প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৯ মার্চ, ২০২১

কোভিডে বিয়ের ঝুঁকিতে কোটি মেয়েশিশু

নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে স্কুল বন্ধ থাকা, অর্থনৈতিক চাপ এবং বাবা-মায়ের মৃত্যুজনিত ঘটনায় এক কোটি মেয়ে শিশু বিয়ের ঝুঁকিতে পড়েছে বলে তথ্য দিয়েছে জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)। গতকাল সোমবার ‘কোভিড-১৯ : শিশু বিয়ের বিরুদ্ধে অগ্রগতির জন্য হুমকি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

ইউনিসেফ জানায়, গত ১০ বছরে বিশ্বব্যাপী শিশু হিসেবে বিয়ে হয়ে যাওয়া তরুণীদের অনুপাত ১৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল বা প্রতি চারজনের মধ্যে প্রায় একজন থেকে কমে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনে পরিণত হয়েছিল, যা প্রায় আড়াই কোটি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধের সমতুল্য। আর এই অর্জন এখন হুমকির মুখে।

বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি টোমো হোযুমি বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সত্ত্বেও বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের ব্যাপকতা বিশ্বে চতুর্থ সর্বোচ্চ। লাখ লাখ মেয়ে শিশু যে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে তা আরো জটিল করে তুলেছে কোভিড-১৯। স্কুল বন্ধ থাকা, বন্ধুবান্ধব এবং সহায়তা কার্যক্রম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা এবং ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য মেয়েদের বাল্যবিয়ের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা যদি জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ না করি, তাহলে মেয়ে শিশুরা তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ভবিষ্যৎ হারাবে।’

ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বলা হয়, শৈশবে যেসব মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় তারা তাৎক্ষণিক এবং জীবনভর এর পরিণতি ভোগ করেন। তাদের ঘরোয়া সহিংসতার শিকার হওয়া আশঙ্কা বেশি থাকে এবং স্কুলে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে কম। অল্প বয়সে বিয়ে এবং অপরিকল্পিত গর্ভাবস্থার ঝুঁকি বাড়ায় ও ফলস্বরূপ প্রসূতির স্বাস্থ্যগত জটিলতা ও মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায়। বাল্যবিয়ে মেয়েদের পরিবার ও বন্ধুবান্ধব থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে এবং তাদের নিজ কমিউনিটিতে অংশগ্রহণে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ও সার্বিক কল্যাণের ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে।

এতে বলা হয়, কোভিড-১৯ মেয়েদের জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করছে। মহামারি-সম্পর্কিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং শারীরিক দূরত্বের কারণে মেয়েদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক পরিষেবা ও কমিউনিটি সহায়তা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, যেসব সেবা ও সহায়তা তাদের বাল্যবিয়ে, অনাকাক্সিক্ষত গর্ভাবস্থা ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা থেকে সুরক্ষিত রাখে। স্কুলগুলো বন্ধ থাকায় মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার এবং পুনরায় পড়াশোনা শুরু না করার সম্ভাবনাই বেশি। কাজ হারানো এবং বর্ধিত অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার কারণে আর্থিক ভার লাঘব করতে পরিবারগুলোকে তাদের মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিতে বাধ্য করে তুলতে পারে।

বিশ্বব্যাপী বর্তমানে জীবিত প্রায় ৬৫ কোটি মেয়ের বিয়ে হয়েছিল তাদের শৈশবে, যার প্রায় অর্ধেকই ঘটেছে বাংলাদেশ, ব্রাজিল, ইথিওপিয়া, ভারত ও নাইজেরিয়ায়। কোভিড-১৯-এর প্রভাবগুলো কাটিয়ে উঠতে এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বাল্যবিয়ের সমাপ্তি ঘটাতে অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ত্বরান্বিত করতে হবে।

হোযুমি যোগ করেন, মহামারির এক বছরে বাংলাদেশ বাল্যবিয়ের ক্ষেত্রে কষ্টার্জিত অর্জন হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে। বিদ্যালয়গুলো পুনরায় চালু করতে এবং স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা পরিষেবাগুলোর প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন, যাতে আমরা বাল্যবিয়ের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমাতে এবং মেয়েদের কাছ থেকে যাতে তাদের শৈশব কেড়ে নেওয়া না হয় তা নিশ্চিত করতে পারি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close