস্থায়ীভাবে বসবাসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছি। ছোট্ট জায়গায় একটা বিশাল জনগোষ্ঠীর অবস্থান আশপাশের পরিবেশ-প্রতিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। আশ্রয় নিশ্চিত করতে কাটতে হয়েছে পাহাড় ও বনভূমি। এ ছাড়া ক্যাম্পগুলো প্রতি বছর ৩০ হাজারেরও বেশি শিশু জন্ম নিচ্ছে। কক্সবাজারের জনাকীর্ণ ক্যাম্পগুলো উপচে পড়া ভিড় সামাল দিতে দেশের দক্ষিণে ১৩ হাজার একর এলাকা নিয়ে ভাসানচর নামে একটি দ্বীপ তৈরি করেছি। আর সেখানে বসতি গড়ে তুলতে আমাদের নিজস্ব বাজেট থেকে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার অর্থ খরচ করেছি।

এক লাখ মানুষকে সেখানে সাময়িকভাবে স্থানান্তরে পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমমন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা ১৮ হাজার ৫০০ রোহিঙ্গাকে কক্সবাজারের ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে স্থানান্তর করেছি। স্বেচ্ছাসেবী নীতির ভিত্তিতে তাদের স্থানান্তর করা হয়েছে। আমাদের আশা, খুব তাড়াতাড়ি ভাসানচরে জাতিসংঘ তার কার্যক্রম শুরু করবে।

এ দিকে, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত ‘হোয়াইট হাউস কোভিড-১৯ সামিট : অ্যান্ডিং দ্য প্যানডেমিক অ্যান্ড বিল্ডিং ব্যাক বেটার হেলথ সিকিউরিটি টু প্রিপেয়ার ফর দ্য নেক্সট’ শীর্ষক শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বজুড়ে করোনা প্রতিরোধী টিকা কর্মসূচি পরিচালনার অংশ হিসেবে কোভিড-১৯ টিকাকে বৈশ্বিক জনস্বার্থসামগ্রী হিসেবে ঘোষণা করা দরকার। সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করতে সক্ষমতা রয়েছে এমন উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলো স্থানীয় পর্যায়ে টিকা উৎপাদনের সুযোগ দেওয়া উচিত। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত বুধবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় সম্মেলনের আয়োজন করেন।

কোভিড-১৯ মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সরকারি উদ্যোগ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা ১৫ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ বরাদ্দ করেছি, দরিদ্র, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং অনানুষ্ঠানিক খাতের কর্মীসহ ৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন সুবিধাভোগীদের ১৬৬ মিলিয়ন ডলার বিতরণ করেছি। ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৫ মিলিয়নের বেশি টিকা দেওয়া হয়েছে। ২০২২ সালের আগস্ট মাসের মধ্যে আমাদের জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ লোককে টিকা না দেওয়া পর্যন্ত আমরা প্রতি মাসে ২০ মিলিয়ন মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close