বদরুল আলম মজুমদার

  ০৫ মে, ২০২১

পরীক্ষা ছাড়া পাস আর নয়!

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খুললেও বোর্ডের ঘোষণা অনুযায়ী পরীক্ষাগুলোর সময় ঘনিয়ে আসছে। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষাগুলো আয়োজনের ব্যাপারে আগ্রহী শিক্ষাসংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা। তাই গেলবারের মতো আর কোনো ‘অটোপাস’ তথা পরীক্ষা ছাড়া উত্তীর্ণ করার পক্ষপাতী নয় শিক্ষা বোর্ডগুলোও। প্রয়োজনে পরীক্ষা আয়োজনের জন্য কিছু সময় পিছিয়ে হলেও শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও নীতিনির্ধারকরা।

আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জুনে এসএসসি এবং আগস্টে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা থাকলেও নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতির কারণে এই পরীক্ষা হয়তো নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় চলতি শিক্ষাবর্ষের শেষ দিন অর্থাৎ ডিসেম্বর মাস পর্যন্তও যদি অপেক্ষা করে পরীক্ষা নেওয়া যায় তাহলেও পরীক্ষা নিয়েই শিক্ষার্থীদের সনদ দিতে চায় শিক্ষা বোর্ড।

এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘এ বছর এসএসসি এবং এইচএসসি শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প পদ্ধতি অনুসরণ করব না। আমরা চাই না, শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষা ছাড়াই সার্টিফিকেট নিয়ে যাক। শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে গুরুত্বের সঙ্গে পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণের বার্তা পৌঁছে দিতে বলা হচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এ বছর সংক্ষিপ্ত পাঠ্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে পরীক্ষা নেওয়া হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু হলেই এসএসসি শিক্ষার্থীরা ৬০ দিন এবং এইচএসসি শিক্ষার্থীরা ৮০ দিনের জন্য ক্লাস করবে। পরবর্তী সময়ে পাঠ্যক্রমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরীক্ষা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর এম আমিনুল ইসলাম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি সম্ভবত আরো দীর্ঘায়িত হতে পারে। কিন্তু নিয়মিত পরীক্ষাগুলোর সময়ও ঘনিয়ে আসছে। বার বার অটোপাস দিয়ে পরীক্ষা এড়িয়ে যাওয়া ঠিক নয়। এর আগে অটোপাস নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। পরীক্ষা দিতে হবে না এমন ধারণা শিক্ষার্থীদের মনেও এক ধরনের পাঠবিমুখতা তৈরি করে। তাই আমরা আর সে পথে হাঁটতে চাই না। সংক্ষিপ্ত করে হলেও পরীক্ষার জন্যই আমরা অপেক্ষা করব।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রে জানা যায়, আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, স্কুল-কলেজ খোলার পর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার জন্য ৬০ দিন এবং এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার জন্য ৮৪ দিনে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শেষ করতে হবে। এরপর দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে দুই পরীক্ষাই নেওয়া হবে। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ গত বছরের চেয়ে বেড়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি বাড়ানো হয়েছে ২২ মে পর্যন্ত। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব না হয় তাহলে প্রয়োজনে পরীক্ষা আরো পিছিয়ে দেওয়া হবে। তবুও ‘অটোপাস’ দিতে আগ্রহী নয় কোনো শিক্ষা বোর্ড।

সূত্র মতে, বাস্তব অবস্থার আলোকেই এবার এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে গেলেও গত বছরের মতো ‘অটোপাস’ বা বিকল্প মূল্যায়ন পদ্ধতিতে ফল না দিয়ে এই পাবলিক পরীক্ষা দুটি নেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। এ বিষয়ে এরই মধ্যে একটি নীতিমালা চূড়ান্ত করে কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এই দুটি পাবলিক পরীক্ষা আয়োজনের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

জানা যায়, সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শেষ করেই পরীক্ষা দুটি নেওয়ার জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি অনুকূলে না এলে বছরের শেষ দিকে হলেও দুটি পাবলিক পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আগামী ২৩ মে যদি স্কুল-কলেজ খোলা যায় তাহলে সেপ্টেম্বরে এসএসসি এবং ডিসেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষা আয়োজন করা যেতে পারে।

সর্বশেষ ছুটির ঘোষণা অনুযায়ী, মহামারি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে আগামী ২৩ মে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ৬০ দিনের সিলেবাস শেষ করতে সময় যাবে আগামী ২৩ জুলাই। এরপর দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে পরীক্ষার রুটিন ঘোষণা করা হলেও আগস্ট মাসের শেষে কিংবা সেপ্টেম্বরের শুরুতে পরীক্ষা নিতে হবে। একইভাবে এইচএসসি পরীক্ষাও পিছিয়ে যাবে।

গত বছরের (২০২০ সালে) এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে সবাই পাস করেন। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব না কমায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের পূর্ববর্তী জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে ওই ফল প্রকাশিত হয়েছিল।

এ দিকে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের ফরম পূরণ করার সময় কোভিডের কারণে কয়েক দফায় বাড়িয়েও শেষ করা যায়নি। কোভিডের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় ফরম পূরণ আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সংক্রমণ কমলে পুনরায় সময় বাড়ানো হবে এসএসসির ফরম পূরণ করতে। অর্থাৎ আগের ঘোষণা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে এ বছরও এসএসসি পরীক্ষা হচ্ছে না। এইচএসসি পরীক্ষার ক্ষেত্রেও সময় বাড়ানো ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। তাই চলতি বছরের নভেম্বর কিংবা ডিসেম্বর ছাড়া এই পরীক্ষা আয়োজন সম্ভব হচ্ছে না।

গত বছর ৮ মার্চ দেশে প্রথম কোভিড রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ওই বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। দফায় দফায় তা বাড়িয়ে আগামী ২২ মে পর্যন্ত প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close