নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৫ মে, ২০২১

খালেদার বিদেশযাত্রা আদালতের ওপর

নভেল করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে চায় তার পরিবার ও দল। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। তবে এজন্য সরকার ও আদালতের অনুমতি দরকার।

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে যেতে হলে আদালতের সম্মতির প্রয়োজন রয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও এমন কথা বলেছেন।

আইনজ্ঞদের মতে, সরকারের পক্ষ থেকে শর্তসাপেক্ষে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ায় তাকে বিদেশে পাঠাতে হলে অনুমতির জন্য সরকারকে তা আদালতের নজরে আনতে হবে। এজন্য পরিবারের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে অনেকগুলো প্রক্রিয়া এগিয়ে রাখা হয়েছে। বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট সবার অনুমিত পেলে যেকোনো সময় বিএনপির চেয়ারপারসনকে বিদেশে নেওয়া হতে পারে চিকিৎসার জন্য।

রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় গত সোমবার সকালের দিকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা। গতকাল মঙ্গলবার থেকে খালেদা জিয়ার দল ও পরিবার চাইছে তাকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করাতে।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন গত সোমবার রাত ২টার দিকে বলেন, ‘ম্যাডামের অবস্থা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দিয়েছি। সেগুলোর প্রতিবেদন আসার পর চিকিৎসকরা পর্যালোচনা করবেন। এর আগে বলার কিছু নেই।’ তিনি জানান, দেশের বাইরের একাধিক চিকিৎসকের সঙ্গেও নিয়মিত খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। একই সঙ্গে তার পুত্রবধূ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক চিকিৎসক ডা. জোবায়দা রহমানও পুরো প্রক্রিয়ার খোঁজ নিচ্ছেন।

খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে জাহিদ হোসেন গতকাল দুপুরে প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘এটা পুরোপুরি তার পরিবারের বিষয়। আমি এটা বলতে পারব না। তবে তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে পরিবার থেকে দেড় বছর আগে থেকে বলা হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পুরো খরচ তারা বহন করবে। এটা তো অনেক আগে থেকেই তার পরিবারের চাওয়া।’ বেগম জিয়ার সঙ্গে কোনো কথা হয়েছে কি না জানতে চাইলে এই চিকিৎসক বলেন, ‘কেমন বোধ করছেন, এসব একটু জানতে চাওয়া হয় তার (খালেদা জিয়া) কাছে।’ তার মনোবল কেমন আছে জানতে চাইলে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, মনোবল ভালো আছে।’

চিকিৎসার জন্য বেগম জিয়াকে আপাতত সিঙ্গাপুর নেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে বিএনপির কোনো নেতাই মুখ খুলছেন না। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাতে খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেওয়ার বিষয়ে। তারা খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করেন। জানা গেছে, বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার বলে বিএনপি মহাসচিবকে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে সরকারের অন্যদের সঙ্গে আলাপ করে পরে জানানো হবে।

এদিকে দলের চেয়ারপারসনের জন্য দোয়া চেয়ে গতকাল এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা নিশ্চয়ই সবাই উদ্বিগ্ন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবরে। দলের নেতাকর্মীরা এখনো উদ্বেগের মধ্যে আছেন দেশনেত্রীর শারীরিক অবস্থা কী রকম, এ নিয়ে। আপনারা সবাই শুনেছেন যে, গতকাল (সোমবার) তার একটু শ্বাসকষ্ট হওয়ায় সিসিইউয়ে নেওয়া হয়েছে। এখনো তিনি সিসিইউয়ে আছেন। অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। এখন তিনি স্থিতিশীল আছেন।’

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার পর গত ১১ এপ্রিল থেকে গুলশানে ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় থেকে ব্যক্তিগত চিকিৎসক দলের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন খালেদা জিয়া। ১৪ দিন পর আবার পরীক্ষা করা হলে তখনো তার কোভিড ‘পজিটিভ’ আসে। এরপর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ২৭ এপ্রিল রাতে তাকে এভার কেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। ফুসফুসের সিটিস্ক্যান ও কয়েকটি পরীক্ষার পর সেই রাতেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিকে ‘ফিরোজা’য় বিএনপি চেয়ারপারসন ছাড়াও আরো আটজন কোভিডে আক্রান্ত হন। তবে ফিরোজার সব কর্মী এরই মধ্যে কোভিডমুক্ত হয়েছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close