জিয়াউদ্দিন রাজু

  ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১

নির্বাচন প্রশ্নে বড় দুই দল

কৌশলে সংবিধানকে কাজে লাগাবে আওয়ামী লীগ

আগামী জাতীয় নির্বাচন আসতে এখনো দুই বছরের বেশি সময় বাকি থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচিতে ভোটের প্রস্তুতির বিষয়টি স্পষ্ট। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এক্ষেত্রে এগিয়ে। এরই মধ্যে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছে দলটি। ভোটের সময় অনলাইনে কাজ করতে এক লাখ কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজও শুরু হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ বলেছে, নির্বাচন হবে সংবিধানের আলোকে। অন্যদিকে নিজেদের দাবি আদায় নিয়ে বিরোধী শিবিরে সংশয় যেমন বাড়ছে, তেমনি বাধাহীন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে এক ধরনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগোচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। এ দিকে বিরোধীদল বিএনপির নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করেছে। বৈঠকে দলটির ৫ শতাধিক নেতা অংশ নিয়েছেন। বৈঠকে দলের সব নেতা বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার দাবি নিয়ে মাঠে নামার মত দিয়েছেন। বিএনপির নেতারা বলেছেন, এই সরকারকে ক্ষমতায় রেখে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। তারা এগোচ্ছে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনের দিকে।

ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এ বিষয়ে বলছেন, সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সংবিধানের আলোকে সময় হলে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন সব আয়োজন করবে। তবে কোন দল নির্বাচনে শর্ত দিয়ে আসতে চাইলেও সরকার সংবিধানের বাহিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে সরকারবিরোধী দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনী বিষয়ে গঠনমূলক আলাপ-আলোচনা হতে পারে।

গতকাল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘করোনার স্থবিরতা কাটিয়ে জনজীবনে গতি ফিরতে শুরু করেছে। এ সময়ে আমাদের সবার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি।’

আর বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে তাদের রাজনৈতিক কবর রচিত হবে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, ‘বিএনপি নামক দলটি এখন তাদের নিজস্ব সত্তা হারিয়ে ফেলেছে, আর নিজেদের সত্তা হারিয়ে এখন লন্ডনের একটি বিশেষ প্রাসাদসম বাড়ির কাছে জিম্মি হয়ে গেছে। বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি আসবে না সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। আমি বিশ্বাস করি বিএনপি নামক দলটির ভেতরে একটি মহল আছে যারা নির্বাচনে আসতে চায়। আমি মনে করি বিভ্রান্তমূলক রাজনীতির দিকে বিএনপিকে ধাবিত করলে দলটির অবশিষ্টও থাকবে না, বিএনপি হারিয়ে যাবে।’ বিএনপির আন্দোলের বিষয়ে আওয়ামী লীগের পোড়খাওয়া এই নেতা নানক বলেন, ‘বিএনপি নামক দলটি দেশে যে আন্দোলন করবে সে আন্দোলন করার মতো অবস্থা তাদের নেই। বিএনপি কখনো জনগণকে আন্দোলনে আনতে পারেনি তার কারণ হলো জনগণের কোনো ইস্যু বিএনপির কাছে ছিল না। জনগণ অত্যন্ত সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে আছে, দেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে।’

এরই মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের সম্ভাব্য আন্দোলন মোকাবিলায় দলকে প্রস্তুত করতে তৃণমূল গোছাতে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্তরা কাজে নেমে পড়েছেন। আট বিভাগের জন্য ৮টি সাংগঠনিক দলও সক্রিয় হচ্ছে। ইস্যু তৈরি করে জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনো অপশক্তি আন্দোলনের চেষ্টা করলে রাজপথেই তার জাবাব দিতেও প্রস্তুত আওয়ামী লীগ।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বৈঠক থেকে নির্বাচনকালীন সরকারের দাবির কথা জানিয়েছে বিএনপি। তবে তাদের এ ইস্যুতে কোনো সুযোগ দেবে না আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে ক্ষমতাসীনরা বিএনপির এই দাবিকে সংবিধানবিরোধী বলে নাকচ করে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সূত্রে বলছে, নির্বাচন নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্য থেকে এখনো স্পষ্ট কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি। তবে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবিতে শেষ পর্যন্ত বিএনপি কতটুকু অনড় থাকে তার ওপর নির্ভর করছে সরকারি দল আওয়ামী লীগের পরবর্তী পদক্ষেপ।

দলটির নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার না হলে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না- এমন ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছে সরকারি দল। সহায়ক সরকার নিয়ে বিএনপি অনড় থাকলে আওয়ামী লীগের প্রথম কৌশল হবে সংবিধানে সহায়ক সরকার নেই উল্লেখ করে চূড়ান্তভাবে তা প্রত্যাখ্যান করা। আর এর মধ্য দিয়ে বিএনপি নীতিগতভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে বলে মনে করে আওয়ামী লীগ।

জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘যে নির্বাচন ব্যবস্থার কথা বলছেন সেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার করার ক্ষমতা কারো নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে পরিষ্কারভাবে নির্দেশনা দেওয়া আছে। আমাদের দেশের নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত নিরপেক্ষ ও সুস্থ নির্বাচন করে, সে নির্বাচনে আশা করি বিএনপি নির্বাচনে আসবে।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘আমরাও চাই সব দলের অংশগ্রহণের একটি নির্বাচন। সেজন্য আলোচনা হতেই পারে। তবে কেউ অসাংবিধানিক কোনো দাবি আনলে তা তো হতে পারে না। বিএনপি যখন আন্দোলন করার চেষ্টা করবে তখন রাজপথে মোকাবিলা করা হবে। তারা (বিএনপি) আবার নির্বাচনের আগে আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা করবে, মানুষ পোড়ানোর চেষ্টা করতে চাইলে আওয়ামী লীগ বসে থাকবে না। দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close