বাসস
যে যেখানে আছেন সেখানেই ঈদ করুন : প্রধানমন্ত্রী
সবাইকে যার যার অবস্থানে থেকে ঈদ উদ্যাপনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের অবশিষ্ট মূল অধিবাসী ও সাধারণ ক্ষতিগ্রস্ত ১ হাজার ৪৪০ জনের মধ্যে প্লট বুঝিয়ে দেওয়া উপলক্ষে গতকাল রবিবার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে এবারের ঈদে গ্রামের বাড়ি যাওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেকে যার যার অবস্থানে থেকে ঈদ করুন। একটা ঈদ বাড়িতে না করলে কী হয়?’
সবাইকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনাভাইরাসের নতুন আরেকটি ভ্যারিয়েন্ট এসেছে, যেটা আরো মারাত্মক। বাড়ি যাওয়ার পথে কে ভাইরাস বহন করছেন, কে করছেন না, তা আমরা কেউ জানি না। কাজেই বাড়ি যাওয়ার পথে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই বলব, বাড়ি যাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কেননা যাওয়ার পথে আপনি ভাইরাস বহন করে নিয়ে যেতে পারেন আপনার পরিবারের কাছে। যাতে করে আপনার মা-বাবা, ভাই-বোনসহ পরিবারের সদস্যরা আক্রান্ত হতে পারে।’
সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাইকে সুরক্ষিত থাকতে হবে। নিজে সুরক্ষিত থেকে অন্যদের সুরক্ষিত রাখতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে, মাস্ক পরতে হবে।’
রাজধানীর অভিজাত এলাকায় বিশাল বিশাল অট্টালিকা থাকলেও নতুন গড়ে উঠা পূর্বাচলে একটি প্লটের জন্য অনেকের মরিয়াভাবের কথা তুলে ধরে তার সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যাদের এত বিশাল বিশাল অট্টালিকা, বাড়িঘর ফ্ল্যাট সবই আছে, তাদের আরো লাগবে কেন? মরলে তো সবাইকে যেতে হবে সেই কবরে মাত্র তিন হাত-সাড়ে তিন হাত জায়গায়। এই ধনসম্পদ কেউ সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবে না। এই কথাটা মানুষ কেন ভুলে যায় আমি জানি না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শহর গড়ে তুলতে চাই। আমাদের দেশে যারা বিত্তশালী তারা প্লট কেনেন, ভালো ভালো দৃষ্টিননন্দন বাড়িঘর বানান। যখন পূর্বাচল শুরু হলো, তখন আমি দেখেছি, এমনকি গুলশান, বারিধারায় বিশাল বিশাল অট্টালিকাও যাদের, তাদেরও পূর্বাচলে একটা প্লট না থাকলে নাকি ইজ্জতই থাকে না। এই রকমও কিছু কিছু মানুষের মানসিকতা আমি দেখেছি।’
রবিবার যারা প্লটের বরাদ্দ পেলেন তাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু যারা সত্যিকার প্রাপ্য, আপনারা কিন্তু বঞ্চিত ছিলেন। কাজেই আমার সব সময় একটা প্রচেষ্টা ছিল যে কীভাবে আপনাদের বঞ্চনার হাত থেকে মুক্তি দেব। আপনারা জমি দিয়েছেন, অথচ প্লট পাবেন না এটা হতে পারে না।’
জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে পূর্বাচলে জাতির পিতার স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের একটা প্রকল্প অনুমোদনের প্রস্তাব এলেও তাতে সায় দেননি বলে অনুষ্ঠানে সরকারপ্রধান জানান।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই ফাইলে আমি লিখে দিয়েছিলাম, এখানকার যারা আদিবাসী বাসিন্দা তারা প্লট পাবে। তারপর আমি এ প্রকল্পের অনুমোদন দেব। তার আগে কোনো প্রকল্পের অনুমোদন দেব না এবং কীভাবে প্লট বের করবে সেটা যেন মন্ত্রণালয় বা রাজউক খুঁজে বের করে সেই নির্দেশনাটাই আমি দিয়েছি। আমি এইটুকু চাই বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। যেইটুকু পারি, যেভাবে পারি একটা মানুষকে একটা ঘর, একটা মাথা গোজার ঠাঁই সেটা আমরা করে দেব এবং প্রত্যেকটা ঘরেই বিদ্যুৎ থাকবে, আলো জ্বলবে। প্রতিটি পরিবারেই শিক্ষিত মানুষ থাকবে, লেখাপড়া শিখবে।’
যুব সমাজকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার প্রত্যয়ের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘লেখাপড়া শুধু কেতাবি না, সঙ্গে সঙ্গে ভোকেশনাল ট্রেইনিং নিতে হবে, কারিগরি শিক্ষা নিতে হবে, যেন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। শুধু বিএ, এমএ পাস করলে হবে না, চাকরির পেছনে ঘুরলে হবে না। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে, নিজেরা যেন চাকরি দিতে পারে সেভাবে নিজেদের কাজ করতে হবে। আমরা সেভাবে এদেশের যুব সমাজকে গড়ে তুলতে চাই।’
অনুষ্ঠানস্থলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমদ অধিবাসী ও ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে প্লটের বরাদ্দপত্র তুলে দেন।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রান্তে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমদ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোশাররফ হোসেন, মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লাহ খন্দকার, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
"