নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১২ এপ্রিল, ২০২১

হাসপাতালে ঠাঁই নেই অ্যাম্বুলেন্সেই অপেক্ষা

চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি সানা শামীমুর রহমানের সঙ্গে দেখা হয় গতকাল রবিবার রাজধানীতে পুলিশ হাসপাতালে। তিনি জানান, গত ৬ এপ্রিল তার ছোট মেয়ে প্রথমে খাবারে গন্ধ পাচ্ছিল না বলে তাকে জানায়। এর আগে পরিবারের সদস্যদের সর্দি-জ্বর হলেও তা খুব একটা আমলে নেননি। একপর্যায়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা স্ত্রী ও দুই মেয়েসহ নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) পরীক্ষা করান। রিপোর্ট পেয়ে জানতে পারেন সবাই কোভিডে আক্রান্ত। রাজধানীর পুলিশ হাসপাতালে ৬নং ভিআইপি কেবিনে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে গত ৮ এপ্রিল ভর্তি হয়েছেন। এই হাসপাতালে ১২টি ভিআইপি ক্যাবিনের একটিও খালি নেই। এই পুলিশ কর্মকর্তার পাশের কক্ষে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব এবং অন্য পাশের কক্ষে ভর্তি আছেন পরিকল্পনা কমিশনের একজন সচিব।

হাসপাতালে কোভিড শাখায় কর্তব্যরত একজন নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ভাই, পরিস্থিতি খুবই খারাপ। একটিও বেড খালি নেই। নতুন নতুন রোগী আসছে। কিন্তু অতিরিক্ত রোগী ভর্তি থাকায় তাদের চিকিৎসা দিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। নতুন অনেক গুরুতর রোগী এলেও ভর্তি করাতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন।’ এই নার্স আরো বলেন, ‘পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হলেই এখানে ভর্তি করানোর কথা থাকলেও প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা ওপর থেকে যোগাযোগ করে ভর্তি হচ্ছেন।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনের নিচে গতকাল দুপুর ১২টার কিছু আগে অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে থাকে একের পর এক। কিন্তু হাসপাতালে শয্যা খালি নেই। স্বজনরা এদিক-ওদিক ছুটছিলেন। কোভিড ইউনিট থেকে বেরিয়ে একজন স্বাস্থ্যকর্মী জানালেন, ভেতরে বেড ফাঁকা নেই। গাড়িতেই থাকতে হবে রোগীদের।

দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনের কোভিড ইউনিটের সামনে দেখা গেল এক সন্তান তার মায়ের হাত ধরে বসে আছেন, চোখে পানি। একেকজন রোগী ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে সোজা ঢাকা মেডিকেলে এসেছেন এই ভরসায় যে, একটা না একটা ব্যবস্থা হবেই। হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্সে শুয়ে থাকতে হচ্ছে রোগীকে। আর এই সময়টা অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায়ও নেই স্বজনদের।

রাজধানীর বাংলামোটর এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ইউসুফ গুরুতর অসুস্থ হয়ে ভর্তির জন্য যান সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। কিন্তু হাসপাতালে কোভিড রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ঘাটতির কথা শুনে বাসায় ফিরে চিকিৎসা নেওয়া শুরু করেন নিজেই। এই চিকিৎসকের আত্মীয় শামসুল হক গতকাল তার পরিবারের সদস্যের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন।

কোভিডে আক্রান্ত হয়ে বাসায় চিকিৎসাধীন থেকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন সাব্বির নেওয়াজ। তার বোন নাজনীন আক্তার প্রশাসনের কর্মকর্তা। তিনি প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, তার ভাই যখন অসুস্থ হয় সেদিন থেকেই হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন তিনি। কিন্তু বর্তমানে হাসপাতালগুলোতে ভালো চিকিৎসা হচ্ছে না বলে সবাইকে উপেক্ষা করে বাসায় চিকিৎসা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তার ভাই। গতকাল শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তিনি তার সহকর্মীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করাতে সক্ষম হন। তবে কোনো বেডের ব্যবস্থা গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত করতে পারেননি বলে জানান তিনি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক খাদিজা খাতুন মনি প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, হাসপাতালগুলোতে কোভিড আক্রান্ত রোগীর উপচে পড়া ভিড়। নির্ধারিত শয্যার অতিরিক্ত রোগী ভর্তি করতে হচ্ছে। কিন্তু চিকিৎসক ও নার্স সংখ্যা বাড়েনি। ফলে রোগীর যেভাবে চিকিৎসা করানো দরকার তা সম্ভব হচ্ছে না।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ইভা রহমান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, এই হাসপাতাল কোভিড রোগীদের চিকিৎসা শুরু থেকেই দিয়ে যাচ্ছে। রাজধানীর যে প্রান্তেই আক্রান্ত হোক প্রথমে ছুটে আসেন এই হাসপাতালে। কোভিড শয্যার চেয়ে অনেক গুণ বেশি রোগী ভর্তি আছে। নতুন রোগীর চাপ থাকায় পরিস্থিতি ভালো বিবেচনায় অনেক রোগীকে ছাড়াপত্র দিতে হচ্ছে। দেখা যাক, পরিস্থিতি কোন দিকে যায়। প্রতিদিনই মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি সত্ত্বেও আমরা রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে সারা দেশে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শয্যার সংখ্যা ৬৭২। এর মধ্যে গতকাল ফাঁকা ছিল ১৪২টি। আর ঢাকা মহানগরে ৩৭৭টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে ফাঁকা ছিল মাত্র সাতটি। আগের দিন সারা দেশে মোট ৬০০ আইসিইউ শয্যার মধ্যে ফাঁকা ছিল ১৪৮টি। ঢাকা মহানগরীতে ৩০৫টির মধ্যে ফাঁকা ছিল ১১টি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close