গাজী শাহনেওয়াজ

  ০৫ আগস্ট, ২০২১

বয়স গরমিলে টিকা পাচ্ছে না অনেকে

বয়সের গরমিলের ফাঁদে আটকে যাচ্ছেন করোনার টিকাপ্রত্যাশী দেশের অনেক তরুণ-তরুণী। এক দিন বয়স কম থাকা কিংবা জন্মনিবন্ধনে বয়স কমানোর কারণে অনেক শিক্ষার্থীই টিকা নিতে পারছেন না। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০০৪ সালের ১ জানুয়ারি যাদের জন্মতারিখ, তারাই টিকার প্রাপ্য। এ পর্যায়ের অর্থাৎ আঠারো বছর বা তার বেশি এবং পঁয়ত্রিশের কম বয়সি ব্যক্তিদের টিকার জন্য লাগছে না নিবন্ধন।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, সরকার নির্ধারিত বয়সসীমার চেয়ে দু-এক দিনের কম অর্থাৎ ২০০৪ সালের ২ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া অনেকেই টিকা নিতে পারছে না। এ কারণে অভিভাবকরা ওইসব সন্তানের জন্য টিকা পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। আক্ষেপ তাদের এক দিনের। আবার অনেক অভিভাবকের মনোকষ্ট অন্যখানে প্রকৃত জন্মতারিখ লুকিয়ে বয়স কমানোর কারণে তাদের সন্তান পাচ্ছে না টিকা।

এমনিই এক তরুণ সালিম সাকিব ওরিভ। রাজধানীর কলাবাগানের বাসিন্দা ও সিটি কলেজের এই শিক্ষার্থীর জন্ম ২০০৪ সালের ২ জানুয়ারি। টিকা না পাওয়ার ক্ষেত্রে তার আক্ষেপ, এক দিন বয়স কম। এই শিক্ষার্থীর মা শাহানাজ বেগম বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদে কর্মরত। সন্তানের টিকা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সরকারের নির্ধারণী পর্যায়ে দৌড়ঝাঁপ করেছেন। তাতে মিলেছে শুধু আশ্বাসের বাণী, সান্ত্বনা।

এমনই আরেকজন রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা নরিকা। মণিপুর স্কুলের এই শিক্ষার্থীর মা শিউলি আক্তার জানান, তার সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করার সময় বয়স এক বছর কমিয়ে দিয়েছিলেন। এখন বয়সের কারণে টিকা দেওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মেয়ে। এ নিয়ে মায়ের দুঃখের অন্ত নেই।

শুধু সাকিব কিংবা নরিকাই নয়, লাখ লাখ তরুণ-তরুণী বয়সের গরমিলের ফাঁদে পড়ে টিকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এ মুহূর্তে।

এদিকে, এ ধরনের সমস্যা সামনে আসতে পারে বয়সবিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে ভাবনায় ছিল না স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নীতিনির্ধারকদের। তারা বলছেন, কারিগরি পরামর্শ কমিটির সঙ্গে ফের বসলে এই ছোটখাটো সমস্যা তুলে ধরবেন তারা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, এ নিয়ে ৭ আগস্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, তারপর এই বিষয়ে দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে।

তবে ভিন্নমত পোষণ করেছেন সরকারের কারিগরি পরামর্শ কমিটির সদস্য ও একজন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, আঠারো বছর বা তার ওপরে টিকা দেওয়া যাবে এ সিদ্ধান্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। আর বিষয়টি বয়স কম-বেশির না, নর-নারীর বায়োলজিক্যাল সিস্টেমের।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, দু-এক দিনের বয়সের যে হেরফের এ ধারণাটি আগে কারো মাথায় আসেনি। আর অনুমাননির্ভর করে কোনো কথা বলাও উচিত না। কারণ আমরা যখন সুরক্ষা অ্যাপ তৈরি করেছিলাম, অনেক কিছুই ভেবে করেছিলাম। তার পরও সেখানে নতুন নতুন পরিবর্তন আনতে হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘২০০৪ সালের ১ জানুয়ারির দু-এক দিন পর যারা জন্ম নিয়েছেন, তাদের বিষয়টি চিন্তা করা হয়নি এত দিন। এখন যেহেতু সামনে এসেছে, তাই এখন কারিগরি পরামর্শ কমিটির নজরে আনা হবে। আর ধরেই নেওয়া হয় ষোলো বছরে একজন এসএসসি পাস করেন এবং আঠোরোতে এইচএসসি পাস করেন, সে বিবেচনায় এটা করা হয়েছে। তবে জন্মনিবন্ধন বা এনআইডি দেখে টিকা দিতে হবে। তাই পরিবর্তন আনতে হলে আইসিটিকে সিস্টেম ডেভেলপ করতে হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক সাবেক চিকিৎসক এবং বর্তমান টিবি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আগামী ৭ আগস্ট থেকে সরকারের নির্ধারিত নিয়ম মেনে গণটিকা দেওয়া শুরু হবে। এখনই যারা এক দিনের বয়সের হেরফেরের কারণে টিকা না পাওয়ার দুশ্চিন্তা করছেন, তাদের জন্য আশার কথা হচ্ছে, এই নিয়মে পরিবর্তন আসতে পারে, অপেক্ষা করতে হবে।

সরকারের কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘আঠারো বছর বয়স কিংবা কবে এইচএসসি পাস করল সেই বিবেচনায় টিকা দেওয়া হচ্ছে না। এটা করা হয়েছে বায়োলজিক্যালি বয়স হিসাব করে।’ তিনি বলেন, ‘আঠারো বছরের নিচে কাউকে টিকা দিলে কোনো অসুবিধা নেই, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) থেকে এমন কোনো তথ্য আমরা এখনো পাইনি। ট্রায়াল ছাড়া চিকিৎসা ক্ষেত্রে কোনো মানুষের শরীরে, নতুন ওষুধ প্রয়োগ করা যায় না।’

সাবেক ভিসি বলেন, ‘আঠারো বছরের নিচে দেওয়া যায় কি যায় না, এমন কোনো তথ্যও আমাদের জানা নেই। পৃথিবীতে এ নিয়ে কোনো গবেষণা (স্টাডি) নেই। এজন্য আঠারো বছরের নিচে কাউকে টিকা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়নি। কিছুদিন পরই তথ্য আসবে, তখন এ ব্যাপারে সুপারিশ করা হবে, ডাক্তারদের বিশেষজ্ঞ কমিটি সুপারিশ করলে তখন ১৮ বছরের কম বয়সিদেরও কোভিড টিকা দেওয়া যায়।’

এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আরো বলেন, ‘কারো বয়সের ক্ষেত্রে এক বা দুদিনের কোনো বিষয় না। ১৮ বছরের নিচের বয়সের তরুণ-তরুণীরা চিকিৎসা শাস্ত্রের বিবেচনায় একটি বায়োলজিক্যাল গ্রুপ, তাদের টিকা দেওয়ার নির্দেশনা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে এখানো নেই। তাই টিকা দেওয়া যাবে না।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close