প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৯ জুলাই, ২০২১

পাহাড় ধসে ৬ মৃত্যু পানিবন্দি ১৫ হাজার

গত দুদিনের ভারী বর্ষণে কক্সবাজারে আবার পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে ছয়জন মারা গেছেন। খালে পড়ে নিখোঁজ আছে তিন যুবক। লামায় পাহাড়ি ঢলের পানিতে নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১৫ হাজার। আরো পাহাড় ধসের আশঙ্কা করেছেন স্থানীয়রা। ঝুঁকিপূর্ণদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে সতর্ক করা হয়েছে। এদিকে টানা বৃষ্টিতে মোংলা পৌর শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর

কক্সবাজার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কক্সবাজারের টেকনাফ ও মহেশখালীতে পাহাড় ধসে একই পরিবারের ৫ জনসহ ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরই মধ্যে টেকনাফে শিশুসহ একই পরিবারের ৫ জন। এ ছাড়া ঈদগাঁও উপজেলায় খালে মাছ ধরতে গিয়ে তিন যুবক নিখোঁজ হয়েছে। গতকাল বুধবার ভোররাতে টেকনাফের হ্নীনায় পাহাড় ধসে শিশুসহ একই পরিবারের ৫ জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা সবাই ভিলেজার পাড়ার সৈয়দ আলমের সন্তান। তারা হলেন আবদুর শুক্কুর (১৬), মো. জোবাইর (১২) আবদুর রহিম (৫), কোহিনুর আক্তার (৯) ও জয়নবা আক্তার (৭)। পাহাড় ধসে মাটিচাপা পড়াদের প্রথমে দুজন ও পরে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। টেকনাফ হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, পাহাড় ধসের ঘটনায় ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সৈয়দ আলমের তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বাড়ির পাশের পাহাড় ধসে পড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, টানা ভারী বর্ষণে হ্নীলা ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তলিয়ে গেছে লাখ লাখ টাকার লবণ। ভেঙে গেছে শত শত ঘরবাড়ি।

এদিকে টেকনাফে পাহাড় ধসে নিহত পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আমিন আল পারভেজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সহায়তার টাকা তুলে দেন। এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার পারভেজ চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি, টেকনাফ মডেল থানার ওসি মো. হাফিজুর রহমান ও হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলীসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক রাজুয়ার ঘোনায় পাহাড় ধসে আলী হোসেন (৮০) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু বকর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়া কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় খালে মাছ ধরতে গিয়ে তিন যুবক নিখোঁজ হয়েছেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছে। গতকাল বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঈদগাঁও দরগাহপাড়া খালে মাছ ধরতে গিয়ে তারা পানির স্রোতে ভেসে যায়।

লামা প্রতিনিধি জানান, গত দুদিনের ভারী বর্ষণের ফলে উজান থেকে নেমে আসা সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলের পানি বান্দরবানের লামা পৌর এলাকাসহ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের নিচু এলাকায় ঢুকে পড়েছে। এতে কয়েক শ ঘরবাড়ি, দোকানপাট, সরকারি-বেসরকারি কার্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। মাতামুহুরী নদী, লামা খাল, বমু খাল, ইয়াংছা খাল, বগাইছড়ি খাল, ইয়াংছা খাল ও পোপা খালসহ বিভিন্ন স্থানের পাহাড়ি ঝিরিগুলোতে অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে বিভিন্ন পেশাজীবীর ১৫ হাজার মানুষ। কর্মহীন হয়ে বেকায়দায় পড়েছে ওইসব এলাকার শ্রমজীবী মানুষ। প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধসে প্রাণহানির আশঙ্কায় মঙ্গলবার সকাল থেকে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদে আশ্রয় নিতে বিভিন্ন মাধ্যমে মাইকিং শুরু করে উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলো।

গত সোমবার রাত থেকে প্রবল বর্ষণ শুরু হয়। আর টানা বর্ষণের ফলে উপজেলায় অবস্থিত নদী, খাল ও ঝিরির পানি ফুঁসে উঠে পৌরসভা এলাকার নয়াপাড়া, বাসস্ট্যান্ড, টিঅ্যান্ডটিপাড়া, বাজারপাড়া, গজালিয়া জিপ স্টেশন, লামা বাজারের একাংশ, চেয়ারম্যান পাড়ার একাংশ, ছোট নুনারবিলপাড়া, বড় নুনারবিলপাড়া, উপজেলা পরিষদের আবাসিক কোয়ার্টারসমূহ, থানা এলাকা, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়াংছা বাজারসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের কিছু নিচু এলাকা প্লাবিত হয়। অতি বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধস দেখা দিয়েছে। একই সময় উপজেলার বিভিন্ন স্থানের গ্রামীণ সড়কগুলো কোথাও ভাঙন দেখা দিয়েছে আবার কোথাও ধসে পড়েছে বলেও জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এদিকে খাল ও ঝিরির পানি বৃদ্ধি পেয়ে লামা পৌরসভা, লামা সদর, গজালিয়া, ফাইতং, ফাঁসিয়াখালী, আজিজনগর, সরই ও রূপসীপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানের ঘরবাড়ি প্লাবিতসহ প্রায় ১৫ হাজার মানুষ গৃহবন্দি হয়ে দুর্ভোগে রয়েছেন বলে জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

দুর্যোগকালীন জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) : বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে মঙ্গলবার বাঁশখালীর চাম্বল ইউনিয়নের বাংলাবাজার ঘাটের ৫ জেলে নিখোঁজ হয়েছে। জানা যায়, বাঁশখালী চাম্বল বাংলাবাজার এলাকার প্রায় ১৫-২০টি ফিশিং বোট বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে রওনা দিলে সকাল ৮টার দিকে হেফাজতুল ইসলামের মালিকানাধীন এফবি মুশফিক, মোহাম্মদ ফারুকের মালিকানাধীন একটি ফিশিং বোট, কেফায়েত উল্লাহর মালিকানাধীন আল্লাহর দান ফিশিং বোট, নন্না মিয়ার মালিকানাধীন ফিশিং বোট, মৌলভি আবুল খায়েরের মালিকানাধীন একটি ফিশিং বোট এবং আনিস মাঝির একটি ফিশিং বোট এখনো নিখোঁজ রয়েছে। তারা হলেন পশ্চিম চাম্বল এলাকার মৃত আহমদ উল্লাহর ছেলে আনিস মাঝি, মৃত নুর মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ আলী, শীলকূপ এলাকার মৃত মফিজের ছেলে মিয়া, আস্করিয়া পাড়ার আমির হোসেনের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন ও কুতুবদিয়া এলাকার ছৈয়দ আলম।

চাম্বল বাংলাবাজার ফিশিং বোট মালিক সমিতির সহ-সম্পাদক মো. আকতার বলেন, ‘ঝড়ের কবলে পড়া ফিশিং বোটগুলোর মধ্যে আনিস মাঝির ফিশিং বোট ও নন্না মিয়ার ছেলে এখনো পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছে। তা ছাড়া আরো কয়েকটি ফিশিং বোটের লোকজনের খোঁজ মিলছে না।’ এ ব্যাপারে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে বাঁশখালীর চাম্বল বাংলাবাজার এলাকার ৬টি ফিশিং ট্রলার ঝড়ের কবলে পড়ে নিখোঁজ হয়েছে।’ চট্টগ্রাম কোস্টগার্ডের লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. হাবীবুর রহমান জানান, ‘আমরা বঙ্গোপসাগরে ঘটনাস্থলের লোকেশন দেখে উদ্ধার তৎপরতা অভিযান চালাচ্ছি।’

মোংলা (বাগেরহাট) : লঘুচাপের প্রভাবে মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে মোংলা পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পর্যাপ্ত ড্রেনেজব্যবস্থা না থাকায় রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটে হাঁটুপানি জমায় ঘর ছেড়ে কেউ কেউ রাস্তার ওপরে অবস্থান নিয়েছেন। 

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, অতিবৃষ্টিতে এখানকার প্রায় সাড়ে ৪০০ চিংড়িঘের তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে ঘেরের বাগদা চিংড়ি ও সাদা মাছ। এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন স্থানীয় চিংড়িচাষিরা।

পটুয়াখালী : উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ফের একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে গত মঙ্গলবার দুপুর থেকে পটুয়াখালীতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। সাগর ও নদীর পানি ৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চতায় বৃদ্ধি পেয়েছে। পায়রা বন্দরকে স্থানীয় তিন নম্বর সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। মঙ্গলবার রাতে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় জেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় গাছ পড়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন বন্ধ রয়েছে।

পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার পর্যন্ত ২৫১.৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এ বৃষ্টিপাত ২০০৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত বলে আবহাওয়া অফিস নিশ্চিত করেছে।

এদিকে সাগর উত্তাল থাকায় মাছ ধরা ট্রলারসমূহকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে চলাচল করতে বলা হয়েছে। এ কারণে জেলার মৎস্য বন্দরগুলোতে মাছ ধরার ট্রলারসমূহ নোঙর করে আছে। এদিকে টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে অনেক নিচু এলাকা। এর ফলে আমনের বীজতলা, সবজির খেতসহ বিভিন্ন এলাকার মাছের ঘের ডুবে রয়েছে। শহর এলাকাগুলোর সড়কেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close