নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ মে, ২০২১

সাংবাদিকদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী

‘সরানো’ নথি বাইরে গেলে দেশের ক্ষতি হতো

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে নির্যাতন করা হয়নি দাবি করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, প্রথম আলোর ওই জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক টিকা আমদানি সংক্রান্ত এমন কিছু নথি ‘সরিয়েছিলেন’ যেগুলো প্রকাশ হলে ‘দেশের ক্ষতি’ হতে পারত। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে আগারগাঁওয়ে একনেক সভা শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব সাংবাদিক রোজিনার গলা চেপে ধরেছিলেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিষয়টি অবশ্যই তদন্ত করে দেখা হবে। তবে আমি এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি একজন অতিরিক্ত সচিব। আমাকে তিনি টেলিফোনে বলেছেন, তিনি রোজিনাকে শারীরিক নির্যাতন করেননি। বরং রোজিনা তার ওপর হামলা করেছিলেন। ঘটনার পর রোজিনাকে যখন আটকানোর চেষ্টা করা হয় তখন তিনি ওই অতিরিক্ত সচিবকে খামচি দিয়েছেন, থাপ্পড় মেরেছেন। এরপর পুলিশ এলে তাকে পুলিশের কাছে তুলে দেওয়া হয়।’ মন্ত্রী বলেন, ‘সাংবাদিক রোজিনাকে কোনো শারীরিক নির্যাতন করা হয়নি। সাংবাদিক রোজিনা যে কাজটি করেছেন তা উচিত হয়নি। তিনি অন্যায় করেছেন। সাংবাদিক রোজিনার আগের কোনো সংবাদের জন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’

জাহিদ মালেক বলেন, ‘সাংবাদিক রোজিনাকে ছয় ঘণ্টা আটকে রাখা হয়েছে এটা ভুল। ঘটনার সময় সেখানে বিভিন্ন পদস্থ পাঁচ-ছয়জন উপস্থিত ছিলেন। ঘটনার পর সেখানে পুলিশ এসেছে। ঘটনার আধাঘণ্টার মধ্যে পুলিশ এসেছে। আমার আগে এ খবর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেনেছেন। বরং রোজিনা সেখানে কাউকে সাহায্য করছিলেন না। তাকে জোর করে কেউ রুমে নিয়ে যাননি।’

এজাহারে বলা হয়েছে, রোজিনা যেসব নথির ‘ছবি তুলেছেন’, তার মধ্যে ‘টিকা আমদানি’ সংক্রান্ত কাগজপত্রও ছিল। সে প্রসঙ্গ টেনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই জিনিসটাও দুঃখজনক। কেননা এই ফাইলগুলো ছিল টিকা সংক্রান্ত। আমরা যে রাশিয়ার সঙ্গে টিকার চুক্তি করছি, চীনের সঙ্গে টিকার চুক্তি করছি। সেগুলো নন ডিসক্লোজার আইটেম। আমরা রাষ্ট্রীয়ভাবে বলেছি, আমরা এটা গোপনে রাখব, এগুলো বলব না। তো সেইগুলো যদি বাইরে চলে যায়, তাহলে রাষ্ট্রীয়ভাবে আমরা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলাম এবং আমরা টিকা নাও পেতে পারি। এতে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য বিরাট ক্ষতি হতে পারে। এগুলো সিক্রেট ডকুমেন্ট, বাইরে যাওয়া ঠিক হয়নি।’

রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে আটকে রেখে ‘শারীরিকভাবে হেনস্তা’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার স্বামী মনিরুল ইসলাম মিঠু।

ওই অভিযোগ অস্বীকার করে জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেটা শুনলাম, তাকে অনেকক্ষণ আটকাইয়ে রাখছে। এটা পুলিশ ছিল- তিনি নিজেই শুয়ে পড়ছেন, বসে পড়ছেন। তাকে নিতে পারছিলেন না। শারীরিকভাবে কোনো নির্যাতন বা আঘাত করা হয়নি। এটা সঠিক নয়।’

রোজিনা ইসলাম ওই অফিস থেকে কোনো নথি সরানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আর তার সহকর্মীরা বলেছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন করায় এখন ‘অন্যায়ের’ শিকার হচ্ছেন এই সাংবাদিক।

এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্নীতির রিপোর্টিংয়ের জন্য তো আজকের ঘটনা না। ওটা ওখানের ঘটনার, এর ওপরই পরবর্তী ঘটনা ঘটছে। সিনিয়র অ্যাডিশনাল সেক্রেটারি ও ডেপুটি সেক্রেটারি লেভেলের দুজন ছিলেন, প্রাথমিকভাবে তারাই ডিল করছেন। পরে যখন রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তার বিষয় আসছে, তখন তারা পুলিশ ডেকেছে।’

বর্তমান সরকার যেখানে দুর্নীতির তথ্য প্রকাশের জন্য সাংবাদিকদের পুরস্কৃত করার নিয়ম করেছে, সেখানে রোজিনার বিরুদ্ধে কেন ঔপনিবেশিক আমলের ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস’ আইনে মামলা দেওয়া হলো- সেই প্রশ্ন রেখেছিলেন একজন সাংবাদিক।

উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো আইনজ্ঞ না। আইনের বিষয়ে কিছু বলব না।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close