নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৮ জুন, ২০২১

ঘর পাচ্ছে আরো ৫৩ হাজার গৃহহীন পরিবার

রবিবার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

মুজিববর্ষে ভূমি ও গৃহহীন সব অসহায় মানুষকে নতুন ঘর উপহার দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রী দিয়েছিলেন এর আওতায় আরো সাড়ে ৫৩ হাজার পরিবার নতুন ঘর পেতে যাচ্ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউস এ তথ্য জানান। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের করবী হলে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো. আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকি।

মুখ্যসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে আগামী রবিবার দ্বিতীয় ধাপে ভূমিহীন, গৃহহীন এসব পরিবারকে বিনামূল্যে দুই শতক জমিসহ সেমিপাকা ঘর প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। ডিসেম্বরের মধ্যে আরো এক লাখ ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে বিনামূল্যে জমিসহ ঘর প্রদানের পরিকল্পনার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব।

মুজিববর্ষে কেউ গৃহ ও ভূমিহীন থাকবে না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ঘোষণা বাস্তবায়নে ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার’ হিসেবে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে এরই মধ্যে ২ শতাংশ জমির সঙ্গে ঘর পেয়েছে সারা দেশের ভূমি ও গৃহহীন প্রায় ৭০ হাজার পরিবার। একসঙ্গে এত মানুষকে বিনামূল্যে বাড়িঘর দেওয়ার ঘটনা শুধু বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীতে নজিরবিহীন বলেও মন্তব্য করেন আহমদ কায়কাউস।

সরকারের এই উদ্যোগের সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও যুক্ত হয়েছে জানিয়ে মুখ্যসচিব বলেন, অসহায় মানুষকে এভাবে ঘর দেওয়াকে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল’ বলা যায়। বিশ্বে এটা নতুন মডেল, আগে কখনো কেউ এটা ভাবেননি।

এক প্রশ্নের জবাবে আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘গৃহনির্মাণের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনিয়মের অভিযোগ এলে সেখানে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এখানে অনিয়মের বিষয়ে আমাদের অবস্থান জিরো টলারেন্স।’

জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় আশ্রয়ণ হিসেবে কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল প্রকল্পের কথা তুলে ধরে মুখ্যসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে বিশ্বের সর্ববৃহৎ একক জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনর্বাসন প্রকল্প খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রথম পর্যায়ে নির্মিত ১৯টি বহুতল ভবনে ৬০০ জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে একটি করে ফ্ল্যাট প্রদান করেন।

খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পে দ্বিতীয় পর্যায়ে ১১৯টি বহুতল ভবন নির্মাণ করে আরো ৩ হাজার ৮০৯ জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে পুনর্বাসনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানান মুখ্যসচিব।

দেশে ভূমি ও গৃহহীন পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ‘আশ্রয়ণ’ নামে প্রকল্প নেওয়া হয়, যা প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। এ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ থেকে ২০২১ সালের মে পর্যন্ত ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৫৬২ ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়।

এরপর প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নে ‘মুজিববর্ষ উপলক্ষে দেশের সব ভূমি ও গৃহহীনের জন্য গৃহ প্রদান নীতিমালা-২০২০’ প্রণয়ন করা হয়। এ লক্ষ্যে গত বছর জুনে সারা দেশে দুই শ্রেণিতে ভূমি এবং গৃহহীন পরিবার ও যাদের ১ থেকে ১০ শতাংশ জমি আছে কিন্তু ঘর নেই বা জরাজীর্ণ ঘর রয়েছে এমন ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬২২ পরিবারের তালিকা করা হয়। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নেওয়া হয় তাদের জীবন বদলের উদ্যোগ।

ঘর সংস্কারের প্রয়োজন হলে কে করে দেবে জানতে চাইলে মুখ্যসচিব বলেন, ‘দুর্যোগ মোকাবিলা করার মতো সহনীয় করে এসব ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ছোট ছোট কিছু সংস্কারের প্রয়োজন হলে এ ব্যাপারে আমাদের কোনো বরাদ্দ নেই। তবে বড় ধরনের কোনো সমস্যা হলে, সে বিষয়টা প্রধানমন্ত্রী দেখবেন।’

তিনি বলেন, এই ঘর ও জমি পাওয়ার পর ব্যক্তিটি কিন্তু আর অসহায় নেই। বলা যায় সে লাখোপতি। সে অবস্থায় থেকে নিজেকে আরো স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য প্রশিক্ষণ ও ঋণের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। সুতরাং এভাবে নিজের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটিয়ে যদি ঘরকে নিজের মতো করে নির্মাণ করে নিতে চায়, সেটা পারবে কারণ তাকে জমির দলিল ও নামজারি করে দেওয়া হয়েছে।

এসব ঘর বা জমি বিক্রি সম্ভব কি না এ প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জাল হোসেন জানান, এই জমির বিষয়ে নিরুৎসাহিত করার জন্য দলিলে মুজিববর্ষের লোগো দেওয়া আছে এবং বিষয়টা উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বলা আছে। কেউ জমি বা ঘর বিক্রি করতে গেলে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা আপাতত বিষয়টাতে নিরুৎসাহিত করবেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close