নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১

২০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী অনুপস্থিত

করোনা সংক্রমণ কমে আসার কারণে স্কুল-কলেজ খুলেছে। এরই মধ্যে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অনুপস্থিতির হার কাম্যমাত্রার চেয়েও বেশি। এই হার শতকরা ২০।

গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া হলেও প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের ক্লাসে অনুপস্থিতির হার অনেক বেশি। ধারণা করা হচ্ছে, এসব শিক্ষার্থী হয়তো তাদের নিয়মিত ক্লাসে আর ফিরবে না। অন্যদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার সময় এখনো শেষ হয়ে যায়নি। অনেক অভিভাবক এখনো করোনার ভয়ে তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। পরিস্থিতি আরো একটু স্বাভাবিক হলেই সব শিক্ষার্থীই ক্লাসে ফিরবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে ২০ থেকে ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী সপ্তাহে এক দিন করে আসছে শিক্ষার্থীরা। তাই আরো দু-এক সপ্তাহ যাওয়ার পরই জানা যাবে কত শতাংশ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে।

শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যেই বড় একটি সংখ্যা স্কুলে ফেরেনি তা নয়, বেসরকারি অনেক কিন্ডারগার্টেন স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কত শতাংশ অন্য স্কুলে আবার ভর্তি হয়েছে বা হয়নি তারও কোনো পরিসংখ্যান জানা যায়নি। বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, করোনার প্রভাবে গত দেড় বছরে ১০ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। কাজেই এসব প্রতিষ্ঠানে পাঠরত শিক্ষার্থীরা এখনো হিসাবের বাইরে রয়েছে।

এ বিষয়ে প্রাথমিক গণশিক্ষা অধিদপ্তর মহাপরিচালক আলমগীর মহাম্মদ মনসুর আলম প্রতিবেদককে বলেন, শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার এখনই ২০ শতাংশের ওপরে তা বলা যাবে না। করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরি অনুকূলে আসার পর আমরা একটি সিদ্ধান্তে আসতে পারব। তখন বোঝা যাবে আসলে কী পরিমাণ ছাত্রছাত্রী আর বিদ্যালয়ে আসবে না। তবে দীর্ঘ দেড় বছর বিদ্যালয় বন্ধ থাকার পর একটা অংশ ঝরে পড়তে পারে এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে বিষয়টি আমরা ক্লোজলি মনিটরিং করছি।

সূত্র মতে, দীর্ঘ বন্ধের পর গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সারা দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। স্কুল খোলার শুরুর দিন থেকেই মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিইপি) ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে মনিটরিং করছে। প্রতিটি জেলা ও উপজেলা থেকে নিয়মিত নির্ধারিত ছকে শিক্ষার্থীদের আপডেট তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে। আর নির্দেশনা মতো নির্ধারিত ছকে এসব তথ্য নিয়মিতভাবেই মাউশি ও ডিপিইতে পাঠাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। বিদ্যালয় খোলার পর শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির সংখ্যা মাঠপর্যায় থেকে যে তথ্য ডিপিইতে আসছে তাতে দেখা যাচ্ছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী এখনো অনুপস্থিত। আর অনুপস্থিতির এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৮ লাখেরও ওপরে।

ডিপিই সূত্রে আরো জানা গেছে, দেশে বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। গত বছরের হিসাব অনুযায়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ কোটি ২৭ লাখ ৫২ হাজার ১৫৮ জন। এর মধ্যে ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে। সংখ্যার হিসাবে যা ৪৮ লাখ ৩৫ হাজার ৫৭৮ জন।

সূত্র জানায়, ৬৪ জেলার মধ্যে গত তিন-চার দিনের গড় হিসাবে প্রাথমিকে ৭৩ দশমিক ৩১ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত ছিল। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৭০ দশমিক ২৭ শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগে ৬৪ দশমিক ৫১ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৭১ দশমিক ৩৫ শতাংশ, খুলনায় ৮১ দশমিক ৪৬ শতাংশ, সিলেটে ৬৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ, বরিশালে ৭৬ দশমিক ২৯ শতাংশ, রাজশাহীতে ৭৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ ও রংপুর বিভাগে ৭৬ দশমিক ১১ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।

প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা অনুপস্থিত তাদের অভিভাবকরা বেশির ভাগই গ্রামে চলে গেছেন। তারা আর ফিরে আসতে চান না। বিশেষ করে জেলা শহরগুলো থেকে চলে যাওয়া শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আর ফিরে আসবে না।

ডিপিই সূত্র আরো জানায়, স্কুল খোলার পর বেশির ভাগ জেলা বা বিভাগেই শিক্ষার্থী অনুপস্থিতির সংখ্যা ২০ শতাংশ বা তার কিছু বেশি। এটি একটি চিন্তার কারণ। কেননা ২০ শতাংশ একটি বড় সংখ্যা। তারা বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তবে পরিবারের আর্থিক সংকট, আয়-রোজগার কমে যাওয়া, কর্মসংস্থানের অভাবসহ বিভিন্ন কারণে শিশুদের বিদ্যালয়ে ফেরানো কঠিন।

উত্তরাঞ্চলের এনজিওকর্মী সানজিদা ইসলাম কাজ করেন নারীশিক্ষা নিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষার্থী তিন বছর ধরে কাজ করছেন এই এলাকায়। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, এসব গ্রামে শুধু উপবৃত্তির টাকার জন্য মেয়েরা লেখাপড়া করত। করোনাকালীন পারিবারিক আয় কমে যাওয়া ও মেয়েরা দীর্ঘ সময় ঘরে বসে থাকার ফলে বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। তিনি বলেন, আগে শিক্ষার্থীদের বিয়ে বন্ধে প্রশাসনের ভালোই চাপ ছিল। কিন্তু করোনা মহামারি কালীন এসবের তোয়াক্কা করেনি কেউ। ফলে বেড়েছে বাল্যবিয়ে।

যদিও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার এ সংখ্যার সঙ্গে একমত নন। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এখনই শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার সংখ্যা নির্ধারণ করা যাবে না। কেননা অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের এখনো স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। তারা আরা একটু সময় নিতে চান। পরিস্থিতি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে চান। প্রতিমন্ত্রীর মতে স্কুলগুলো পুরোদমে শুরু হলে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়বে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close