বদরুল আলম মজুমদার

  ০৮ মে, ২০২১

খালেদার বিদেশযাত্রায় জটিলতা অনেক

চিকিৎসার জন্য বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি ও পাসপোর্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা রয়েছে। এই জটিলতা আগামীকাল রবিবারের মধ্যেই কাটবে বলে জানিয়েছে বিএনপির একাধিক সূত্র। এরই মধ্যে বিদেশে চিকিৎসার জন্য সুপারিশও করেছে তার ব্যক্তিগত মেডিকেল বোর্ড। সরকারও এ ক্ষেত্রে বেশ আন্তরিক বলেই জানা গেছে একাধিক সূত্র থেকে। তবে বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘসময় বিমান যাত্রার ধকল তার শরীরে কুলাবে কিনা এ নিয়ে চিকিৎসকরা সন্দিহান। তাছাড়া তিনি চিকিৎসার জন্য কোন দেশে যাবেন বিষয়টি পরিষ্কার নয় সরকারের কাছে। এসব মিলিয়ে বেশকিছু জটিলতা দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে স্বাস্থ্যগত ফিটনেসের ওপর নির্ভর করে খালেদা জিয়াকে প্রথমে সিঙ্গাপুর বা সৌদি আরব নেওয়ার আলোচনাও আছে। তবে লন্ডনে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান চাচ্ছেন যেভাবেই হোক তার মাকে লন্ডনে নিয়ে যেতে। শুরুতে খালেদা জিয়াকে যে দেশেই নেওয়া হোক, তাতে আরো দুই থেকে তিন দিন লাগতে পারে বলে দলীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

বিদেশ নেওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বর্তমান শারীরিক অবস্থায় দীর্ঘ উড়োজাহাজ ভ্রমণের ধকল সামলাতে পারবেন কিনা, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না খালেদা জিয়ার একজন ব্যক্তিগত চিকিৎসক। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থা ভালোও না আবার খারাপও না। এ ধরনের স্থিতিশীল অবস্থা মেডিকেল ‘টার্মে’ খারাপ বলে ধরে নেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে বেগম জিয়ার পক্ষে আকাশ পথে দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করা ঠিক হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে। তারপরও

পরিবার চাইলে এ অবস্থাতেই ফ্লাই করানোর হয়তো চেষ্টা করা হবে।

গত বৃহস্পতিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার কোভিড সংক্রমণ-পরবর্তী নানা জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় ‘মানবিক’ কারণে তার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

তবে বিএনপির নেতারা বলেছেন, সরকারের ছাড়পত্র পাওয়াটাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ। কেননা খালেদা জিয়া দেশ ছাড়তে পারবেন না এই শর্তেই সরকার তাকে নির্বাহী আদেশে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়েছে। এখন আইন মন্ত্রণালয়ের আদেশ সংশোধন করা হলে খালেদা জিয়া বিদেশে যেতে পারবেন। তবে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার এ অনুমতি সরকার দেবে না আদালত দেবে তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

বিদেশে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপি ও পরিবারের প্রথম পছন্দ লন্ডন। কিন্তু করোনার কারণে বাংলাদেশিদের জন্য লন্ডন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তিনি লন্ডন যেতে পারবেন কিনা তা গতকাল পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারেনি পরিবার। দলীয় সূত্র বলেছে, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জন্য এ নিয়ে সমস্যা হওয়ার কথা না। লন্ডনের একটি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের ‘ইতিবাচক সাড়া’ পেয়েছে খালেদা জিয়ার পরিবার। এখন সরকারের কাছ থেকে ছাড়পত্র পাওয়ামাত্রই খালেদা জিয়ার পরিবার তাকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করবে। তবে কোন হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে ভর্তি করানো হবে বা তাকে সেখানে নিয়ে যেতে বিশেষ ফ্লাইট বা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজন হবে কিনা সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের এ বিষয়ে জানিয়েছেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই প্রক্রিয়াটির সমন্বয় করছেন। বিএনপির অপর একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে কাছের কোনো রাষ্ট্র সিঙ্গাপুর বা সৌদি আরব নিয়ে যাওয়ার আলোচনাও হচ্ছে। এই দেশ দুটিতে এর আগে খালেদা জিয়া চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তির যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব ও সিঙ্গাপুর যাওয়ার ব্যাপারেও রয়েছে বিধিনিষেধ।

জিয়া পরিবার ঘনিষ্ঠ বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়াকে যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর বা সৌদি আরব নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না। এখন আমাদের কাছে বড় ব্যাপার হচ্ছে সরকারের অনুমতি। সেটিও কম সময়ের মধ্যে পাব বলে আশা করছি।

এদিকে খালেদা জিয়ার পুরাতন পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৯ সালে। তাই খালেদা জিয়ার নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা হয়েছে। আগের পাসপোর্ট ছিল মেশিন রিডেবল। কিন্তু এখন ই-পাসপোর্টের চল শুরু হয়েছে। ই-পাসপোর্ট করতে হলে ফিঙ্গারপ্রিন্ট, চোখের রেটিনা স্ক্যানসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। এ জন্য আবেদনকারীকে উপস্থিত থাকতে হয় পাসপোর্ট অফিসে। খালেদা জিয়ার বর্তমান স্বাস্থ্যগত অবস্থায় তাই ই-পাসপোর্ট করা বেশ মুশকিলের ব্যাপার। তাই তাকে এবারও এনালগ পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট পরিবারের হাতে পৌঁছেছে কিনা জানা যায়নি। তবে এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল গণমাধ্যমে বলেছেন, খুব শিগগিরই বেগম জিয়া পাসপোর্ট হাতে পেয়ে যাবেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close