গাজী শাহনেওয়াজ

  ২৯ জুলাই, ২০২১

প্রতিদিনের সংবাদকে অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা

টিকা ও পরীক্ষা সহজ করতে হবে

সরকারের করোনা-সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শ কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেছেন, আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত করোনা নিয়ন্ত্রণে যে কঠোর লকডাউন চলছে তা কোনো অবস্থায় শিথিল করা যাবে না। এই সময়ে যারা স্বাস্থ্যবিধি মানবে না তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি করোনা পরীক্ষা ও টিকাপ্রাপ্তি সহজ করতে হবে।

গতকাল বুধবার প্রতিদিনের সংবাদকে টেলিফোনে সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি। বিএসএমএমইউর সাবেক প্রোভিসি ও নবজাতক বিভাগের বতর্মান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সহিদুল্লা আরো বলেন, বর্তমানে নভেল করোনা-ভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ও মৃত্যুর যে ঊর্ধ্বগতি বিরাজ করছে তা উদ্বেগজনক। কারণ প্রতিদিনই রেকর্ড হচ্ছে শনাক্ত ও মৃত্যুর। পাশাপাশি হাসপাতালগুলো রোগীতে পরিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে।

লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন হলে সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি হতো বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি বলেন, সর্বোচ্চ লকডাউনের মধ্যেও যথেষ্ট সংখ্যক মানুষ বিভিন্ন অজুহাতে বাসা থেকে বের হচ্ছে। আবার অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। এ ফলে রোগটির বিস্তার ঘটছে। কারণ করোনা একজন থেকে অন্যজনের মধ্যে ছড়িয়ে যায়। যদি কোনো সংক্রমিত লোক স্বাস্থ্যবিধি না মানে এবং যিনি সংক্রমিত নয়; তিনিও যদি স্বাস্থ্যবিধি না মানে তাহলে করোনা ছড়িয়ে পড়ে।

করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে লকডাউন সঠিকভাবে বাস্তবায়নের বিষয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রশাসনের প্রধান কাজ হবে লকডাউন নিশ্চিত করা। এটার জন্য যত ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, সেটা নিতে হবে। দেখা যায়, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের মালিক তার প্রতিষ্ঠান খোলা রাখছেন এবং তাদের কর্মচারীরা বাধ্য হয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছে সেটাতো হওয়ার কথা নয়। লকডাউনের মধ্যে খোলা রাখার কারণে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো আইনের আওতায় আনা দরকার। প্রয়োজনে যদি কেউ বের হয় তাহলে তাদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে শতভাগ। এ নিয়মের ব্যত্যয় হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসবে।

করোনার নমুনা সংগ্রহ আরো বাড়াতে হবে বলে মনে করেন ডা. সহিদুল্লা। তিনি বলেন, বেশি বেশি পরীক্ষা করালে সংক্রমিত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা যাবে। করোনা আক্রান্তরা চিহ্নিত না হলে তারা অন্যের সঙ্গে মেলামেশা করবে এবং সংক্রমণ ছড়াবে। আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হলে তিনি নিজেকে আইসোলেশন করবে। এতে করোনার বিস্তার রোধ হবে।

টিকা প্রসঙ্গে সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বিএসএমএমইউর সাবেক এই প্রোভিসি বলেন, টিকার সংকট কেটে যাওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক। সরকার একটা ভালো কাজ করেছে। এই টিকাগুলো যাতে সবাই সহজে পেতে পারে এবং সুশৃঙ্খলভাবে দেওয়া যায় এটিও নিশ্চিত করতে হবে। করোনার পরীক্ষা সহজ, টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিত, লকডাউন সঠিকভাবে প্রতিপালন এবং স্বাস্থ্যবিধি মানায় সচেতন করার বিষয়গুলো নিশ্চিত হলে এক-দুই মাসে করোনার ঊর্ধ্বগতিতে লাগাম টানা সম্ভব হবে।

করোনার চিকিৎসাসেবা প্রসঙ্গে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, চিকিৎসাসেবা নেওয়ার জন্য হাসপাতালে যেতে হবে। সেখানে শয্যার প্রাপ্তিটাও নিশ্চিত করতে হবে। ওষুধসহ আনুষঙ্গিক সাপোর্টও নিশ্চিত করতে হবে।

কারিগরি পরামর্শক কমিটির প্রধান ডা. সহিদুল্লা আরো বলেন, দ্রুত নতুন নার্স ও চিকিৎসক নিয়োগ করা প্রয়োজন। কারণ করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে দিতে পুরোনোরা ক্লান্ত। তাদের বিশ্রামের প্রয়োজন। নতুন নার্স ও চিকিৎসক নিয়োগ হলে নতুন ও পুরোনো মিলিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে।

জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি মনে করে করোনার এই ঊর্ধ্বগতি পরিস্থিতিতে লকডাউন কোনো অবস্থায় শিথিল করা যুক্তিসঙ্গত হবে না। বিধিনিষেধ শিথিল করলে সংক্রমণের ঝুঁকিটা বেড়ে যাবে। আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোর বিধিনেষেধ চালিয়ে যেতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close