প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১

স্বীকৃতির আশায় তালেবান

আফগানিস্তানে এক সপ্তাহ হয়েছে সরকার গঠন করেছে তালেবান। তবে এখনো কোনো প্রতিবেশী দেশ বা শক্তিধর রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পায়নি তারা। গোষ্ঠীটি ক্ষমতায় আসার পরপরই তাদের স্বাগত জানিয়েছে চীন। তবে আনুষ্ঠানিক কোনো স্বীকৃতি দেয়নি দেশটি। তালেবানকে বিভিন্ন সময়ে মদদদাতা হিসেবে অভিযুক্ত পাকিস্তান এখনো চুপ। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশও কথা বলছে না। অন্যদিকে পশ্চিমারা স্বীকৃতি দেবে না বলেই রীতিমতো ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছে। তবে তালেবান রয়েছে স্বীকৃতির আশায়। দলটির মুখপাত্র সোহাইল শাহিন বলেছেন, বৈধতা ও আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির জন্য তালেবান উন্মুখ হয়ে পড়েছে। সরকার পরিচালনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু দেশের, বিশেষ করে প্রতিবেশী কিছু দেশের স্বীকৃতি জরুরি। খবর বিবিসির।

তালেবান ক্ষমতায় আসার পর প্রথম কোনো বিদেশি নেতা হিসেবে গত রবিবার কাবুল সফরে যান কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানি। তিনি আফগান প্রধানমন্ত্রী মোল্লা হাসান আখুন্দের সঙ্গে একটি বৈঠকও করেন। কিন্তু দোহায় ফিরে গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়ে দেন তালেবানের সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার সময় এখনো আসেনি।

নতুন কাবুল সরকার নিয়ে পাকিস্তানের ভূমিকাও অস্পষ্ট। পাকিস্তানের সেনা গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই প্রধান লে. জেনারেল ফায়েজ হামিদ গত সপ্তাহে কাবুলে ছিলেন। এরই মধ্যে বিমানবোঝাই করে আফগানিস্তানে খাবার ও ওষুধ পাঠিয়েছে পাকিস্তান। গত সোমবার পাকিস্তানের জাতীয় বিমান সংস্থা পিআইএর একটি বিমান কাবুলে নেমে যাত্রী নিয়ে এসেছে এবং ইঙ্গিত দিয়েছে যে এখন থেকে নিয়মিত এই রুটে বিমান চলবে। কিন্তু তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির প্রশ্নে ইসলামাবাদ এখনো চুপ।

এ বিষয়ে ইসলামাবাদে রাজনৈতিক বিশ্লেষক হাসান আসকারি রিজভী বলেন, ‘পাকিস্তান তাড়াহুড়ো করতে চাচ্ছে না। তারা এবার একা কিছু করতে চায় না। অন্য আরো ৫-১০ জনের সঙ্গে মিলে সিদ্ধান্ত নিতে চায়।’ তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিবেশী অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বিশেষ করে চীনের সঙ্গে সমন্বয় করে এবার এগোতে চাচ্ছে পাকিস্তান। আফগান এবং তালেবানের প্রশ্নে কমপক্ষে আঞ্চলিক একটি ঐক্য চাচ্ছে পাকিস্তান।’ ওদিকে চীন তালেবানের কাবুল দখলের খোলাখুলি তাদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিল। তালেবান সরকার গঠনের পরদিনই অর্থাৎ গত বুধবার তারা তালেবান সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েন বিন একে ‘অরাজকতা’ বন্ধের জন্য একটি ‘প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ’ বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘কাবুলে চীনা দূতাবাস সচল। আমরা নতুন আফগান সরকার এবং তাদের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে প্রস্তুত।’

যেভাবে তালেবান সরকার গঠন করেছে বা সেই সরকার এখন পর্যন্ত যেভাবে আচরণ করছে তা নিয়ে বিন্দুমাত্র কোনো কথা চীন বলেনি। অনেক পর্যবেক্ষক একে তালেবানের প্রতি পরোক্ষ স্বীকৃতি হিসেবে দেখলেও আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির দিনক্ষণের কোনো ইঙ্গিত চীন দেয়নি।

লন্ডনে আফগান সাংবাদিক এবং আফগানিস্তানের রাজনীতির বিশ্লেষক সাইয়েদ আবদুল্লাহ নিজামী বলেন, কয়েকটি দেশ বিশেষ করে কাতার, আরব আমিরাত, চীন ও পাকিস্তান তালেবানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে কিন্তু আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির কোনো প্রতিশ্রুতি এখনো তারা দিচ্ছে না।

তিনি বলেন, ‘দেখে মনে হচ্ছে একটি দেশ যেন আরেকটি দেশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে তারা কী করে। একজন সিদ্ধান্ত নিলেই আরেকটি এগোবে। পাকিস্তান তাকিয়ে চীনের দিকে, চীন হয়তো দেখছে পাকিস্তান কী করে। উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান চেয়ে আছে সম্ভবত রাশিয়ার দিকে।’

আর যে সৌদি আরব বাকি বিশ্বের তোয়াক্কা না করে ১৯৯৬ সালে তালেবানকে স্বীকৃতি দিয়েছিল, এবার তারা তালেবানের কাবুল দখলের পর একটি কথাও বলেনি। কাতারের সঙ্গে তালেবানের দহরম-মহরম হয়তো সৌদিদের পছন্দ নয়।

অনেক বিশেষজ্ঞ তাই বলছেন যে তালেবান সরকারের প্রতি পাকিস্তান, চীন বা কাতারের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টা আর বাকি নেই। কারণ তালেবানের সঙ্গে তারা সম্পর্ক শুরু করেছে।

কুয়ালালামপুরে চীনা রাজনীতির বিশেষজ্ঞ ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী মনে করেন, তালেবানকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির প্রশ্নে চীন ধৈর্য ধরবে এবং জাতিসংঘের আওতায় একটি ঐকমত্যের সৃষ্টির চেষ্টা তারা হয়তো করতে পারে। তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের পরাজয়ে চীন হয়তো খুশি কিন্তু আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক ভিন্ন একটি বিষয়।’

তবে বৈধতা ও স্বীকৃতি পেতে তালেবানের আসল পরীক্ষা হবে সন্ত্রাস নিয়ে তাদের অবস্থানের ওপর। কারণ শুধু আমেরিকা নয় এই ইস্যুতে চীন, রাশিয়া এমনকি পাকিস্তানও কমবেশি উদ্বিগ্ন। আরেক প্রতিবেশী ইরান চায় আইএস এবং আল কায়েদা যেন আফগানিস্তানে না থাকে। আর রাশিয়া এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর চাওয়া হলো আইএসকে (ইসলামিক স্টেট-খোরাসান) যেন কোনোভাবেই আফগানিস্তানে প্রশ্রয় না পায়। সুতরাং এক মাস আগে কাবুল দখল তালেবানের জন্য যত সহজ ছিল, বৈধতা অর্জন ও দেশ শাসন করা হবে ততটাই জটিল এবং কঠিন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close