ভারতে ২৪ ঘণ্টায় নভেল করোনাভাইরাসে নতুন করে শনাক্ত সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ভারতে কোভিড শনাক্ত হওয়া মোট রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ৪০ লাখ ছাড়িয়েছে। বার্তা সংস্থা এপির বরাত দিয়ে দ্য নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড এ তথ্য জানিয়েছে।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল বৃহস্পতিবার জানায়, শেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কোভিড শনাক্ত হয়েছে ২ লাখ ৭৩৯ জনের এবং মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৩৮ জনের। গত বছর সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১ লাখ ৭৩ হাজার ১২৩ জন মারা গেছে।

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে এক ডজনেরও বেশি হোটেল এবং বিয়ের হলগুলোকে কোভিড-১৯ হাসপাতালে রূপান্তর করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।

নয়াদিল্লির সরকারি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এস কে সারিন বলেছেন, ‘সংক্রমণের এই হার উদ্বেগজনক।’

ভারতের বড় শহর ও অর্থনৈতিক রাজধানী মুম্বাইয়ে করোনাভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে লকডাউন দেওয়া হয়েছে। গত বুধবার রাত থেকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মহারাষ্ট্র রাজ্যের বেশির ভাগ শিল্প, ব্যবসা ও জনসমাগম বন্ধ করা হয়েছে এবং ১৫ দিনের জন্য মানুষের চলাচল সীমিত করা হয়েছে। তবে ট্রেন ও উড়োজাহাজ পরিষেবা চালু রয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে অভিবাসী শ্রমিকরা মুম্বাই ছেড়ে যাওয়ার কারণে ট্রেন স্টেশনে উপচে পড়া ভিড় ছিল।

কোভিড শনাক্ত হার বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত এবং মৃত্যুর দিক থেকে চতুর্থ অবস্থানে আছে। শনাক্ত হার বিবেচনায় ব্রাজিলের অবস্থান তৃতীয় এবং মেক্সিকো চতুর্থ স্থানে। তবে ভারতের ১৪০ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে কোভিড সংক্রমণের প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে। কারণ দেশটিতে কোভিড পরীক্ষার কার্যক্রম সীমিত।

ভাইরোলজিস্ট শহীদ জামিল বলেছেন, সাম্প্রতিক স্থানীয় ও রাজ্য নির্বাচনের বিশাল রাজনৈতিক সমাবেশ এবং হিন্দুদের বড় উৎসব কুম্ভমেলায় উত্তরের শহর হরিদ্বারের গঙ্গা নদীতে স্নান করা ছিল কোভিড সংক্রমণ বিস্তারের বড় কারণ।

ভারত টিকা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত বুধবার ৩০ লাখের বেশি ডোজ দিয়ে মোট টিকা ১১ কোটি ৪০ লাখ ছাড়িয়েছে।

মহারাষ্ট্র, মধ্য প্রদেশ, গুজরাট এবং আরো বেশ কয়েকটি রাজ্যের হাসপাতালে রোগীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। বেশ কয়েকটি হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডারের ঘাটতি রয়েছে বলে জানা গেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের শ্মশান ও সমাধিস্থলগুলোতে শেষকৃত্যের জন্য আগত লাশের সংখ্যা সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে। কলকাতা প্রতিনিধি জানান, নির্বাচনের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে কোভিড সংক্রমণ হার উদ্বেগ বাড়িয়েছে প্রশাসনের। বুধবারই পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৬ হাজার মানুষের শরীরে কোভিডের উপসর্গ পাওয়া যায়। প্রাণ হারিয়েছে ২৪ জন।

জিনিউজ জানায়, আগামী ২৬ এপ্রিল রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের সপ্তম দফায় ভোট সামশেরগঞ্জ আসনে। আর তার আগেই কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হলো সামশেরগঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থী রেজাউল হকের। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকায় তাকে আগের দিন জঙ্গিপুরে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এরপর অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাতেই তাকে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছিল। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। গতকাল ভোর পাঁচটা নাগাদ মৃত্যু হয় রেজাউলের।

জানা যায়, বেশ কয়েক দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন রেজাউল ওরফে মন্টু বিশ্বাস। কোভিড পরীক্ষা হয় তার। বুধবার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এরপরই তড়িঘড়ি তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

"