প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৯ মার্চ, ২০২১

বড় অপারেশন ছিল বায়তুল মোকাররম

বীর মুক্তিযোদ্ধা রাইসুল ইসলাম আসাদ

অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ ১৯৭১ সালে ছিলেন ঢাকার বিশিষ্ট গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা। ঢাকা উত্তর গেরিলা দলের একটি ইউনিটের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মার্কেটে একটি বড় গেরিলা অভিযানে তিনি অংশ নিয়েছিলেন।

ওই অভিযান সম্পর্কে রাইসুল ইসলাম আসাদ বলেন, ‘বায়তুল মোকাররমে অপারেশনের কথা বলতে গেলে প্রথমে বলতে হয়, ঢাকার উত্তর সেক্টরের যে গেরিলা বাহিনী ছিল তার কমান্ডার ছিলেন মানিক এবং সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ। পরে মানিক যখন শহীদ হন তখন নাসির উদ্দীন ইউসুফ তার কমান্ডার হন। তখন ঢাকায় আমাদের একটা ছোট্ট ইউনিট ছিল। সে ইউনিটের নেতৃত্বে প্রথমে ছিল ওমর। পরবর্তী সময়ে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সেটার দায়িত্ব দেওয়া হয় আমাকে। ঢাকায় তখন আমরা লক্ষ্য করি যে, ঈদের আগে বিভিন্ন শপিং সেন্টার বা মার্কেটগুলোতে বিশেষ করে নিউমার্কেট ও বায়তুল মোকাররম মার্কেটে লোকজন কেনাকাটা করছে এবং মোটামুটি বেশ ভিড় দেখা যাচ্ছে। সে সময় আমরা সিদ্ধান্ত নেই, আমরা লোকজনকে বোঝাব যে, আমাদের বাঙালি জীবনে এবারের ঈদ আনন্দের নয়। কারণ আমরা তখন দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধরত। আমরা এরূপ বক্তব্য সংবলিত একটা হ্যান্ডবিল বায়তুল মোকাররম এবং নিউমার্কেটে ছাড়ি, যা সাইক্লোস্টাইল মেশিনে ছাপা ছিল। কিন্তু লক্ষ্য করা যায় যে, এটা খুব একটা কার্যকর হয়নি। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে, বায়তুল মোকাররমে একটা অপারেশন করব। অপারেশনের জন্য ঢাকা শহরে আগে থেকেই কিছু এক্সপ্লোসিভ ঢুকিয়েছিলাম। প্রায় সাড়ে ১০ কেজি প্লাস্টিক এক্সপ্লোসিভ যাকে সংক্ষেপে পিকে বলা হয়। পিকে সাধারণত ছোট ছোট রাউন্ডের, অল্প অল্প সাইজের হয়। সব একসঙ্গে করে একটা বড় গোলাকার বস্তু বানানো হলো। আমাদের একটা হাইড আউট ছিল, বড় মগবাজারে নাজমী সাহেবের বাসায়। তিনি ইউনাইটেড স্টেটস ইনফরমেশন সার্ভিসে (ইিউসিস) চাকরি করতেন। নাজমী সাহেবের বাড়িতে আমরা মাঝে মাঝে আশ্রয় নিতাম। তিনি মুক্তিযুদ্ধে আমাদের একজন প্রচ- রকম সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেছেন। তার বাড়িতে থাকতে দিতেন, খাওয়াতেন এবং বিভিন্ন জিনিসপত্র রাখতে দিতেন। সেই বাড়িতেই রাত্রিবেলা আমরা এই সাড়ে ১০ পাউন্ড প্লাস্টিক এক্সপ্লোসিভ রাখি।’

এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘সে সময় আবার, আমাদের ঢাকার উত্তর সেক্টরের মূল ক্যাম্প ছিল মানিকগঞ্জে। সেখান থেকে খবর আসে যে, একটা টেপরেকর্ডার আর একটা ক্যামেরা দরকার। আমরা এই অপারেশনটার সঙ্গে এটাকেও যুক্ত করি। আমরা পরিকল্পনা করি যে, অপারেশন করার আগে বায়তুল মোকাররম মার্কেটে গিয়ে একজন ক্যামেরা এবং টেপরেকর্ডারের দোকানে দামাদামি করবে। যখন এক্সপ্লোশনটা হবে, সে জিনিসগুলি নিয়ে দৌড় দেবে। কারণ আমরা পয়সা দিয়ে তা কিনব না। এছাড়া বায়তুল মোকাররমের তিন-চারটা পয়েন্ট ঠিক করা হয়, যেখানে গ্রেনেড ছোড়া হবে। সেজন্য মোটামুটিভাবে অপারেশনটার এরূপ পরিকল্পনা করি। আর দরকার হয়েছিল আমাদের একটা গাড়ির।’ তিনি বলেন, ‘অপারেশনটা করা হয়েছিল রোজার ঈদের আগে। ওইখানে ওদের সব দোকানের মালিকের ছেলে আমাদের অনেক হেল্প করত। ওইটা ছিল আমাদের একটা ইনফরমেশন সেন্টার। আরেকটা পয়েন্ট ছিল আমাদের মিট করার, সেটা হচ্ছে মগবাজারের শাহী বিরিয়ানি হাউস। শাহী বিরিয়ানি হাউসের মালিক এবং কর্মচারীরা আমাদের ভীষণ হেল্প করত। অনেক সময় তারা খাওয়াতও আমাদের। সেই মিষ্টির প্যাকেটের ভেতরে একটা করে গ্রেনেড নিয়ে এরা চলে গেল। যথারীতি আমি অপেক্ষা করছি ওখানে। অপেক্ষা করতে করতে সাড়ে ১০টা বেজে গেল, কিন্তু কোনো শব্দ নাই। তারপর তো মাথা খারাপ। টেনশন কাজ করছিল। সাড়ে ১০ পাউন্ড প্লাস্টিক এক্সপ্লোসিভ ঢাকা শহরের ভেতরে তখন বিশাল ব্যাপার। ঢাকা শহরের ভেতরে ওটা ঢোকানো বা ওটা জোগাড় করা, ইটস এ বিগ থিং, তার সঙ্গে ডেটোনেটর আছে, ফিউজ আছে, যেটা দিয়ে ওটাকে ব্লাস্ট করানো হবে। তারপর একজন এর মধ্যে দৌড়াতে দৌড়াতে আসল। এসে বলল যে, ওটা তো ফাটে নাই। কেন? ওই যে গাড়ির ভেতরে ধোঁয়া উড়ছে। ওটার সমস্ত কিছু সেট করে আগুন জ্বালিয়েছে কিন্তু কাজ হয়নি, গাড়ির ভেতরে ধোঁয়া উড়ছে লোকজন উঁকিঝুঁকি মারছে। আমার তো মাথা খারাপ হয়ে গেছে তখন। চিৎকার দিয়ে বলেছি, যেভাবে হোক গাড়ি ফেরত নিয়ে আস। কারণ ওইটা একটা ভীষণ রিস্কি ব্যাপার। তখন জরুরি অবস্থা চলছিল। আর এসব মার্কেটে পাহারা দিচ্ছিল তখন পাকিস্তান আর্মি। যাহোক, ওরা সেই গাড়ি ফেরত নিয়ে এলো। সেটা নিয়ে ফকিরাপুলের ওখানে আসি। সেখান থেকে আবার আমি ওদের সঙ্গে গাড়িতে উঠে সোজা নওরতন কলোনিতে চলে যাই।’ তিনি আরো বলেন, ‘যে ফিউজটা ডেটোনেটরের সঙ্গে লাগানো ছিল সেই ফিউজটা মাঝখানে ভেজা ছিল। যে কারণে আগুনটা যেতে যেতে নিভে গেছে। কী করি এখন? তখন সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেই যে, এখন আর কিছু করার নাই। কিন্তু আমি বললাম যে, না, অপারেশনের সিদ্ধান্ত আজকেই করতে হবে। সাধারণত এটা করা উচিত না। কারণ জানাজানি হলে সাবধানতা অবলম্বন করে কাজ করতে হয়। কিন্তু আমার কেন জানি না, সেই সময় মাথায় রক্ত উঠে যাওয়ার মতো অবস্থা। এ রকম একটা অপারেশন ফেল করাটা ভাবতেই পারছিলাম না।’

রাইসুল ইসলাম আসাদ বলেন, ‘মনিপুরীপাড়ার ভেতরে আমরা একটা বাড়ি (বেড়ার ঘর) ভাড়া করেছিলাম। ওখানে থাকত আমাদের শাহার। ও তখন ঢাকায় থাকত। ঢাকার জন্য ১০ জনের একটা টিম করা ছিল, আমরা সেই ১০ জন ঢাকায় এই কাজগুলো করতাম। শাহার তাদের মধ্যে একজন। সে এই জিনিসগুলো ভাড়া বাড়ির টিনের চালে রাখত। কেউ থাকত না ওখানে। আমি ওই গাড়ি চালিয়ে গেলাম সেখানে, সঙ্গে জলিকে নিয়েছিলাম বোধ হয়। গিয়ে সেই বাড়ির মাচা থেকে নামিয়ে দেখি যে, এক্সপ্লোসিভ সব বৃষ্টির পানি পড়ে ড্যাম হয়ে গেছে। সেখান থেকে বেছে বেছে কিছু নিয়ে এলাম। তারপর বের করে বাছতে বাছতে একটা অংশ মনে হলো যেন শুকনো। সেটাকে কেটে আবার রোদে শুকালাম ভালো করে। তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম যে, এবার আমি নিজে যাব। ফিরোজকে বললাম যে, তুই গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাবি। আর এরা প্রত্যেকেই যেমন আরিফ, ফিরোজ সবাই খুব ভালো গাড়ি চালাতে পারত। আরিফ, যার কথা বলছি বারবার, সে এমন এক্সপার্ট ছিল যে, একটা বন্ধ গাড়ি খুলতে তার এক মিনিটও সময় লাগত না।’ তিনি বলেন, ‘আগের মতো পুরো সেটআপ ঠিক করি। তখন বাজে প্রায় সাড়ে ৩টা। এই সব করে সিদ্ধান্ত নিলাম যে, সকালে যখন হলো না দুপুরে লাঞ্চ টাইমে যাব। এভাবে পাঠিয়ে দিলাম তাদের এবং আমি গাড়িতে বসলাম। আমি সামনের সিটে, পাশে ফিরোজ, যে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গেল। আমি ফিরোজকে বায়তুল মোকাররমের সামনের রাস্তা দিয়ে যেতে বললাম। ওকে বলে রেখেছিলাম যে, আমি যখন বলব, তুমি গাড়িটা রেখে কোনো কথা না বলে সোজা নেমে চলে যাবা। কারণ কথাবার্তা বেশি বলা যেত না। তাছাড়া সময় খুব বেশি নেওয়া যাবে না। গাড়িটা এদিক দিয়ে নিয়ে ঘুরে ওই সাইডে গিয়ে মার্কেটগুলো দেখে আমার কেন জানি খুব একটা ভালো লাগল না। আমি বললাম যে, না, গাড়ি ঘোরাও। গাড়ি ঘুরিয়ে আবার ওখান দিয়ে এসে এইদিকে ঢুকলাম। তখন এদিক দিয়েও আসা যাওয়া করা যেত। এদিক দিয়ে ঘুরে যখন আসছি, হঠাৎ দেখলাম, একটা আর্মির জিপ, আর একটা বিরাট ভ্যান। আর্মির বড় বড় ভ্যান যেগুলোতে অনেক সোলজার যায় সেরকম, ওই কাভার্ডভ্যান একটা ত্রিপল দিয়ে ঢাকা। আমি বললাম যে, স্ট্রেইট চালাও। চালিয়ে গিয়ে এই দুটোর মাঝখানে যে গ্যাপ আছে, গ্যাপের মধ্যে ঢুকিয়ে দাও। ও কিছু বলতে চেয়েছিল। আমি বললাম, একদম কোন কথা বলবে না, স্ট্রেইট ঢুকিয়ে দিয়ে তুমি নেমে সোজা ওদিক চলে যাও, কোনো দিকে তাকাবে না। ও নামতে চাইছে না। ওকে আস্তে করে ধমক দিলাম। ও বেরিয়ে চলে গেল। আমি চুপ করে বসে আছি। দেখলাম, ভেতরে ফ্যান্সি হাউস, একটা বিশাল শাড়ি কাপড়ের দোকান, প্রায় দুটো তিনটে না চারটা দোকান একসঙ্গে নিয়ে তৈরি, রমরমা ব্যবসা করছে। ওটার সামনেই ঘটনাটা ঘটানো দরকার, মানে ওই মাথাটার কাছাকাছি। তারপরে ওখানে গাড়ির ভেতরে বসে একটা লম্বা দম নিলাম। আমি দেখলাম যে, ভ্যানের ভিতরে সোলজাররা বসে আছে। জিপটা খালি, ড্রাইভারও গাড়িতে নাই। এরা কাভার্ডভ্যানের ভিতরে কী করছে, আমি বুঝতে পারছিলাম না। আমি চারদিকে একবার দেখে নিয়ে এক্সপ্লোশনের কাজটা শুরু করলাম। যেভাবে জ্বালাতে হয় সেটা হচ্ছে যে ফিউজের মাথাটা কেটে ওটার ভিতরে একটা ম্যাচের কাঠির মাথা দিতে হয়। তারপর ম্যাচের কাঠি দিয়ে জ্বালিয়ে দিলে বারুদটা ওটার থেকে ফিউজটায় ধরে যায়, ফিউজটা জ্বলতে জ্বলতে গিয়ে ডেটোনেটরটা যে এক্সপ্লোসিভের ভিতরে দেওয়া আছে, সেই বড় সাড়ে ১০ পাউন্ড এক্সপ্লোসিভের ভিতরে ডেটোনেটরটা ব্লাস্ট করে। ডেটোনেটর ব্লাস্টের কারণে এক্সপ্লোসিভটা ব্লাস্ট হয়। আমরা যে ফিউজটা দিয়েছিলাম ওটার টাইমিং ছিল ১ মিনিটেরও কম, ৪৫-৫০ সেকেন্ড হবে। ওটা জ্বালিয়ে দিয়ে আমার নেমে চলে যাওয়ার কথা। আমি জ্বালিয়ে দিয়েই চিন্তা করলাম যে, আবার যদি নিভে যায়! বসে রইলাম। কিছুক্ষণ বসে থাকার পরে ওটা সু সু করে জ্বলতে জ্বলতে আসলেই নিভে গেল। নিভে যাওয়ার পর আমার সমস্ত হাত পা ঠা-া হয়ে যায়। একেবারে ভয়ংকর অবস্থা। তখন আমি একদম স্ট্রেইট চোখ বন্ধ করে জোরে একটা শ্বাস নিলাম, নিয়ে দেখছি যে কেউ কিছু বুঝতে পারে কিনা। দেখলাম যে, না কোনো দিকে কোনো কিছু নড়চড় নেই, যা ছিল নরম্যালি চলছে সবকিছু। এর মধ্যে আমিও বাইরের দিকে নরম্যালি তাকিয়ে থেকে হাতে সব কাজ করছি। আমি হঠাৎ করে তাকিয়ে দেখি যে, আমার নানা ওখানে দূরে কলা কিনছে, রোজার ইফতারি করার জন্য বোধ হয়। আমি এ রকম আরো দু-একটা পরিচিত চেহারা দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু কিছু করার নাই তখন। আগুন আবার নিভে গেল, নিভে যাওয়ার পরে চিন্তা করলাম যে কী করব? চলে যাব কিনা? থাকাটা ঠিক হবে কিনা? তারপরে ভাবলাম যে, যা হয় হবে। এক্সপ্লোসিভের মাথাটা খুলে ওটাকে ব্লেড দিয়ে কাটলাম। কেটে ফাঁক করে একটা কাঠি বসালাম, বসিয়ে আবার জ্বালালাম এবং এই যে কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার এই সেকেন্ডটা মনে হবে এখন কিছুই না। কিন্তু যদি ভাবা যায় তাহলে কয়েক জীবন। যাহোক, ওটা জ্বালিয়ে দেওয়ার পরে তখন বোধ হয় আর বাকি ছিল ২৫ সেকেন্ড বা ৩০ সেকেন্ডেরও কম সময়। আমি দেখছি, জ্বলছে। আমি ভাবলাম যে, নেমে যাই। তারপর ভাবলাম যে, আবার যদি নিভে যায়! মনে মনে ভাবলাম যে, আমিসহই উড়ে যাই, এরকম একটা ভাব, তারপরও ব্লাস্টটা হোক। এই করতে করতে বোধ হয় আর ৮-৯ বা ১০ সেকেন্ড বাকি তখন মনে হলো যেন, আর নিভবে না। গাড়ির দরজাটা খুলে ধাম করে লাগিয়ে দিয়ে হেঁটে ওই ভ্যানটা পার হয়ে একটু এগিয়ে গিয়ে বায়তুল মোকাররমের করিডোরে যাওয়ার টাটা নিয়েছি কি নেইনি এর মধ্যে ব্লাস্টটা হলো। ব্লাস্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দৌড়াদৌড়ি শুরু হলো। আমি এক দৌড়ে ফকিরাপুলে যেখানে হাইড আউট সেখানে চলে গেলাম। ওখানে গিয়ে সবার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। মোটামুটি সবাই এলো, একজন শুধু আরিফ, ও আসছিল না। সবাই এলো, আরিফ আর আসে না। কয়েক মিনিট ওয়েট করার পর আমার কেন জানি খুব অস্বস্তি লাগছিল।’

সূত্র : বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত ‘ঢাকায় গেরিলাযুদ্ধ ১৯৭১’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close