নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১

মিটফোর্ডে বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ জব্দ

রাজধানীর মিটফোর্ডে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণে নকল ওষুধ ও ওষুধ তৈরি সরঞ্জামসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জব্দ করা নকল ওষুধের মধ্যে রয়েছে আইপিল, নেপ্রোক্সিন প্লাস ৫০০+২০০ এমজি, বেটনোভেট-সি, প্রোটভিট-২০সহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্রান্ডের ওষুধ। গত শনিবার ডিএমপির লালবাগ গোয়েন্দা পুলিশ এই অভিযান চালায়।

গ্রেপ্তাররা হলেন মেডিসিন ওয়ার্ল্ড ফার্মেসির ফয়সাল আহমেদ, লোকনাথ ড্রাগ হাউসের সুমন চন্দ্র মল্লিক ও রাফসান ফার্মেসির মো. লিটন গাজী।

গতকাল রবিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ তথা জানানো হয়। এ সময় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি দক্ষিণ বিভাগ) পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মো. মাহবুব আলম বলেন, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে ভেজাল ওষুধ। এসব ওষুধ সেবনে ক্যানসার, লিভার অকেজসহ ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। ওষুধ বিক্রির সময় প্রতিটি কোম্পানি ফার্মেসিকে একটি ইনভয়েস তালিকা দেয়। এর মধ্য দিয়ে কোম্পানিটি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত কি না তা সহজে বুঝতে পারবেন একজন ক্রেতা। ফার্মেসির বিক্রেতা যদি ইনভয়েস দেখাতে না পারেন তাহলে বুঝতে হবে সেখানে ঝামেলা আছে। তাই ওষুধ কেনার আগে ফার্মেসি থেকে ইনভয়েস দেখে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি ।

মাহবুব আলম আরো বলেন, সম্প্রতি একের পর এক নকল ওষুধের চালান ও সরবরাহকারীরা ডিবির হাতের ধরা পড়ছে। সর্বশেষে গত শনিবার গোয়েন্দা পুলিশ মিটফোর্র্ড এলাকার বাবুবাজার সুরেশ্বরী মেডিসিন প্লাজার নিচতলার মেডিসিন ওয়ার্ল্ড ও লোকনাথ ড্রাগ হাউস এবং পাশের হাজী রানি মেডিসিন মার্কেটের নিচতলার রাফসান ফার্মেসিতে অভিযান চালিয়ে প্রচুর পরিমাণে নকল ও অবৈধ ওষুধ জব্দ করে। এ সময় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এই পুলিশ কর্মকর্তা আরো বলেন, জনগণ যে এসব ভুয়া ওষুধ খেয়ে প্রতারিত হচ্ছে, সেখানে জনগণেরও সচেতনতার দায়বদ্ধতা আছে। যেসব দোকানে ওষুধ বিক্রি হয় সেসব দোকানে ওষুধের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও বৈধ ওষুধের তালিকা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দেওয়া থাকে। ওষুধ কিনতে যাওয়ার সময় এসব তালিকা দেখার অধিকার সাধারণ ক্রেতাদের আছে। নকল ও ভুয়া ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকতে ফার্মেসিতে গিয়ে ক্রেতাদের অবশ্যই তালিকাগুলো দেখা উচিত। ইনভয়েস না দেখে ওষুধ কেনা উচিত নয়।

ভেজাল ওষুধ তৈরি বন্ধ কেন করা যাচ্ছে না জানতে চাইলে ডিবির এই যুগ্ম কমিশনার বলেন, বন্ধ হচ্ছে না বিষয়টি এমন নয়। এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। আমাদের পাশাপাশি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরও ভেজাল ওষুধের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে।

ভেজাল ওষুধ উৎপাদন থেকে শুরু করে সরবরাহ পর্যন্ত চক্রটা কীভাবে কাজ করে জানতে চাইলে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ভেজাল ওষুধ বাজারজাতকরণে এ চক্রটাই সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। উৎপাদনকারী কোনো না কোনো ধরনের চাহিদা বাজার থেকে পেয়ে থাকেন। তাদের নিশ্চয়ই বলা হয় এই ওষুধ তৈরি করে দেন আমারা বাজারে চালিয়ে দেব। তবে সাইকেলের আসল কেন্দ্র হচ্ছে মিটফোর্ড। মিটফোর্ড থেকেই নকল ওষুধ দেশের সব ফার্মেসিতে যাচ্ছে।

দেশে কয়টি প্রতিষ্ঠান ইউনানি লাইসেন্স নিয়ে নকল ও অবৈধ ওষুধ তৈরি করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের তালিকা অনুযায়ী প্রায় ৫০টির মতো রয়েছে। এগুলো অনেক সময় দেখা যায় বন্ধ থাকে। কিন্তু রাতের আঁধারে কারখানা খুলে তারা কার্যক্রম চালায়। পরে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে এ ওষুধ তারা সারা দেশে পাঠিয়ে দেয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ নাঈম গোলদার বলেন, অভিযানে জব্দ করা ওষুধের মধ্যে বেশির ভাগ হচ্ছে রেজিস্ট্রেশনবিহীন ভেজাল ওষুধ। এর মাঝে একটি ওষুধ হচ্ছে পিডিএকটিন যা অনেক আগেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

মানুষ কীভাবে ভেজাল ওষুধ চিনতে পারবে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রেজিস্ট্রারকৃত সব ওষুধের লিস্ট আমাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে, সেখান থেকে জনগণ এ বিষয়ে জানতে পারে। আর জনগণকে অবশ্যই ইনভয়েস নম্বর দেখে ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনতে হবে। ইনভয়েস নম্বর হলো ওষুধের সার্টিফিকেট। যে কোম্পানি থেকে ওষুধ ক্রয় করা হয় সে কোম্পানির ইনভয়েস ওষুধ ফার্মেসিকে সংরক্ষণ করতে হয়। তাহলে ফার্মেসিগুলো চাপের মুখে থাকবে। এতে নকল ওষুধের চাহিদা তারা দেবে না।

ভেজাল ওষুধের ক্ষতি সম্পর্কে তিনি বলেন, নকল ওষুধ সেবন করলে মূল সমস্যা হয় লিভার এবং কিডনিতে। সে কারণে বাংলাদেশে লিভার ও কিডনিজনিত রোগী বাড়ছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি এ ভেজাল ওষুধ নিয়ন্ত্রণ করতে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close