নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৪ আগস্ট, ২০২১

বিধিনিষেধ বাড়ল ১০ আগস্ট পর্যন্ত

করোনাভাইরাসের ভয়াবহ সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের জারি করা কঠোর বিধিনিষেধ আগামী ১০ আগস্ট পর্যন্ত বেড়েছে। পরে আগামী ১১ আগস্ট থেকে ধাপে ধাপে এই বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হবে। দোকানপাট ও অফিসণ্ডআদালত খুলে দেওয়া হবে, সীমিত পরিসরে চলবে গণপরিবহনও। তবে এর আগেই সব কর্মজীবী মানুষকে করোনার টিকা গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া মাস্ক না পরলে শাস্তির আওতায় আনতে পুলিশকে ক্ষমতা দেওয়া হবে। গ্রামে গ্রামে কমিটি করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে করণীয় নির্ধারণে সরকারের উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

বৈঠকের সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ১০ আগস্ট পর্যন্ত আমরা বিধিনিষেধ বৃদ্ধি করেছি। ১১ আগস্ট থেকে ইনশাআল্লাহ খুলবে। এরই মধ্যে কিছু শিল্পণ্ডকারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অন্যান্য কারখানাও আমরা খুলে দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ১১ আগস্ট থেকে সব দোকানপাট, যানবাহনও চলবে। তবে সব একত্রে না। আমরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধ করব, পালাক্রমে যাতে চলে।

উদাহরণ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘মনে করুন, গাজীপুর থেকে ১০০ গাড়ি আসে প্রতিদিন ঢাকায়। ১০০ না, ৩০টি আসুক বা ৫০টি আসুক। আজকে এগুলো যাবে, কালকে অন্যগুলো যাবে। এরকম তারা নির্ধারণ করে দেবে। শ্রমিক, পরিবহন নেতা এবং পরিবহন মালিকদের সঙ্গে বসে এটা ঠিক করা হবে।’

মোজাম্মেল হক বলেন, ‘লঞ্চ, স্টিমার আছে, রেল আছে, সেগুলোও চলবে। তবে অতীতে যে পরিমাণ চলেছিল, সে পরিমাণ যাতে না চলে, সীমিত আকারে চলে... কর্তৃপক্ষ সেগুলো নির্ধারণ করে জনগণকে অবহিত করবে। যেমন রেল হয়তো ১০টা চলত, এখন পাঁচটা চলবে। কোন সময়ে কোনটা ছাড়বে এবং কীভাবে যাবে, এগুলো নিজ নিজ মন্ত্রণালয় ও ডিপার্টমেন্ট জনগণকে অবহিত করবে, যাতে করে কোনো গ্যাপ না থাকে। করোনারোধী টিকা কার্যক্রম নিয়েও কথা বলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী। তিনি জানান, দেশে টিকার কোনো অভাব নেই। এজন্য টিকাগ্রহীতাদের বয়সসীমাও কমানো হয়েছে। অনেকটা হুশিয়ারির সুরে মন্ত্রী বলেন, ‘১১ আগস্ট থেকে ১৮ বছরের বেশি বয়সি কোনো লোক টিকা নেওয়া ছাড়া রাস্তায় নামতে পারবে না। নামলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে। আইন না মানলে অধ্যাদেশ জারি করে পুলিশকে শাস্তি প্রয়োগের ক্ষমতাও দিতে পারে সরকার।

আগামী সপ্তাহের মধ্যে এক কোটির বেশি লোককে টিকার আওতায় আনা হবে। টিকা নেওয়ার জন্য দৌড়াতে হবে না, ১৪ হাজার কেন্দ্রে একযোগে টিকা দেওয়া হবে। বয়স্ক মানুষকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে করোনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। সবাইকে সচেতন করতে হবে। সেজন্য গ্রামে ও মহল্লায় কমিটি গঠন করা হবে। মাস্ক ছাড়া কাউকে ঘরের বাইরে আসতে দেওয়া হবে না।’

ভ্যাকসিন না নিয়ে কেউ আর কর্মস্থলে আসতে পারবে না উল্লেখ করে মোজাম্মেল হক বলেন, ১১ আগস্টের পর ভ্যাকসিন ছাড়া কেউ মুভমেন্ট করলে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। অবশ্যই ভ্যাকসিন নিতে হবে। আইন না করলেও অধ্যাদেশ জারি করে হলেও শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হবে। এখন ওয়েবসাইটে ভ্যাকসিনের তথ্য আছে, কেউ মিথ্যা তথ্য দিতে পারবে না।

কবে নাগাদ বিধিনিষেধ তোলা হবে, এমন প্রশ্নে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘১১ আগস্ট থেকে ধাপে ধাপে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হবে। তবে সেটা কী উপায়ে তা পরবর্তী সময়ে জানানো হবে। করোনার বিস্তার রোধে সব স্তরে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতে সরকার আরো কঠোর হচ্ছে। মাস্ক না পরলে শাস্তির আওতায় আনতে পুলিশকে ক্ষমতা দেওয়া হবে। সেজন্য অধ্যাদেশ জারি করা হবে।

চলমান টিকা কার্যক্রম নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, আগামী সাত দিনে কোটি মানুষকে করোনার টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। গ্রামের বয়স্ক মানুষ বেশি মারা যাচ্ছে। তাই টিকা কার্যক্রম গ্রামে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ৭ আগস্ট থেকে প্রতিটি ইউনিয়নে করোনার টিকা দেওয়া হবে। টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে ৫০ বছরের বেশি বয়সিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

টিকার মজুদ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, সরকারের হাতে এখন সোয়া কোটি করোনার টিকা আছে। চলতি মাসে আসবে আরো অন্তত এক কোটি টিকা। কোভিডণ্ড১৯ণ্ডএর বিস্তার রোধে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে আগামী ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। বিধিনিষেধ চলমান অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার তা আরো বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হলো।

দেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। দ্বিতীয় ধাক্কায় চলতি বছরের জুন মাসে অবস্থা আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছালে ১ জুলাই থেকে সারা দেশে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। এ সময় গণপরিবহনের সঙ্গে বন্ধ রয়েছে সরকারিণ্ডবেসরকারি অফিস এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও। ঈদুল আজহা উপলক্ষে আট দিনের জন্য বিধিনিষেধ শিথিল করে সরকার। পরে ২৩ জুলাই থেকে আবারও বিধিনিষেধ জারি হয়েছে, যা ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলার কথা ছিল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close