নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১

স্বাস্থ্যবিধি উধাও স্কুল ছুটির পর

করোনার প্রকোপের কারণে প্রায় দেড় বছর বাজেনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ঘণ্টা, হয়নি শ্রেণিকক্ষে পাঠদান। অনলাইনে ক্লাস চললেও ছিল না শিক্ষার্থীদের পদচারণা। নিস্তব্ধতা ভেঙে গত রবিবার থেকে শুরু হয়েছে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান। তবে গতকাল অনেকে প্রথম এসেছে স্কুলে। দীর্ঘদিন পর ক্লাসে ফেরায় উচ্ছ্বসিত ঘরবন্দি শিক্ষার্থীরা। করোনার সংক্রমণ কমে এলেও উদ্বেগ এখনো কাটেনি। তাই শিক্ষার্থীদের ক্লাসে পাঠিয়ে বাইরে অপেক্ষায় থাকছেন উৎকণ্ঠিত অভিভাবকরা। এই উৎকণ্ঠার ভিড়ে উধাও হয়ে গেছে স্বাস্থ্যবিধি। মাস্ক পরায় শিক্ষার্থীদের সচেতন থাকতে দেখা গেলেও বেশির ভাগ অভিভাবকের মধ্যে মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যসচেতনতার বিষয়ে অনীহা দেখা গেছে। অভিভাবকদের একটা অংশের এই গাদাগাদি দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অন্য অভিভাবকরা। তারা বলছেন, স্কুলে পাঠাতে ও স্কুলের ভেতরে যে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে, স্কুলের বাইরে বেরোলেই তার উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দ্বিতীয় দিন রাজধানীর মতিঝিল, আরামবাগ ও শাজাহানপুরে ছয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুলে ঢোকানো হচ্ছে। স্কুল প্রাঙ্গণে অযথা কোনো শিক্ষার্থীকে ঘুরতে দেওয়া হচ্ছে না। শ্রেণিকক্ষগুলোতেও মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক নিশ্চিত করছেন শিক্ষকরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও মাস্ক ব্যবহার করছেন। তবে স্কুল ছুটির পর শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে গেলে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানতে দেখা যাচ্ছে না।

গোড়ানের বাসিন্দা সেলিম খানের দুই সন্তান পড়ছে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে। একজন অষ্টমে, অন্যজন ষষ্ঠ শ্রেণিতে। সন্তানদের বাসায় নিয়ে যেতে তিনি স্কুলের মূল ফটকের জটলা থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি বলেন, স্কুল ছুটির পর শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে বের হচ্ছে। কিন্তু গেটের সামনে অভিভাবকরা গাদাগাদি করে আছেন। অভিভাবকরা যদি স্বাস্থ্যবিধি না মানেন, তাহলে বিপদ হতে পারে। অভিভাবকদের এ বিষয়ে আরো সচেতন হওয়া উচিত।

দেখা যায়, পুরান ঢাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে ও গেটের বাইরে শিক্ষার্থীদের জন্য করোনা বুথ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্কের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরই মধ্যে সেন্ট গ্রেগরিজ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা সেন্ট্রাল গার্লস হাই স্কুল, ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজ, ঢাকা গভ. মুসলিম হাই স্কুল ও কবি নজরুল সরকারি কলেজে এ ব্যবস্থা দেখা গেছে। আবার এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে উৎসুক অভিভাবকদের ভিড়ও রয়েছে।

সেন্ট গ্রেগরিজ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে অবস্থানরত আমেনা বেগম নামে একজন অভিভাবক বলেন, আমার ছেলে অর্ণব এখানে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। দীর্ঘদিন পর করোনা সংক্রমণের মধ্যে যেহেতু স্কুল খোলা হয়েছে তাই সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি।

মাইমুনা আক্তার নামে আরেকজন অভিভাবক বলেন, আসলে এখানে সবাই সন্তানের নিরাপত্তার স্বার্থেই ভিড় করেছেন। আমার মেয়ে বেশ বড় হয়েছে। ওকে একা আসতে দিতে পারি না। তা ছাড়া অভিভাবকদের জন্য যদি স্কুল কর্তৃপক্ষ বসার আলাদা ব্যবস্থা করে দেয় এভাবে আমাদের জটলা করে দাঁড়িয়ে থাকা লাগত না।

ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আরেকজন অভিভাবক বলেন, আমার মেয়ে শারমিন এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী। স্কুলে যাতায়াতের পথে কিছু ছেলে তাকে ডিসটার্ব করে। আমি সঙ্গে এলে মেয়েটার মনে সাহস থাকে। করোনার ভয় থাকলেও মেয়ের কথা চিন্তা করে রোদের মধ্যে অপেক্ষা করছি। এখানে স্বাস্থ্যঝুঁকির চেয়ে আমার মেয়ের নিরাপত্তা বেশি জরুরি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close