নিজস্ব প্রতিবেদক
উপচে পড়া ভিড় বাজার সড়ক ব্যাংক ফেরিতে
নভেল করোনাভাইরাসের উচ্চসংক্রমণ ঠেকাতে নতুন বিধিনিষেধ শুরু হওয়ার আগের দিন রাজধানীর রাস্তা, বাজার ও ব্যাংকগুলোতে দেখা গেছে উপচে পড়া ভিড়। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার প্রতিটি প্রান্তে মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। কেউ কাজে, কেউ প্রয়োজনীয় কেনাকাটায় কিংবা অনেকেই আট দিনের ‘ছুটি’ মনে করে রওনা দিয়েছেন বাড়ির পথে। আবার শেষ মুহূর্তে ব্যাংকেও দেখা গেছে উপচে পড়া ভিড়। কারণ ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল আটদিন ব্যাংক থাকবে বন্ধ। সবকিছু বন্ধ হওয়ার আগেই যে কোনোভাবে শহর ছাড়ার তাড়া দেখা যায়।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মানুষ ব্যস্ত নিজের প্রয়োজনে মেটাতে। তাই মার্কেটগুলোতে উপচে পড়া ভিড় এবং কানায় কানায় পূর্ণ। আটদিন মার্কেট বন্ধ থাকবে বলে যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তাতেই এমন উপচে পড়া ভিড় বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
এছাড়া রাজধানী থেকে বাইরে বের হওয়ার রাস্তাগুলো মানুষে পরিপূর্ণ। দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ থাকায় নিজস্ব উদ্যোগে গাড়ি ভাড়া করে কিংবা ট্রাক, পিক-আপ, মিনিবাসে করেই রওনা হচ্ছেন গন্তব্যে। টার্মিনালগুলোর সামনেও দেখা যায় উপচেপড়া ভিড়। ফেরিঘাটগুলোতেও জনসমাগম ছিল অস্বাভাবিক। অনেকেই যানবাহন না পেয়ে হেঁটেও রওনা হন। সব মিলিয়ে তীব্র চাপ ছিল রাজধানীর সড়কগুলোতে। দীর্ঘ যানজটে নাকাল হয় নগরবাসী।
সকাল থেকে রাজধানীর সড়কগুলোতে মানুষের বাড়তি চাপ দেখা গেছে। স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই যে যেভাবে পারছেন ছুটছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চলার কথা থাকলেও বেশিরভাগ বাসেই মানা হয়নি সেসব বিধি-নিষেধ। প্রতি সিটে যাত্রী তুলেই শেষ নয়, অনেক বাসে দাঁড়িয়ে যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। এরপরও বিপুল সংখ্যক মানুষকে গাড়ির জন্য সড়কে অবস্থান করতে দেখা যায়। বাড়তি দামে শেয়ার করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিংবা রিকশায় করে চলাচলও ছিল উল্লেখযোগ্য।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজধানীর প্রবেশপথে বাড়িমুখী মানুষের চাপ বেড়ে যায় গতকাল। এর ফলে ভেতরের সড়কেও তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। মোহাম্মদপুর থেকে সাইনবোর্ডগামী রজনীগন্ধা পরিবহনের বাসচালক শাহ পরান জানান, যাত্রীর এত চাপ যে প্রতি দুই সিটে একজন করে বসতে বললেও কেউ শুনছে না। জোর করেই সবাই উঠে পড়ছে।
রাজধানীর অন্যতম প্রবেশপথ যাত্রাবাড়ী ও গাবতলী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকলেও স্বল্পযাত্রার আন্তজেলার রুটে কিছু কিছু বাস চলছিল। কয়েকগুণ বেশি ভাড়া নিলেও মানা হয়নি কোনো স্বাস্থ্যবিধি।
গাবতলীতে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে দেখা যায়, সকাল থেকেই সাধারণ মানুষ এসে অপেক্ষা করছিলেন গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে। তবে দূরপাল্লার বাস না পেয়ে মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, পিকআপভ্যান ও ট্রাকে করে গ্রামের বাড়ি যেতে আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাটের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
মিরপুর ১১ নম্বর সেকশন থেকে গাবতলীতে পরিবার নিয়ে এসেছেন মো. সাগর। অনলাইনভিত্তিক পোষা প্রাণীর খাবারের ব্যবসা করেন তিনি। আট দিনের বিধিনিষেধে গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জে পরিবারকে রেখে আসতে এসেছেন গাবতলীতে। তিনি বলেন, ‘এক ঘণ্টা ধরে গাড়ির জন্য চেষ্টা করছি কোনো কিছুই পাচ্ছি না। গাবতলী থেকে ভেঙে ভেঙে মানিকগঞ্জ যাব। পরিবারকে রেখে আবার ঢাকায় আসব। কারণ আমি তো অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা করি, এর জন্য আমাকে ঢাকায় থাকতে হচ্ছে। বাড়তি ভাড়ায়ও গাড়ি পাচ্ছি না।’
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বাকি বিল্লাহ যাবেন গ্রামের বাড়ি রাজশাহী। একঘণ্টা চেষ্টা করার পর একটি মাইক্রোবাসের সন্ধান পেয়েছেন। রাজশাহী যেতে তাকে ভাড়া গুনতে হবে ২ হাজার টাকা। তিনি বলেন, ‘এক সপ্তাহের লকডাউনে অফিসিয়াল কাজ ও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে বাড়ি যাচ্ছি। গাবতলী থেকে দূরপাল্লার পরিবহন চলছে না। এখানে ব্যক্তিগত পরিবহন চলাচল করতে দেখছি বেশি। আমি মাইক্রোবাসে করে রাজশাহীতে যাব।’
গতকাল সকাল ১০টা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন ব্যাংক ঘুরে দেখা গেছে, ব্যাংকে ঢোকার জন্য লাইন ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন গ্রাহকরা। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে লাইনও দীর্ঘ হচ্ছিল। আর ব্যাংকের ভেতরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছিলেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে আজ বুধবার থেকে আট দিনের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। তার সঙ্গে মিল রেখে ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল বাংলাদেশের সব তফসিলি ব্যাংক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে চালু থাকবে এটিএম এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে লেনদেন।
গতকাল সকালে সোনালী ব্যাংকের মগবাজার শাখায় গিয়ে দেখা যায়, গ্রাহকদের দীর্ঘ লাইন। একজন গ্রাহক জানালেন, তিনি প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন।
প্রাইম ব্যাংকের নিউ ইস্কাটন শাখায় বাইরে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল অর্ধশতাধিক মানুষকে। সাত মসজিদ রোডে পূবালী ব্যাংকেও গ্রাহকদের ভিড় দেখা যায়। ইসলামী ব্যাংকের মগবাজার শাখায় ছিল বিশাল লাইন।
ব্যাংকাররা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে ব্যাংকে ঢোকাতে হচ্ছে বলে সময় বেশি লাগছে, তাতে লাইন দীর্ঘ হচ্ছে, অপেক্ষাও বাড়ছে।
এদিকে গতকাল সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত লেনদেন চলার কথা থাকলেও সেই সার্কুলারের বিষয়টি জানতেন না অনেক ব্যাংক কর্মকর্তা।
নিউ ইস্কাটনে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের শাখায় জানতে চাইলে তারা বলেন লেনদেন দুপুর ১টা পর্যন্ত হবে। ব্র্যাক ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, লেনদেন ১টা পর্যন্ত হবে। তবে আরেকজন কর্মকর্তা বিষয়টি শুধরে দেন।
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গত ৫ এপ্রিল থেকে দেশে বিভিন্ন বিধিনিষেধ চলছে। এর আওতায় ৫ থেকে ১১ এপ্রিল ব্যাংকে লেনদেন হয়েছে সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। আর সোমবার দুপুর ১টা পর্যন্ত লেনদেন চলে।
"