বদরুল আলম মজুমদার

  ০৬ আগস্ট, ২০২১

পরীক্ষার ফরম পূরণ

অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধে চালু হচ্ছে সফটওয়্যার

বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার ফরম পূরণে নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত অর্থ আদায় বন্ধ করতে প্রতি বছর নানা নির্দেশনা দেওয়া হলেও মানছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ নিয়ে গণমাধ্যমে বারবার সংবাদ প্রচারিত হলেও কোনো কাজ হয় না। কোথাও কোথাও অতিরিক্ত ফি আদায়ে চলে রীতিমতো প্রতিযোগিতা। তবে এই অতিরিক্ত অর্থ আদায় বন্ধে বিশেষ সফটওয়্যার চালু করতে যাচ্ছে শিক্ষা বোর্ড।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীসহ সারা দেশে রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ পাওয়া গভর্নিং বডির সদস্যরা প্রভাব খাটিয়ে এসব অর্থ আদায় করে থাকেন। এ নিয়ে সারা বছরজুড়েই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে অসন্তুষ্টি বিরাজ করে। অনেক সময় অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাও ঘটে।

ফি আদায়ে শিক্ষা বোর্ডগুলো নানা নির্দেশনা দিলেও মানাই হয় না। রাজনৈতিক প্রভাব বলয়ের লোকজন বার্ষিক বোর্ড ফরম পূরণ ফি আদায় করে উৎসবের মতো করে। সর্বশেষ করোনাকালেও এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেছে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এবার পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধে ভিন্ন পথে হাঁটছে শিক্ষা বোর্ড। অতিরিক্ত অর্থ আদায় ঠেকাতে একটি সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে একজন পরীক্ষার্থী ফরম পূরণসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাওনা পরিশোধ করতে পারবে। প্রমাণ হিসেবে থাকবে সফটওয়্যারের মাধ্যমে পাওয়া এসএমএস। তাই চাইলেও প্রতিষ্ঠান আগের মতো অতিরিক্ত অর্থ নিয়ে তা অস্বীকার করতে পারবে না। পারবে না নামে-বেনামে নানা খাতে ফি আদায় করতে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফি আদায়ে সরকার যে সফটওয়্যারের কথা বলছে, সেটি ইতিবাচক। ফলে স্কুল ও কলেজ ইচ্ছা করলেই অতিরিক্ত ফি আদায় করতে পারবে না। বোর্ড নির্ধারিত ফির বেশি নিলেও অভিভাবকরা তা জেনে যাবেন। কারণ ফি জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলে একটি খুদে বার্তার মাধ্যমে তা জানিয়ে দেওয়া হবে। তাই কোন খাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কত টাকা নিয়েছে, তার তথ্য জানতে পারবেন অভিভাবকরা।

এদিকে শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী ১২ আগস্ট থেকে শুরু হতে যাওয়া এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণ হবে এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে। সংশ্লিষ্ট কলেজ এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে পরীক্ষার্থী বা তার অভিভাবকরা একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশনের কাজ শুরু করবেন। প্রতিষ্ঠান, বোর্ড ফি ও কেন্দ্র ফি সফটওয়্যারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেট করা থাকবে। পরীক্ষার্থীর কাছে কত টাকা পাওনা, কলেজ শুধু সফটওয়্যারে সেই টাকার পরিমাণ এন্ট্রি দেবে। তারপর পরীক্ষার্থী বা অভিভাবকের নিবন্ধিত ফোন নম্বরে চলে যাবে একটি এসএমএস, যাতে টাকার পরিমাণ উল্লেখ থাকবে।

কোনো পরীক্ষার্থী যদি মনে করে, তার কাছে অতিরিক্ত অর্থ চাওয়া হয়েছে, সেক্ষেত্রে সে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে। সেখানে সমাধান না পেলে বোর্ডের কন্ট্রোল রুমে ফোন করে অভিযোগ জানাতে পারবে। তাৎক্ষণিক তা যাচাই-বাছাই করবে বোর্ড। প্রমাণ পেলে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের ফরম পূরণের প্যানেল তাৎক্ষণিক বন্ধ করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।

জানতে চাইলে আন্তশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, এত দিন বোর্ড ফির বাইরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নানা খাত দেখিয়ে অর্থ আদায় করত, যার কোনো ডকুমেন্ট থাকত না। এখন একজন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রতিষ্ঠান টিউশন ফিসহ কোন খাতে কত টাকা নেবে, তা আমাদের কাছে দৃশ্যমান হবে।

নওয়াব হাবিবুল্লাহ স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহীনুর মিয়া শিক্ষা বোর্ডের নতুন এ পদ্ধতিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘আমরাও চাই ফরম পূরণের নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যে অনৈতিক বাণিজ্য করে, তা বন্ধ হোক।’

সফটওয়ারের মাধ্যমে যেভাবে হবে ফরম পূরণ : করোনার কারণে এবার এইচএসসির ফরম পূরণের পুরো কাজটি হবে অনলাইনে। কোনো অবস্থাতেই পরীক্ষার্থী বা অভিভাবকদের কলেজে ডাকা যাবে না। সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকে পরীক্ষার্থীদের তালিকা প্রিন্ট করতে হবে। এই হার্ড কপিতে লাল কালি ব্যবহার করে টিক চিহ্ন দিতে হবে। তারপর প্রতিষ্ঠানের বকেয়া পাওনার খালি ঘরে সঠিকভাবে হিসাব-নিকাশ করে নির্বাচিত প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর বকেয়া পাওনা (পাওনা না থাকলে ‘শূন্য’ টাকা) লিখতে হবে। ফোন নম্বরের ঘরে পরীক্ষার্থী বা তার অভিভাবকের নম্বরটি লিখতে হবে।

সব যাচাই-বাছাই হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানের মোট বকেয়া পাওনা এন্ট্রি করতে হবে। এখানে বোর্ড ফি ও কেন্দ্র ফি অটো সেট থাকবে। প্রতিষ্ঠানের এ দুটি খাতে টাকা এন্ট্রি দিতে হবে না। সবকিছু সঠিকভাবে এন্ট্রি দেওয়ার পর সেন্ড বাটনে ক্লিক করার পর পরীক্ষার্থীর মোবাইলে টাকার পরিমাণ উল্লেখ করা একটি এসএমএস চলে যাবে।

পাওনা বা মোবাইল নম্বর এন্ট্রিতে ভুল ধরা পড়লে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থী পেমেন্ট না করা পর্যন্ত এডিট বাটনে ক্লিক করে প্রতিষ্ঠান, পাওনা বা মোবাইল নম্বর সংশোধন করতে পারবে। সেক্ষেত্রে সংশোধন করার পর অবশ্যই পুনরায় সেন্ট এসএমএস বাটনে ক্লিক করতে হবে। তবে কোনো পরীক্ষার্থী পেমেন্ট সম্পন্ন করলে আর সংশোধনের সুযোগ থাকবে না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো পরীক্ষার্থী ফি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে তার ফরম পূরণ সম্পন্ন হয়নি বলে গণ্য হবে। যেসব পরীক্ষার্থী পেমেন্ট নিশ্চিত করেছে, তাদের নামের পাশে প্রতিষ্ঠান ‘পেইড’ দেখাতে পারবে। বাকিগুলো পেন্ডিং দেখাবে।

প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠান ‘আনপেইড স্টুডেন্ট লিস্ট’ বাটনে ক্লিক করে ফরম পূরণের নির্ধারিত শেষ তারিখের আগে যেসব পরীক্ষার্থী পেমেন্ট করেনি, তা দেখাতে পারবে। যারা পেমেন্ট করেনি, ফোনে যোগাযোগ করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ফরম পূরণ করতে পারবে। ফরম চূড়ান্ত হওয়ার পর সেখানে পরীক্ষার্থীদের স্বাক্ষর নেওয়া প্রয়োজন নেই বলে বোর্ড থেকে জানানো হয়েছে।

করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার সব বিষয়ে পরীক্ষা হবে না। তাই অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার ফরম পূরণের ফি কমানো হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে চলতি বছরের ডিসেম্বরে এ পরীক্ষা নেওয়া হবে। এ বছর বিজ্ঞান বিভাগে ১ হাজার ১৬০ টাকা, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ১ হাজার ৭০ টাকা ফি ধার্য করা হয়েছে। নির্ধারিত ফির বাইরে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা যাবে না।

ফরম পূরণের পর শিক্ষার্থী এসএমএসে টাকা পরিশোধ করার একটি লিংক পাবে। সেটি ব্যবহার করে অথবা সোনালী ব্যাংকের সোনালী ই-সেবা অ্যাপ ব্যবহার করে পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে পরীক্ষার সর্বমোট ফি পরিশোধ করতে পারবে। এছাড়া বোর্ডের ওয়েবসাইটের স্টুডেন্ট প্যানেল থেকেও ‘সোনালী সেবা’ পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে পরীক্ষার ফি পরিশোধ করা যাবে। মোবাইল ব্যাংকিংসেবা নগদ, বিকাশ, রকেট, ইউপে ও সোনালী ই-ওয়ালেট যে কোনো একটির মাধ্যমে পরীক্ষার ফি দিতে পারবে।

এদিকে এইচএসসির ফরম পূরণ সংক্রান্ত কোনো সমস্যা বা অতিরিক্ত অর্থ আদায় করলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কন্ট্রোল রুমের নি¤েœাক্ত ফোন নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। নম্বরগুলো হলো- ০২-৯৬৬৯৮১৫, ০২-৫৬৬১১০১৮১, ০২-৫৮৬১০২৪৮, ০১৬১০৭১১৩০৭, ০১৬২৫৬৩৮৫০৮, ০১৭২২৭৯৭৯৬৩।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close