নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১

পরীমনির রিমান্ড

দুই হাকিমের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নয় হাইকোর্ট

চিত্রনায়িকা পরীমনিকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা রিমান্ডে পাঠানোর ক্ষেত্রে ঢাকার দুই মহানগর হাকিমের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নয় হাইকোর্ট।

বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল বুধবার বলেছে, দুই হাকিমের একজন তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মাদকের ভয়াবহতার কথা লিখেছেন। আর রিমান্ড মঞ্জুরের ক্ষেত্রে যে ত্রুটি হয়েছে, অন্য হকিম তা ‘বিশ্বাসই করেন না’।

বনানী থানার মাদকের মামলায় পরীমনিকে দ্বিতীয় দফায় দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন মঞ্জুর করেছিলেন ঢাকার মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস। পরে একই মামলায় মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলাম তৃতীয় দফায় আরো এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। কী কী তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে পরীমনিকে শেষ দুই দফা রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছিল, দুই হাকিমের কাছে সেই ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছিল হাইকোর্ট। জামিন-সংক্রান্ত রুল ও রিমান্ডের বৈধতা প্রশ্নে স্বতঃপ্রণোদিত রুল জারির এক আবেদনের শুনানিতে হাইকোর্টের এই বেঞ্চ গত ২ সেপ্টেম্বর এ আদেশ দেয়। দুই হাকিমকে ১০ দিনের মধ্যে তাদের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। পরীমনির মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে হাইকোর্টে তলব। পরীমনির বার বার রিমান্ডে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ দেখছে হাইকোর্ট।

সে অনুযায়ী দুই মহানগর হাকিম তাদের লিখিত ব্যাখ্যা সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের দপ্তরে জমা দেন। সেই ব্যাখ্যা গতকাল বুধবার হাইকোর্টে উপস্থাপন করা হলে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম দুই ম্যাজিস্ট্রেটের দাখিল করা ব্যাখ্যার অংশ পড়ে শোনান।

তিনি বলেন, ‘রিমান্ড নিয়ে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের যে গাইডলাইন এবং আমাদের প্রচলিত আইন আছে, তারা এগুলোর বিরুদ্ধে। যে কারণে আমরা তাদের জবাবে আমরা সন্তুষ্ট নই।’

‘এই মামলায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা রিমান্ড মঞ্জুর করার ক্ষেত্রে আমরা সন্তুষ্ট নই, যে কারণে পরবর্তী আদেশের জন্য ২৯ সেপ্টেম্বর তারিখ রখলাম।’

দুই মহানগর হাকিমের মধ্যে একজন পরীমনিকে রিমান্ডে পাঠানোর সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দেখাতে গিয়ে এলএসডি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের আত্মহত্যা এবং ওই মাদকের ভয়াবহতা তুলে ধরেন। সেটি পড়ে শুনিয়ে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম বলেন, ‘আমরা তাকে শোকজ করেছি কেন তিনি রিমান্ড মঞ্জুর করলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ছাত্র আত্মহত্যা করেছে সেটার বর্ণনা দিলেন।’

এরপর বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক অপর ম্যাজিস্ট্রেটের ব্যাখ্যা পড়ে শোনান। সেখানে ম্যাজিস্ট্রেট বলেছেন, ‘উপরোক্ত বিষয় সার্বিক বিবেচনায় দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করার আদেশের ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি নিতান্তই আমার ইচ্ছাকৃত নয়, সরল বিশ্বাসে কৃত ভুল।’

বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম বলেন, ‘এখানে যে ত্রুটি হয়েছে তা তিনি বিশ্বাসই করেন না। হাইকোর্টকে আন্ডারমাইন করা হয়েছে।’

গত ৪ আগস্ট ঢাকার বনানীর বাসায় অভিযান চালিয়ে চিত্রনায়িকা পরীমনিকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরদিন তার বিরুদ্ধে বনানী থানায় মাদক আইনে মামলা করা হয়। প্রায় এক মাস পর বুধবার জামিনে মুক্তি পান তিনি। এ মামলায় তিন দফায় মোট টানা সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। গত ৫ আগস্ট প্রথম দফায় চার দিন, ১০ আগস্ট দুই দিন এবং ১৯ আগস্ট এক দিনের রিমান্ডে পাঠনো হয় পরীমনিকে। বার বার রিমান্ডের বৈধতা প্রশ্নে স্বতঃস্ফূর্ত রুল চেয়ে গত ২৯ আগস্ট হাইকোর্টে আবেদন করে মানবাধিকার ও আইনি সহায়তাকারী সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। তা আদালতে উপস্থাপন করা হলে ১ সেপ্টেম্বর বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক মোস্তফা জামান ইসলাম বলেন, তৃতীয় দফায় পরীমনির রিমান্ড মঞ্জুর করে ম্যাজিস্ট্রেট ‘রিমান্ড ক্ষমতার অপ্যবহার’ করেছেন। তাদের সামনে কী ম্যাটেরিয়াল (তথ্য-উপাত্ত) ছিল যে তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনে রিমান্ড মঞ্জুর করলেন? এগুলো কোনো সভ্য সমাজে হতে পারে না। পরদিন অ্যাটর্নি জেনারেলের উপস্থিতিতে শুনানি করে আদালত আদেশ দেয়। পরীমনির বিরুদ্ধে বনানী থানার মাদক মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করার পাশাপাশি শেষ দুই দফায় রিমান্ড মঞ্জুর করা দুই হাকিমের ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close