প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৯ মে, ২০২১

গাজায় মৃত্যু বেড়ে ২১৩

যুদ্ধবিরতির চাপে ইসরায়েল

ফিলিস্তিনের গাজায় মুহুর্মুহু বোমা হামলা চালিয়ে গত এক সপ্তাহে ২১৩ জনকে হত্যা এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের পর যুদ্ধবিরতির চাপে পড়েছে ইসরায়েল। গতকাল মঙ্গলবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ফোন করে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এর আগে যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ আল-সিসি। ইসরায়েলি সহিংসতার দ্রুত শেষ দেখতে চেয়ে বিবৃতি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এ ছাড়া জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মারকেল এবং জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ দ্রুত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে গাজায় ইসরায়েলি নৃশংসতার বিরুদ্ধে গতকালও যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ হয়েছে। তবে সবকিছু উপেক্ষা করে বিমান থেকে বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গতকাল তাদের বোমায় ধ্বংস হয়েছে রেড ক্রিসেন্টের কার্যালয়সহ বেশ কিছু ভবন। গাজার গাজায় হামলার পাশাপাশি ইসরায়েলি সেনারা লেবাননেও বোমা নিক্ষেপ করেছে। তাদের দাবি, লেবানন থেকে রকেট হামলার জবাব দিয়েছে তারা। এদিকে ইসরায়েলে পাল্টা রকেট হামলা চালিয়ে যাচ্ছে হামাস যোদ্ধারা। তাদের হামলায় গতকাল ইসরায়েলে দুজন নিহত হয়েছে। তারা থাই কর্মী বলে জানা গেছে। খবর আলজাজিরা, বিবিসি ও রয়টার্সের।

গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ভোরের দিকে কয়েক দফায় বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বিমান। এতে ১৩ জনের মতো ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শেষবেলায় সীমান্তে এক ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনারা। সেনাদের দাবি, ওই ব্যক্তি হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ নিয়ে গত ১০ মে সংঘাত শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ২১৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এরমধ্যে ৬১ জন শিশু রয়েছে। নারীও রয়েছে অর্ধশতাধিক। আহত হয়েছে দেড় হাজারের বেশি মানুষ।

ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় অবস্থিত কাতারি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (কিউআরসিএস) কার্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে দুই ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরো ১০ জন আহত হয়েছে।

কিউআরসিএসের সেক্রেটারি জেনারেল আলী বিন হাসান আল হামদানি ওই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এটা পরিষ্কারভাবে জেনেভা কনভেনশনের লঙ্ঘন।

ফিলিস্তিনে টানা আট দিন ইসরায়েলি হামলার পর অবশেষে সেখানে ‘যুদ্ধবিরতির’ আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইসরায়েল সরকার এবং হামাসের প্রতি এ আহ্বান জানান তিনি। টেলিফোন করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে বাইডেন বলেছেন, গাজায় সংঘাত বন্ধ করতে তার দেশ মিসরসহ তিনটি দেশের সঙ্গে কাজ করছে।

হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নির্দোষ নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে ইসরায়েলকে তাগিদ দিয়েছেন বাইডেন। বাইডেন এবং নেতানিয়াহু গাজায় হামাস এবং অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা করেছেন।’

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘প্রেসিডেন্ট বাইডেন যুদ্ধবিরতির পক্ষে তার অবস্থানের কথা জানিয়েছেন এবং সেদিক থেকে মিসর ও অন্যান্য মিত্রের সঙ্গে তার দেশের আলোচনার বিষয়টিও তুলে ধরেছেন।’

এর আগে গাজায় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সহিংসতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে যুদ্ধবিরতি চেয়েছে ফ্রান্স ও মিসর। এক বিবৃতিতে ফ্রান্সের এলিসি প্যালেস জানিয়েছে, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও আবদুল ফাত্তাহ আল-সিসি চলমান সহিংসতা এবং বেসামরিক জনগণের অবস্থা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তারা ‘দ্রুত যুদ্ধবিরতি’ বাস্তবায়নের জন্য একমত এবং মিসর, কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের সংকট নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। মিসরের প্রেসিডেন্ট সুদানের একটি শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে প্যারিসে অবস্থান করছেন।

ইসরায়েলি সহিংসতার দ্রুত শেষ দেখতে চান পুতিন : ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের অব্যাহত সংঘর্ষ ও হতাহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মঙ্গলবার বিশ্বের রাষ্ট্রদূতগুলোকে নিয়ে এক সভায় তিনি আরো বলেন, এই সংঘাত শেষ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়গুলোকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমাধান নিতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

পুতিন বলেন, ‘গত কয়েক দিনে আমরা মধ্যপ্রাচ্যের ক্রমবর্ধমান সহিংসতার প্রত্যক্ষদর্শী। আমরা দেখেছি ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সহিংসতায় বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে; যাদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু। আমরা এ পরিস্থিতির দ্রুত শেষ দেখতে চাই।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close