প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ৩১ জুলাই, ২০২১

দিল্লি ঘুরে কী নিয়ে ফিরলেন মমতা

প্রত্যাশা ছিল, দিল্লি সফরে গিয়ে বিজেপিবিরোধী জোটের বিষয়টি অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে যাবেন পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূলের সুপ্রিমো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই প্রত্যাশাপূরণ হয়নি অতটা। কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দেখা হলেও বিজেপিবিরোধী দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেননি তিনি। গতকাল শুক্রবার বিকালে সেই অতৃপ্তি নিয়েই দিল্লি থেকে কলকাতায় ফিরেছেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা গত ২১ জুলাই শহীদ দিবসের ভাষণে জানিয়েছিলেন, দিল্লি গিয়ে তিনি শরদ পাওয়ারসহ অন্য নেতাদের সঙ্গে দেখা করবেন। সেদিন দিল্লিতে কনস্টিটিউশন ক্লাবে তৃণমূলের অনুষ্ঠানে শরদ পাওয়ার, রামগোপাল যাদব, পি চিদম্বরমরা এসেছিলেন। তারা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। মমতা তাদের অনুরোধ করেছিলেন, তারা যেন দিল্লিতে বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে একটা বৈঠক ডাকেন। সেই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীও থাকতে চেয়েছিলেন।

সেই আশা নিয়েই দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী চারদিন থাকলেন। কিন্তু বিরোধী-বৈঠক হয়নি। এমনকি শরদ পাওয়ারের সঙ্গেও মমতার কোনো বৈঠক হয়নি। মমতা যখন দিল্লিতে, তখন শরদ পাওয়ারও রাজধানীতে। তিনি মুম্বাইয়ে বলে এসেছিলেন, মমতার সঙ্গে দেখা করবেন। কিন্তু সেই সাক্ষাৎ হয়নি।

মুখ্যমন্ত্রীর সফরের আগে বলা হয়েছিল, সোনিয়া গান্ধী ও শরদ পাওয়ারের বাড়িতে নিজে যাবেন মমতা। বাকিদের সঙ্গে সাউথ অ্যাভিনিউয়ে ভাইপো অভিষেকের বাসায় বৈঠক হবে। দিল্লি এলে ভাইপোর বাসাতেই ওঠেন মমতা। সোনিয়া গান্ধীর বাড়িতে মমতা গিয়েছিলেন। বৈঠকও হয়েছে। সোনিয়া সেখানে রাহুলকেও রেখেছিলেন।

দিল্লিতে অভিষেকের ফ্ল্যাটে গিয়ে মমতার সঙ্গে দেখা করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, ডিএমকে নেত্রী কানিমোরি, তিন কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা, অভিষেক মণু সিংভি এবং কমল নাথ। এছাড়া জাভেদ আখতার ও শাবানা আজমিও দেখা করেছেন। আর প্রধানমন্ত্রী মোদি, কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহনমন্ত্রী নীতিন গড়করি এবং সোনিয়া গান্ধীর কাছে মমতা গেছেন। কিন্তু শরদ পাওয়ার, শিবসেনা, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, টিআরএস, আরজেডি, ওয়াইএসআর কংগ্রেসের মতো আঞ্চলিক প্রভাবশালী দলগুলোর কোনো নেতা মমতার সঙ্গে এবার দেখা করেননি।

মমতা নিজে যা-ই বলুন না কেন, তৃণমূল সংসদীয় দলের বৈঠকের পর কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, দল তাকেই প্রধানমন্ত্রী দেখতে চায়। কারণ তিনিই একমাত্র নরেন্দ্র মোদিকে হারাতে সক্ষম। দল চায়, তিনি বিরোধী জোটের নেতৃত্ব দিন। সেই নিরিখে মুখ্যমন্ত্রীর এবারের সফর কি সফল হলো? বিশেষ করে আঞ্চলিক দলগুলোর মনোভাবের নিরিখে?

এ বিষয়ে প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিষ মৈত্র বলেন, ‘অন্য কেউ এখন বিরোধী ঐক্যের চেষ্টা করছেন না। সেখানে দাঁড়িয়ে মমতা একটা চেষ্টা করলেন। কিন্তু যে সাড়া তিনি দিল্লিতে পেয়েছেন তা একেবারেই যথেষ্ট নয়। দেখা গেল, বিরোধী দলের নেতারা মমতার সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখলেন।’

মমতা নিজে অবশ্য দাবি করেছেন, ‘আমার সফর সফল হয়েছে। আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বিরোধী দলগুলো মিলে যদি একসঙ্গে লড়াই করি, তার থেকে ভালো আর কিছু হতে পারে না। সব নেতার সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। কারণ অনেকে সংসদে ব্যস্ত ছিলেন। করোনার জন্য সেন্ট্রাল হলেও যেতে পারিনি। আমাদের আগে দেশকে বাঁচাতে হবে।’

আরেক প্রবীণ সাংবাদিক দীপ্তেন্দ্র রায় চৌধুরীর মতে, ‘মমতা পশ্চিমবঙ্গে মোদি-শাহের বিরুদ্ধে জিতেছেন, সেটা নিঃসন্দেহে বড় ব্যাপার। কিন্তু সেটা একটা রাজ্যে জয়। অন্য আঞ্চলিক দলের নেতারা তাদের রাজ্য নিয়ে ব্যস্ত। তাই মমতার দিল্লি সফর অতি আগে ভাগেই হয়ে গেছে। কারণ লোকসভা নির্বাচনও এখনো তিন বছর দেরি।’ সূত্র : ডয়েচে ভেলে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close