নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১

সেমিনারে বক্তারা

চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৩ লাখ ছাড়িয়েছে

চলতি মৌসুমে এরই মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩ লাখ ছাড়িয়েছে। মৌসুমের বাকি সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা আরো বাড়বে। সে হিসাবে তা ৪ লাখ হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। গতকাল শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘নগরীর মশা নিবারণে সমস্যা টেকসই সমাধানে একটি রূপরেখা’ শীর্ষক সেমিনারে কীটতত্ত্ববিদ, চিকিৎসক এবং কীটপ্রতঙ্গ বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। তারা মশা ও ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনে সরকার দপ্তর স্থাপনের দাবিও করেছেন।

মশাবিষয়ক এই জাতীয় সেমিনারের আলোচনায় কীটতত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত দেশে সরকারি হিসেবে ১৫ হাজার ২২৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দেশের ৪১টি হাসপাতালের তথ্য সংগ্রহ করে এমন হিসাবের কথা বলছে। এর বাইরেও অনেক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী থেকে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সরকার ঘোষিত হিসাবের চেয়ে বাংলাদেশে ২০ থেকে ৪০ গুণ বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে বলে ২০১৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর জানিয়েছে স্বাস্থ্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক জার্নাল ল্যান্সেট। এই হিসাব অনুযায়ী ২০ গুণ ধরলে চলতি মৌসুমে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ৪ হাজার ৫৬০ জন। আর ৪০ গুণ ধরলে আক্রান্তের সংখ্যা ৬ লাখ ৯ হাজার ১২০ জন। আমরা ল্যান্সেটের সর্বনিম্নটিকে মানদণ্ড ধরেই আশঙ্কাজনক চিত্র দেখছি। কেননা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা নিরূপণের পদ্ধতি ২০১৯ সালের চেয়ে কোনো উন্নতি হয়নি।

তিনি আরো বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে চলতি বছরে ৫৭ জন মারা গেছে এটা অবশ্যই বড় দুঃখজনক ব্যাপার। এটা কারো কামনা নয় তবে এর চেয়েও আশঙ্কার বিষয় অর্থনৈতিক। ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেই গড়ে ন্যূনতম ১০ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। সে হিসাবে ৩ লাখ ৪ হাজার ৫৬০ জন রোগীর চিকিৎসা বাবদ খরচ হয়েছে ৩০৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। ডেঙ্গুর উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে আইন, বিধি ও নীতিমালা সংশোধন করে ‘বাংলাদেশ মশা ও কীটপ্রতঙ্গ কর্তৃপক্ষ’ নামে একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করা যেতে পারে।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ২৪২ বছর আগে পৃথিবীতে প্রথম ডেঙ্গু ধরা পড়ে। এরপরও এ ভাইরাস পৃথিবীতে থাকবে সেটা মেনে নেওয়া যায় না। ডেঙ্গুর জন্য টিকা রয়েছে। এটা আবিষ্কার করেছে ফরাসিরা। কিন্তু সেটা ব্যবহার করা হচ্ছে না।

তিনি বলেন, ডেঙ্গুর ব্যাপারটি কিন্তু সহজ সরল ব্যাপার। ২০১৯ সালে ডেঙ্গু চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহারের ফলে মৃত্যুর হার বেশি হয়েছে। ডেঙ্গু চিকিৎসায় প্যারাসিটামল সর্বোত্তম ওষুধ। তবে ডেঙ্গু চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। আমি দরিদ্র মানুষকে ১ কোটি মশারি দিতে বলেছিলাম সরকারকে। কিন্তু সেদিকে দৃষ্টি দিতে দেখা যায়নি।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং মেডিকেল কীটতত্ত্ববিদ তৌহিদ উদ্দীন আহমেদ বলেন, দেশে মশা মারার কোনো নীতিমালা নেই। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদকে এ দায়িত্ব দেওয়া থাকলেও তাদের প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও সক্ষমতা নেই। প্রতি মাস ও বছরের মশার জরিপের ব্যবস্থা থাকতে হবে। আর টেকসই সমাধান নিশ্চিত করতে সমন্বিত মশা ও কীট নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে।

মেডিকেল কীটতত্ত্ববিদ জি এম সাইফুর রহমান বলেন, তিন দিনে এক দিন জমা পানি ফেলে দিন- এ স্লোগান ভালো হবে। কোনো কারণে এটা করা সম্ভব না হলেও সপ্তাহে এক দিন ফেলে দিলেও হবে। তবে পাশাপাশি জমে থাকা পাত্রগুলো ঘষে পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন করতে হবে। কেননা পাত্রের জমা পানি ফেলে দিলেও সেখানে এডিস মশার ডিম থাকতে পারে। এজন্য সেসব ঘষে মেজে পরিষ্কার করতে হবে।

সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় সেমিনারের আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডসশিপ হাসপাতালের প্রধান লেপারোস্কোপিক সার্জন ও চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সরদার এ নাঈম, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের মহাসচিব ও করোনাবিষয়ক জাতীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ প্রমুখ। এ সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন সিজিএসের চেয়ারম্যান ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close