নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১০ মে, ২০২১

বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না খালেদা জিয়ার

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারছেন না। সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় তার বিদেশে যাওয়ার সুযোগ নেই বলে মতামত দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার আবেদন-সংক্রান্ত ফাইলে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতে বলা হয়েছে, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার অধীনে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’ এ মতামত পেয়েই গতকাল বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, ‘আইনের বাইরে গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার কোনো সুযোগ নেই।’ এদিকে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে না দেওয়ায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ বিএনপি। অনুমতি না দিয়ে সরকার অমানবিক কাজ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন। দলটির নেতারা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার সুযোগের বিষয়টি রাজনৈতিক, তাই তারা রাজনৈতিকভাবেই সামনে এগোতে চান।

দুর্নীতির মামলায় দন্ড নিয়ে তিন বছর আগে কারাগারে যেতে হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। গত বছর মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পর সরকার খালেদা জিয়াকে ঢাকায় নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না শর্তে দ-ের কার্যকারিতা স্থগিত করে সাময়িক মুক্তি দেয়। এরপর থেকে গুলশানের ভাড়া বাসায়ই ছিলেন ৭৬ বছর বয়সি খালেদা জিয়া। ২৭ এপ্রিল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মূলত এরপরই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে।

বিদেশে চিকিৎসা নিতে খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার গত বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। সরকারের উচ্চপর্যায়ে কথা বলে আবেদনটি করা হয়েছে বলে দাবি বিএনপির। তাই অনেকের ধারণা ছিল, বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ পাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন। লিখিত আবেদনটি পাওয়ার পরপরই তা মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের পাঠানো হয়। আইন মন্ত্রণালয় গতকাল রবিবার সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মতামত পাঠায়।

পরে বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আপনারা জানেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ভাই (শামীম ইস্কান্দার) একটা আবেদন নিয়ে এসেছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। প্রধানমন্ত্রী মানবতার খাতিরে তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৪০১-এর ১ ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী দন্ডাদেশ স্থগিত করে তার বাসায় সুবিধামতো চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছেন। তিনি চিকিৎসা নিচ্ছিলেন, বাসায় অবস্থান করছিলেন। হঠাৎ তিনি কোভিডে আক্রান্ত হয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। এর মধ্যেই তার ছোট ভাই আবার এসেছিলেন। আপনারা জানেন, বিদেশে যাওয়ার জন্য একটা অনুরোধ আমাদের কাছে করেছিলেন। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের জন্য আমরা সেটা সেখানে পাঠিয়েছিলাম। আইন মন্ত্রণালয় থেকে যে মত এসেছে, তারা (আইন মন্ত্রণালয়) স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, ৪০১ ধারায় সাজা স্থগিত করে যে সুবিধাটা তাকে (খালেদা জিয়া) দেওয়া হয়েছে এটা দ্বিতীয়বার, অর্থাৎ আবার তার সাজা মওকুফ করে বিদেশে পাঠানোর কোনো অবকাশ এ ধারায় (৪০১) নেই। এটা জানিয়ে দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।’

‘খালেদার ভাইয়ের আবেদনের বিষয়টি মানবিকভাবে দেখছেন না’ উপস্থিত সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মানবিক বিষয় দেখা হবে বলেই তো আমরা আবেদন আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি, আইনের কোনো জায়গায় তাকে দেওয়া যায় কি না? এখন আমাদের প্রচলিত যে আইন আছে, সেটা অনুযায়ী যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই, এটাই আইন মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে। মানবিকতা দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী তো সাজা স্থগিত করে বাসায় রেখে চিকিৎসাসেবা গ্রহণের সুযোগ দিয়েছেন। সেটা আপনারা জানেন।’

এদিকে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি না দেওয়াকে সরকারের অমানবিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন দলটির নেতারা। তারা বলছেন, ‘সরকার অনেক দন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিয়েছে। সেখানে খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সরকারের হুকুমে একটি ফরমায়েশি রায়ে সাজা দেওয়া হয়েছে। সরকার চাইলে তাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারত। তবে বিএনপি নেতারা এখনো হাল ছাড়ছেন না। তারা মনে করছেন বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে দেখার সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা কথা বলছি। এটা বেগম জিয়ার জীবনরক্ষার বিষয়। তার পরিবার ও তিনি চান উন্নত চিকিৎসা নিন।’

দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য না প্রকাশ না করে বলেন, ‘সরকারের ওপরমহল থেকে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হতে পারে।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর না করে দেওয়া সাময়িক বলেও মনে করছেন তিনি।

চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার বিদেশে যেতে অনুমতি দিতে আইনগত কোনো সমস্যা নেই বলে মনে করছেন তার আইনজীবী ও দলের যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চাইলে শর্ত কমিয়ে বা বাড়িয়ে তাকে বিদেশে চিকিৎসা করার সুযোগ দিতে পারত। এখন তারা যে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে তা অমানবিক।

বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, সরকার প্রতিহিংসাবশত মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে ম্যাডামকে কারাগারে নিয়েছিল। সেখানে তাকে চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে আজকের এই অবস্থায় নিয়ে এসেছে। এখনো সরকার চায় না বেগম জিয়ার সুচিকিৎসা হোক। তাই তাকে বিদেশে যেতে অনুমতি দেয়নি।

দেশে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সুবিধা সত্ত্বেও খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার আবেদন বিএনপির ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। গতকাল ঢাকার মিন্টো রোডে সরকারি বাসভবন থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে এক অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, বেগম জিয়া সুস্থ হোন, সেটিই আমরা চাই এবং এজন্য মহান স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করি। খালেদা জিয়া দেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সুবিধা পাচ্ছেন এবং এটি নিশ্চিত করতে সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। সর্বোচ্চ চিকিৎসা সুবিধার ফলে এরই মধ্যে তার করোনা নেগেটিভ এসেছে। এজন্য চিকিৎসকদেরও ধন্যবাদ জানাই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close