গাজী শাহনেওয়াজ

  ১৯ মে, ২০২১

স্থগিত ইউপি নির্বাচন মের শেষে

আরেকটি ধাপের ইউপি ও সংসদীয় উপনির্বাচনের তফসিল হতে পারে আজ

নভেল করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার পাঁচ শতাংশের নিচে অবস্থান করছে। গত কয়েক দিন এই ধারা অব্যাহত রয়েছে। নির্বাচন আয়োজনের অনুকূল এই পরিস্থিতিতে স্থগিত ৩৭১ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন মে মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

পাশাপাশি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন এবং নতুন আরেকটি ধাপের ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠানের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। এ লক্ষ্যে আজ বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে বিকাল ৩টায় কমিশন সভায় বসবে। এ সভার সার্বিক পরিস্থিতি আলোচনা করে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা দেওয়া হবে। কমিশন সভার পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে।

এদিকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এগিয়ে রাখতে গতকাল মঙ্গলবার রাজশাহী অঞ্চল দিয়ে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সিইসি।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, স্থগিত ইউপি নির্বাচনের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে কমিশন। এই জন্য কমিশনের সভা আহ্বান করা হয়েছে। আজ বুধবার বিকাল ৩টায় এ সভায় আলোচনা করে স্থগিত নির্বাচন, সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ইউপির ফ্রেশ (নতুন) আরেকটি তফসিল দেওয়া হতে পারে। আশা করছি, কমিশন সভার পর সাংবাদিকদের ব্রিফিং করা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির আরেকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক ধরেই মে মাসের শেষে স্থগিত ৩৭১ ইউপির ভোট সম্পন্ন করা হবে। স্থগিত সময় ধরে পুনঃতফসিল দিয়ে এ নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে। পাশপাশি নতুন আরো কিছু ইউপির নির্বাচনের তফসিল একসঙ্গে ঘোষণা করা হবে। আর সংসদের উপনির্বাচনগুলোও দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে।

ইসির সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১ এপ্রিল কমিশনের সভায় গত ১১ এপ্রিলের ইউপি ভোট অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কোভিড পরিস্থিতির দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় কমিশন ইউপি নির্বাচন স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছিল। ইউনিয়ন পরিষদ আইন-২০০৯ এর ২৯(৩) ধারা অনুযায়ী, নির্বাচন করা সম্ভব হবে না বলে স্থানীয় সরকার বিভাগকে জানিয়ে দেয় ইসি। পাশাপাশি আইনের ২৯(৫) ধারা অনুযায়ী, পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা এবং প্রাসঙ্গিক অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টিও জানানো হয়।

জানা গেছে, ইসির চিঠি পাওয়ার পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে আইনের ২৯(৫) ধারার বিধান অনুযায়ী, বিদ্যমান ইউপিকে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আইনের এ ধারায় বলা হয়েছে, ‘দৈব-দুর্বিপাকজনিত বা অন্যবিধ কোনো কারণে নির্ধারিত পাঁচ বছর মেয়াদের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে, সরকার লিখিত আদেশ দিয়ে, নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত কিংবা অনধিক ৯০ দিন পর্যন্ত, যা আগে ঘটবে, সংশ্লিষ্ট পরিষদকে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ক্ষমতা প্রদান করতে পারবে।’ সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, মেয়াদ শেষে বিদ্যমান পরিষদগুলোর সর্বোচ্চ ৯০ দিন দায়িত্ব পালনের সুযোগ রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১১ এপ্রিলের ভোট স্থগিতের পর নির্বাচন কমিশন পর্যায়ে ইউপি নির্বাচন নিয়ে নতুন করে কোনো আলোচনা হয়নি। লকডাউনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন তার মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে দুই দফায় জুম সভা করলেও কোনো সভার আলোচ্য সূচিতে বিষয়টি ছিল না। এ নিয়ে কোনো কমিশনার বা কর্মকর্তাও কথা বলেননি। গতকাল ইভিএমের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন হলেও সেখানে এসব নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়নি। তবে আগামী বছরের বাজেটে ইউপি নির্বাচনের জন্য বরাদ্দ রাখার বিষয়ে বৈঠকে কথা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে ভেতরে ভেতরে স্থগিত নির্বাচন নিয়ে কমিশন ও সচিবালয়ের নীতি-নির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা চলে। এরই মধ্যে করোনা পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে নেমে এসেছে। কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ফাঁকা। হাসপাতালের সাধারণ বেডও খালি। সরকারের দফায় দফায় কঠোর বিধিনিষেধের ফলে কোভিড পরিস্থিতি এখন সহনীয় পর্যায়ে। এই পরিস্থিতিতে স্থগিত নির্বাচন সম্পন্ন করতে তৎপর ইসি। এর আগে গত ১২ মে লকডাউনের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ইসি সচিবালয়ের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অফিস করেন। এ দিন তারা অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করে ইউপিসহ অন্যান্য নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন। তারা আইনি বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করেন। পরে সব নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে তারা আজ (১৯ মে) কমিশন সভার সিদ্ধান্ত নেবেন।

স্থানীয় সরকার পরিষদের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচনের হিসাব পরিষদের মেয়াদের সঙ্গে সম্পর্কিত। তবে ইউপি নির্বাচন পূরবর্তী নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত। নির্বাচন বিষয়ে আইনের ২৯ (৩) ধারায় বলা আছে ‘পরিষদ গঠনের জন্য কোনো সাধারণ নির্বাচন ওই পরিষদের জন্য অনুষ্ঠিত পূর্ববর্তী সাধারণ নির্বাচনের তারিখ হতে পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।’ অর্থাৎ বর্তমান পরিষদের নির্বাচন যে তারিখে হয়েছে, তা হতে পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে নতুন ভোট হতে হবে।

এ হিসাবে তফসিল ঘোষিত ৩৭১ ইউপি ছাড়াও দেশের সাড়ে ৪ হাজার ইউপির বেশির ভাগেরই ভোটের সময় পার হয়ে গেছে। ২০১৬ সালের ২২ মার্চ প্রথম দফায় ৭২৫টি, ৩১ মার্চ ৬৪৪টি, ২ এপ্রিল ৬১৫টি, ৭ মে ৭০৩টি, ২৮ মে ৭১৮টি এবং ৪ জুন ৬৯৯টি ইউপির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই হিসাবে বেশির ভাগ ইউপির নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় পার হয়েছে।

‘ইউনিয়ন পরিষদ আইন ২০০০’ এর ১০১ ধারায় আইনের অসুবিধা দূরীকরণের বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘এই আইনের বিধানাবলি কার্যকর করবার ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা দেখা দিলে সরকার, ওই অসুবিধা দূরীকরণার্থে, আদেশ দ্বারা, প্রয়োজনীয় যে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close