প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৯ মার্চ, ২০২১

নারী দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

অধিকার আদায়ে অর্জন করতে হবে যোগ্যতা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের নারীসমাজকে নিজেদের অধিকার আদায়ে যোগ্য করে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের সমাজকে যদি আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই তাহলে নারী-পুুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে এক হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। অধিকার দাও, অধিকার দাও বলে চিৎকার করে আর বক্তৃতা দিলে অধিকার আদায় হয় না। অধিকার আদায় করে নিতে হবে। অধিকার আদায়ের মতো যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। তবে সেই যোগ্যতা আসবে শিক্ষা-দীক্ষা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে।’ প্রধানমন্ত্রী গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনের অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সূত্র : বাসস।

সরকার দুই কোটি পাঁচ লাখ ছেলেমেয়েকে বৃত্তি-উপবৃত্তি দিচ্ছে, যার মধ্যে বেশির ভাগই নারী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সমাজকে গড়ে তুলতে হলে, নারী-পুরুষ সবাইকেই শিক্ষা দিতে হবে। যে কারণে আমরা প্রতিটি কেন্দ্রে নারী-পুরুষের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি।’

কাজী নজরুল ইসলামের ‘নারী’ কবিতার কটি পঙ্ক্তিÑ বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নরÑ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নারীকে আপন ভাগ্য বিধাতা হতে হবে। নারী উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের চুম্বক অংশ। সরকার পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০, জাতীয় নারী উন্নয়ননীতি ২০১১, নারী উন্নয়নে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা-২০১৩-২০২৫ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ প্রণয়ন করেছে। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৩-২০২৫, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) বিধিমালা-২০১৩, ডিএনএ আইন-২০১৪, যৌতুক নিরোধ আইন-২০১৮, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭, বাল্যবিবাহ নিরোধ বিধিমালা-২০১৮। মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ ছয় মাসে বর্ধিতকরণসহ সন্তানের পরিচয়ের ক্ষেত্রে বাবার নামের পাশাপাশি মায়ের নাম বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরই সবক্ষেত্রে নারীদের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে, যেটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরই চিন্তার ফসল।’ এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার ৫৪ সালের চীন সফর নিয়ে লেখা ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বইয়ের কয়েকটি বিশেষ লাইনের উদ্ধৃতি দেন।

জাতির পিতা বলেন, ‘নয়াচীনের মেয়েরা আজকাল জমিতে, ফ্যাক্টরিতে, কল-কারখানাতে, সৈন্যবাহিনীতে দলে দলে যোগদান করছে। তাদের সংখ্যা স্থানে স্থানে শতকরা ৪০ জনের ওপরে।’ শেখ হাসিনা এ সময় দেশের স্বাধীনতা অর্জনে তার মা, মহীয়সী নারী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মানুষ করার পাশাপাশি যখন বঙ্গবন্ধু জেলে থাকতেন তখন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে দলের কার্যক্রম দেখা, আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলা সবকিছু তিনিই করেছেন পর্দার আড়ালে থেকে, কখনো কোনো প্রচার তিনি চাননি। কাজেই, আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, তার পেছনে আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের অনেক অবদান রয়েছে।’

মায়ের মতামতকে জাতির পিতা সব সময়ই অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেকোনো অর্জনের পেছনে একজন নারীর যে অবদান থাকে, সেটাই এখানে সব থেকে বড় কথা।’

শেখ হাসিনা অতীত স্মরণ করে বলেন, ‘৯৬ সালে সরকারে এসে দেখেছি কোনো নারীরা ডিসি, এসপির পদ পেত না, কোনো ইউএনওর পদ পেত না। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে এখন সব পদে নারীরা আসীন হয়েছেন।

তিনি উদাহরণ দেন, জাতীয় সংসদের স্পিকার, সংসদ নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদীয় উপনেতা সবাই মহিলা। এটাই বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় অর্জন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অতীতে ধর্মের নাম নিয়ে বা সামাজিকতার কথা বলে নারীকে পশ্চাৎপদ করে রাখার অপচেষ্টা সমাজ থেকে দূর হয়েছে।’

বিভিন্ন প্রতিকূলতাকে পাশ কাটিয়ে জীবন-সংগ্রামে জয়ী নারীদের সম্মাননা দেওয়ার জন্য বিশেষ উদ্যোগ হিসেবে ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ শীর্ষক কর্মসূচির মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য প্রতি বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসে পাঁচজন ‘জয়িতা’কে জাতীয় পর্যায়ে সম্মাননা দেওয়া হয়। এবারও পাঁচজনকে জয়িতা সম্মাননায় ভূষিত করা হয়েছে। তারা হলেনÑ অর্থনৈতিকভাবে সফল নারীর ক্যাটাগরিতে হাছিনা বেগম নীলা, শিক্ষা ও চাকরির সাফল্যের ক্যাটাগরিতে মিফতাহুল জান্নাত, সফল জননী নারী ক্যাটাগরিতে মোসাম্মাৎ হেলেন্নেছা বেগম, নির্যাতিতা-বিজয়ী নারী ক্যাটাগরিতে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা রবিজান এবং সমাজ উন্নয়নে অসমান্য অবদানের জন্য অঞ্জনা বালা বিশ্বাস।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেগম ফহিলাতুন্নেছা ইন্দিরা বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার হিসেবে এক লাখ টাকার চেক, সম্মাননা ক্রেস্ট এবং সনদ তুলে দেন।

মহিলা ও শিশু প্রতিমন্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম স্বাগত বক্তব্য দেন। জয়িতা পদকপ্রাপ্তদের পক্ষে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য দেন জয়িতা হাছিনা বেগম নীলা।

মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, পদস্থ সামারিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশন ও দূতাবাসের প্রতিনিধি এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা পর্বের মধ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close