নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৬ আগস্ট, ২০২১

জন্মবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রী

শেখ কামালকে আগেই হত্যার চেষ্টা হয়

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার তিন বছর পার না হতেই জাতির পিতার বড় ছেলে ক্যাপ্টেন শেখ কামালকে ‘হত্যার চেষ্টা’ করা হয়েছিল। ১৯৭৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর একটা চক্রান্ত করে কামালকে গুলি করা হয়। তাকে হত্যারও চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সে যখন বেঁচে যায়, তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার চালানো হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭২তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন’ এবং ‘শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার ২০২১’ প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এ বিষয়ে কথা বলেন সরকারপ্রধান।

শেখ হাসিনা বলেন, রাষ্ট্রপতির ছেলে বা প্রধানমন্ত্রীর ছেলে, জাতির পিতার ছেলে হয়েও কামাল অত্যন্ত সাদাসিধে জীবনযাপন করত। কখনো বাবা প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি সেই জন্য অর্থ-সম্পদের দিকে তার কোনো দৃষ্টি ছিল না। দেশকে গড়ে তোলা, দেশের মানুষের পাশে থাকা বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা সাংস্কৃতিক অঙ্গন বা ক্রীড়া অঙ্গন এসব কিছুর উন্নতি করা, এটাই ছিল তার সব থেকে বড় কথা।

অত্যন্ত সাদাসিধে জীবনযাপন করত। আবুল ফজল সাহেব একটা লেখা লিখেছিলেন, সেটা যদি কেউ পড়েন, তাহলে দেখবেন যে, কীভাবে কামালকে তিনি তার যে অমায়িকতা, সাদাসিধে জীবনযাত্রা, চলাফেরা, সেটাই তিনি তুলে ধরেছেন।

বিলাস-ব্যাসনে কখনো শেখ কামালের মন ছিল না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার বাবার শিক্ষা ছিল, মায়ের শিক্ষা ছিল। আর তাছাড়া একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ। সেখানে তো বিলাসিতার কোনো সুযোগ নেই। আর ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থ-সম্পদ এসব দিকে তার কোনো নজরই ছিল না। পাকিস্তান আমলে শোষিত-বঞ্চিত বাঙালির অধিকার আদায়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে জীবনের অনেকটা সময় কারাগারেই কাটাতে হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে। সে কারণে তার সন্তানরা পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হলেও সেই কষ্টকে কখনো কষ্ট মনে করেননি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার মা সেটা করতে দেননি বা কোনো হা-হুতাশ বা কোনো চাওয়া বা অতিরিক্ত কিছু চাওয়া, সেটা ছিল না। সাধারণভাবে জীবনযাপন করা, একটা আদর্শ নিয়ে চলা এবং দেশকে ভালোবাসা, দেশের মানুষকে ভালোবাসা, দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করা এটাই আমাদের শিক্ষা। সেই শিক্ষাই কামাল সব সময় অনুসরণ করেছে।’

স্বাধীনতার পর দেশের ক্রীড়া অঙ্গনকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে শেখ কামালের ভূমিকার কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে যে আধুনিক ফুটবল খেলা বা ক্রিকেট খেলা বা এই যে খেলাধুলা, সেটাকে একটা আধুনিকতার ছোঁয়া এবং সংগীত জগতে বা সাংস্কৃতিক জগতে, সেখানেও তার যথেষ্ট অবদান রয়েছে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে সে অনেক অবদান রেখে গেছে আমাদের সমাজের জন্য।’ শেখ হাসিনা দুঃখ করে বলেন, জাতির পিতা আজীবন শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছেন অথচ এ দেশেরই কিছু মানুষ ষড়যন্ত্র করে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। সব থেকে ট্র্যাজেডি কামালের জন্য, যে নূর (বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরী) আর কামাল একসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কর্নেল ওসমানীর এডিসি হিসেবে কাজ করেছে, যখন বাসা আক্রমণ করে কামাল নিচের বারান্দায় চলে যায়, ও যখন দেখে নূর, হুদা এরা একসঙ্গে ঢুকছে, তখন তাদের বলেছিল, ‘আপনারা এসে গেছেন খুব ভালো হয়েছে। দ্যাখেন বাসা কারা আক্রমণ করেছে।’ এই কথা শেষ করতে পারেনি, ওই নূরের হাতের অস্ত্রই গর্জে উঠে। ওখানেই কামালকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত বড় বিশ্বাসঘাতকতা এই বাংলাদেশে ঘটে গেছে। ১৫ আগস্ট যদি আজকে বাঙালির জীবনে না ঘটত, তবে এই বাঙালি অনেক আগেই বিশ্বে একটা মর্যাদা নিয়ে চলত এবং এই হত্যার পর বাংলাদেশকে ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশে ঘোষণা দিয়েছিল, যদিও সেটা টেকেনি। কাজেই চক্রান্তটা কোথায়, কীভাবে ছিল, সেটা নিশ্চয় দেশের মানুষ এখন এত দিনে উপলব্ধি করতে পারে। আর কত বড় বিশ্বাসঘাতকতা, সেটাও নিশ্চয় উপলব্ধি করতে পারে।

শেখ কামালের অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা এবং ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, শেখ কামাল বেঁচে থাকলে এ দেশের যুবসমাজের জন্য আরো অনেক কাজ করতে পারত।

ক্রীড়া ও সংস্কৃতিচর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেকোনো একটা জাতির জন্য শিক্ষা, ক্রীড়া, সংস্কৃতিচর্চা এগুলো অপরিহার্য একটি জাতিকে গড়ার জন্য। আমাদের শিশু-কিশোর বা যুবক সবার জন্য, তাদের যে মেধা, সে মেধা বিকশিত হওয়া, তাদের মননগুলো দেশের কাজে লাগানো এটাই তো সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’ যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার প্রবর্তন করেছে। সাত ক্যাটাগরিতে মোট ১০ জন ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব ও দুটি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়।

পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন আজীবন সম্মাননায় কাজী মো. সালাউদ্দিন, ক্রীড়াবিদ হিসেবে মাহফুজা খাতুন শিলা (সাঁতার), রোমান সানা (আরচারি), মাবিয়া আক্তার সীমান্ত (ভারোত্তোলন), ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে মনজুর কাদের (শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব) এবং ক্যা শৈ ল হ্ন (কারাতে ফেডারেশন), উদীয়মান ক্রীড়াবিদ হিসেবে আকবর আলী (ক্রিকেট) ও ফাহাদ রহমান (দাবা), উন্নতি খাতুন (ফুটবল), ফেডারেশন/অ্যাসোসিয়েশন/সংস্থা ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে মুহাম্মদ কামরুজ্জামান এবং পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ওয়ালটন। পুরস্কার হিসেবে প্রত্যককে এক লাখ টাকা, ক্রেস্ট ও সম্মাননা সনদ দেওয়া হবে।

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের শহীদ শেখ কামাল অডিটরিয়ামে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল। এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ১০ টাকা মূল্যমানের স্মারক ডাকটিকিট, ১০ টাকার উদ্বোধনী খাম ও ৫ টাকা মূল্যের ডেটা কার্ড অবমুক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এগুলো উদ্বোধন করেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।

এ সময় ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব মো. আফজাল হোসেন এবং ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সিরাজ উদ্দিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close