প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৮ মে, ২০২১

মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী

ঝড় মাথায় নিয়েই এসেছিলাম সেদিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ, এটা স্বাধীনই থাকবে। জাতির পিতাকে হত্যার পর তৎকালীন সরকার বাধা দিয়েছিল, যাতে আমি দেশে ফিরতে না পারি। কিন্তু সব ঝড়-ঝাপটা অতিক্রম করেই ফিরেছি এবং আজকের এই অবস্থানে আসতে পেরেছি। আজ আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে, দেশের এই ইতিহাস আর কেউ কোনো দিন মুছতে পারবে না।’ গতকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকের সূচনা বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবই। অনেক ‘ঝড়-ঝাপটা’ পেরিয়ে বাংলাদেশ যেখানে পৌঁছেছে, সেই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছি। সবকিছু মিলিয়ে অনেক ঝড়-ঝাপটা পার হয়েই এই জায়গায় আসতে পেরেছি। এটাই সবচেয়ে বড় কথা।’

বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের যেদিন হত্যা করা হয়, সেসময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও ছোট বোন শেখ রেহানা। বিদেশে দীর্ঘ নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা। তার আগেই ওই বছর ফেব্রুয়ারিতে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। শেখ হাসিনা ভারতের নয়াদিল্লি থেকে দেশে ফিরলে প্রতিকূল পরিস্থিতি উপেক্ষা করে সেদিন তেজগাঁও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লাখো জনতা তাকে স্বাগত জানায়। সেদিনের কথা স্মরণ করে দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং দলীয় নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী, যিনি এক যুগ ধরে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেদিন অনেক ঝড়-ঝাপটা এবং বাধা অতিক্রম করেই আমাকে দেশে আসতে হয়েছিল। তখনকার সরকার কিছুতেই আমাকে আসতে দেবে না, আমার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করেছিল। চিঠি পাঠিয়ে বিভ্রান্ত করার অনেক চেষ্টাই করা হয়েছিল। আমি জানতাম জাতির পিতার হত্যাকারীরাই তখন ক্ষমতায়, খুনিদের ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছিল। ওই অবস্থায় আমি চলে এসেছি। কিছুই চিন্তা করিনি। কারণ, এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে পারে না। এই স্বাধীনতাকে আমার সফল করতেই হবে, এভাবেই একটা প্রতিজ্ঞা আমার আর রেহানার সব সময় ছিল।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এসেছিলাম ঝড় মাথায় নিয়ে। সেদিন ৬০ মাইল বেগে ঝড় হচ্ছিল, তখন আমি ট্রাকে। আর হাজার হাজার মানুষ রাস্তায়। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই তখনকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের; যারা আমার অবর্তমানে আমাকে সভাপতি নির্বাচন করেন এবং আমি যেটা জানতাম না। তারপর থেকে যারা আমার সঙ্গে ছিলেন এবং এ দেশের জনগণ, যে জনগণের শক্তিটা হচ্ছে বড় শক্তি। কারণ, আমি যখন বাবা-মা, ভাই-বোন হারিয়ে এ দেশে এসেছি। গ্রামগঞ্জে যেখানেই গিয়েছি, সেখানেই ভালোবাসা পেয়েছি। অনেক স্নেহ, দোয়া পেয়েছি। কাজেই আমার মনে হয়, ওই শক্তিই সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার দলের অনেকে আজ নেই। সেসময় যারা দলের জন্য কাজ করেছেন তাদের অনেককেই হারিয়েছি। তার পরও যারা আছেন সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। আমার ফিরে আসার ব্যাপারে সবচেয়ে আগে স্টেটমেন্ট দেয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ওবায়দুল কাদের। সে তখন ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট। যুবলীগের পক্ষ থেকে আমার আসার ব্যাপারে সোচ্চার ছিলেন আমির হোসেন আমু। আর পার্লামেন্টে কথাটা তুলেছিলেন মিজানুর রহমান চৌধুরী। যদিও তিনি পরে অন্য দলে চলে যান। কিন্তু তিনিই প্রথম আমার ও রেহানার দেশে আসার বিষয়টা তুলেছিলেন।’

এদিকে, মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (এসএসএফ) আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই আইনের কারণে বিশেষ বাহিনীর নিরাপত্তা পাবেন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যরা। ফলে ক্ষমতায় না থাকলেও শেখ হাসিনাসহ বঙ্গবন্ধুর পরিবারের অন্য সদস্যরা এই নিরাপত্তার সুবিধা পাবেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এই আইনে নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি বিদেশি গুরুত্বপূর্ণ অতিথিদের দৈহিক নিরাপত্তা দেবে এসএসএফ। এর বাইরে জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদেরও দৈহিক নিরাপত্তা দেবে এই বিশেষ বাহিনী। জাতির পিতার পরিবারের সদস্য হিসেবে তার দুই মেয়ে, তাদের সন্তান ও তাদের সন্তানরা বিশেষ বাহিনীর এ নিরাপত্তা সুবিধা পাবেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘২০২০-২১ অর্থবছরে আমাদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ২২৭ ডলারে উন্নীত হয়েছে। এর আগে মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৬৪ ডলার। তাই এই প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।’

আনোয়ারুল ইসলাম আরো বলেন, প্রতি ডলারের বিপরীতে টাকার মান ৮৪.৮১ ধরে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৮৭৩ টাকা হিসাব করা হয়েছে। দেশের জিডিপিও বৃদ্ধি পেয়েছে। জিডিপি বৃদ্ধি পেয়ে ২৭,৯৬,৩৫৮ কোটি টাকা থেকে এখন ৩০,৮৭,৩০০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এটি অত্যন্ত ভালো অর্জন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪০তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এই শুভ দিনেই অর্জনটি প্রকাশ পেল। সভায় স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানানো হয়।

এ ছাড়া ‘ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন, ২০২১’-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হলে ব্যাংক কর্মকর্তাদের বড় অঙ্কের জরিমানার মুখে পড়তে হবে। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে হচ্ছে ফৌজদারি মামলা। এমন বিধান রেখে এই আইন হচ্ছে। সূত্র : বাসস।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close