নিজস্ব প্রতিবেদক
দলে দলে বাড়ির পথে মার্কেটে, স্বাস্থ্যবিধি উধাও
গবেষণায় বলেছে, বাংলাদেশে কোভিড ছড়ানোর উৎস মার্কেট ও গণপরিবহন। অথচ এ দুই জায়গায় নেই স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই। গতকাল দেখা গেছে, কারো কারো মুখে মাস্ক থাকলেও, কারো কারো মুখে ছিল না। সামাজিক দূরত্ব তো দূরের কথা, গায়ে গা-ঘেঁষে ছিল কেনাকাটার ধুম। যেন ঈদের চাঁদরাত। আর গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি বলতে ছিল শুধু সিট ফাঁকা রাখা, সেখানে মোটেই জীবাণুনাশক ব্যবহার দেখা যায়নি।
অন্যদিকে, কঠোর লকডাউনের আগে দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় ট্রাক ও পিকআপে গাদাগাদি করে দল বেঁধে, যে যেমনে পারে সেভাবেই ঘরে ফিরছে। সরকার ঘোষিত সাত দিনের প্রথম দফা ‘লকডাউন’-এর গতকাল শেষ দিনে রাজধানী জুড়ে এমন পরিস্থিতিই দেখা গেছে। বোঝার উপায় ছিল না দেশে ‘লকডাউন’ চলছে।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, শুক্রবারের চেয়ে ক্রেতাসমাগম বেশি। ধানমন্ডি এলাকার নিউমার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনী চক, নূরজাহান মার্কেটগুলোয় ছিল উপচে পড়া ভিড়। শপিং মলগুলোয় স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে কিছুটা তোড়জোড় থাকলেও নিউমার্কেটের গাউছিয়ায় তা লক্ষ করা যায়নি। সেখানে মাস্ক ও সামাজিক দূরত্ব কোনোটিই বজায় ছিল না।
গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে করোনা ছড়িয়ে পড়ার দুটি বড় উৎসের একটি মার্কেট-শপিং মল। বিশেষজ্ঞরা বেচাকেনার ক্ষেত্রে সবাইকে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলছেন, প্রয়োজন ছাড়া কেনাকাটা না করাই ভালো।
গতকাল নিউমার্কেটের বিভিন্ন শপিং মলে গিয়ে দেখা যায়, দ্বিতীয় দফা কঠোর লকডাউনের এক দিন আগে যেন শুরু হয়ে গেছে উৎসবের প্রস্তুতি। পহেলা বৈশাখ আর ঈদ সামনে রেখে চলছিল কেনাকাট, এজন্য উপচে পড়া ভিড় ছিল রাজধানীর শপিং মল ও মার্কেটে। পুরো মার্কেটে গিজগিজ করছিল মানুষ। সেখানে বিক্রেতাদের চেয়ে ক্রেতাদের স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা ছিল বেশি।
এদিকে বিক্রেতাদের হ্যান্ড স্যানিটাইজ কিংবা জীবাণুনাশক স্প্রে করার কাজ চোখে পড়েনি। এক কাস্টমার থাকলেও আরেকজনকে কীভাবে দোকানে বসানো যায়, তারই হাঁক-ডাকে ব্যস্ততা ছিল দোকানিদের।
সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা যায় জুতা, শাড়ি আর থ্রি-পিসের দোকানে। এরপর ক্রোকারিস, কসমেটিকস আইটেম ও খাবারের দোকানে। চশমা ও স্বর্ণের দোকানে তেমন ভিড় ছিল না।
এ ব্যাপারে সুহেল গার্মেন্টের মালিক শাকিল আহম্মেদ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘সকাল ৯টা থেকে দুপুর পর্যন্ত কাস্টমার কম ছিল। দুপুরের পর থেকেই লোকজন বেশি আসা শুরু করে। তাই ওই সময় ভিড় একট বেশি থাকে। কী করার আছে। সবাই তো মুখে মাস্ক পরেছে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার রেখেছি, কেউ নিতে চান না।’
এদিকে সকালে রাজধানীর মিরপুর, ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, তেজগাঁও, চিটাগাং রোড ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তায় আগের মতোই গণপরিবহন ছিল। স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে হেলপার-চালকরা বলছেন, এই গরমে মাস্ক পরে থাকা সম্ভব না। অন্য নির্দেশনা সম্পর্কে তারা পুরোপুরি অবগত না।
তুরাগ পরিবহনের হেলপার সামাদের মুখে মাস্ক না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাস্ক পরে যাত্রী ডাকা যায় না। তবে পকেটে সব সময়ই মাস্ক থাকে বলে।’
লাব্বাইক পরিবহনের চালক রাজু জানান, ‘বাস নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। যাত্রীরাই হ্যান্ড স্যানিটাইজ করতে চান না।’
"