নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

এ এক বদলে যাওয়া বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণকে জাতির জন্য ঐতিহাসিক উল্লেখ করে বলেন, গত এক যুগে বদলে গেছে বাংলাদেশ। একযুগ আগের বাংলাদেশ ও আজকের বাংলাদেশ এক নয়। এ এক বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। গতকাল শনিবার বিকালে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করায় প্রধানমন্ত্রী এই সংবাদ সম্মেলন করেন। এবারের সংবাদ সম্মেলন স্বাভাবিক সময়ের মতো হয়নি। গণমাধ্যমকর্মীরা ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রান্তে আর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন সরকারপ্রধান। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আরেক মেয়ে শেখ রেহানা।

জাতির এ অর্জন তরুণ প্রজন্মকে উৎসর্গ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ কৃতিত্ব দেশের আপামর জনসাধারণের। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এই মাইলফলক অর্জন করতে পেরেছি। তরুণরা আজকের বাংলাদেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে উন্নত সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের মহামহারি চলছে, বহুদিন দেখা হয় না, প্রায় এক বছর পর দেখা হচ্ছে আপনাদের সঙ্গে। সেটাও সরাসরি না, ভার্চুয়ালি দেখা হচ্ছে। সেটাও ডিজিটাল বাংলাদেশ করা হয়েছিল বলেই।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ আমরা জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন করছি। সেই সঙ্গে মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে। জাতির পিতা শূন্যহাতে সাড়ে তিন বছরে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত করে গিয়েছিলেন। আর তারই হাতে গড়া আওয়ামী লীগ দেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। জাতির পিতার কন্যা হিসেবে জাতির একজন সেবক আমি। আমি এ অর্জনকে উৎসর্গ করছি নতুন প্রজন্মের তরুণদের জন্য। এ সময় তিনি স্মরণ করেন জাতির পিতা ও চার নেতাকে। তিনি ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ মা-বোন ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানান।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৯ মাসের যুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত জেনে সব অবকাঠামো ধ্বংস করে পাকিস্তানিরা। সে সময় বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে প্রবেশ করে জাতির পিতার হাত ধরে। কিন্তু দুর্ভাগ্য তিনি সব কাজ শেষ করে যেতে পারেননি। ১৫ আগস্ট জাতির পিতাসহ আমার পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়। সে সময় প্রতি রাতে বাংলাদেশে কারফিউ থাকত, খরা, বন্যা, দুর্যোগের দেশ ও ভিক্ষুকের দেশ হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিত ছিল। গ্রাম ছিল অবহেলিত। দুর্ভিক্ষ লেগেই থাকত।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ছয় বছর দেশে আসতে পারিনি, জিয়াউর রহমান আসতে দেননি। জনগণের রায় নিয়ে আমি দেশে ফিরি। তারা রেহানার পাসপোর্ট ফেরত দেয়নি। ৯৬ সালে মানুষের রায় নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ২০০১ সালে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসে। ২০০৯ সালে আমরা আবার সরকার গঠন করি, কৃতজ্ঞ তাদের প্রতি যারা ভোট দিয়ে জনগণের সেবার করার সুযোগ দিয়েছেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা শেখ মুজিব অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছিলেন। এক যুগ আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়। আজকের বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। একটি মানুষও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। প্রায় আড়াই কোটি মানুষকে নগদ ও অন্য সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে ২০২০ সাল ছিল সংকটময়। এত সংকট পেরিয়ে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছি। আমাদের এ অর্জনকে সুসংহত ও টেকসই করতে হবে।’ সংবাদ সম্মেলন শেষে প্রধানমন্ত্রী জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

ডিজিটাল বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের কর্তব্য : ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিক ও লেখকদের হয়রানি চলছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল আইন যখন গড়ে তুলেছি, তখন ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়াও আমাদের কর্তব্য। এ দায়িত্ব পালন করতে হবে এ কারণে যে, ছোট শিশু থেকে যুবক কেউ যেন বিপদে না পড়ে, অসামাজিক কার্যকলাপ, জঙ্গিবাদ বা কোনো কিছুর সঙ্গে জড়িত হতে না পারে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়া একান্ত অপরিহার্য। আজকের দিনে এর বেশি কিছু বলতে চাই না। সমালোচনা যারা করছেন তারা করবেনই। কারা বেশি সমালোচনা করছেন সেটা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন। তারা কি বাস্তব পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে পারেন বা করেছেন? তারা তো সেটা করছেন না। আজ শুভ দিন, আমি অন্য কোনো কথা বলতে চাই না।’

সরকারপ্রধান আরো বলেন, ‘আমার বয়স ৭৫ বছর। স্কুলজীবন থেকেই রাস্তায় নেমেছি। ৬২ সাল থেকে পথে মিছিলে যোগ দিয়েছি। কাজেই এ দেশের সবাইকে আমার চেনা আছে শুধু আমি এইটুকু বললাম। কে কোথায় কী বলেন সেটা আমার জানা আছে। কারো মৃত্যু কাম্য নয়, কিন্তু মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অশান্তি সৃষ্টি করাও কাম্য না। বাংলাদেশে ৩ নভেম্বর জেলখানায় চার জাতীয় নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। যারা সে হত্যাকা- ঘটিয়েছিল তাদের সঙ্গে তো অনেকেই গাঁটছড়া বেঁধেছিল। এখন কেউ অসুস্থ হলে মারা গেলে কী করার আছে।’

সাংবাদিক জ ই মামুন প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োজনীয়তার কথা আপনি বলেছেন। আমরা স্বীকার করি, অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু এ আইনের কিছু কিছু অপপ্রয়োগও হচ্ছে। একজন লেখকের মৃত্যু নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। এ রকম ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেজন্য আপনার পক্ষ থেকে যদি স্পষ্ট করে সতর্কবাণী থাকে তাহলে আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধ হতে পারে বলে অনেকে মনে করেন।’ এর উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আইন আপন গতিতে চলে। আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে কি না এটি দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার, আপেক্ষিক ব্যাপার। কোনটা আপনার কাছে অপপ্রয়োগ আর কোনটা অপপ্রয়োগ না, এটা আপেক্ষিক ব্যাপার। কিন্তু আমি মনে করি, আইন তার নিজ গতিতেই চলছে এবং চলবে। যদি কেউ অপরাধ না করে তাহলে বিচারে তার শাস্তি হবে না। কিন্তু আদৌ অপরাধ হচ্ছে কি না বা এমন কোনো কাজ হচ্ছে কি নাÑ যেটা দেশের বা জাতির ক্ষতি হচ্ছে, সে কাজ থেকে বিরত করা আমাদের দায়িত্ব। ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছিল বলেই বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে পেরেছি, প্রশাসনিক কার্যক্রম চালাতে পারছি। প্রত্যেকেই কাজ করতে পারছে।’

টিকা অবশ্যই নেব : কবে টিকা নেবেন জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি অবশ্যই টিকা নেব। তবে আমার দেশের কত পার্সেন্ট মানুষ আগে নিতে পারল, কতজনকে দিতে পারলাম সেটা দেখতে চাই। যদি আমার একটা টিকার জন্য আরেকটা মানুষের জীবন বাঁচে সেটাই তো সবচেয়ে বড় কথা। আমার বয়স হয়েছে। আজ আছি, তো কাল নেই। হায়াত-মউত কে বলতে পারে! আমি খোঁজ নিচ্ছি, আমাদের একটা টার্গেট করা আছে। সে পরিমাণ যখন দেওয়া হবে, তখন যদি টিকা থেকে যায়, তখন আমারটা আমি নেব।’

মুখোমুখি সংবাদ সম্মেলন হলে সাংবাদিকরা প্রধানমন্ত্রীকে সামনা-সামনি দেখার সুযোগ পেতেন বলে এক সাংবাদিক আক্ষেপ করার পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশ ডিজিটাল হওয়ায় তাও তো দেখা হলো। না হলে তো এটাও হতো না। ২০০৭ সালে ছোট জেলে বন্দি ছিলাম, এখন বড় জেলে। কোথাও যেতে পারছি না। তবে এই ডিজিটাল হওয়ায় আজ বাংলাদেশ একটা ধাপে উঠে আসতে পেরেছে। সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে বলে আজ আমাদের এ অর্জন।’

কোন চ্যানেল কী বলল না বলল সেটা শুনে তো আমার রাজনীতি না : কাতারভিত্তিক টেলিভিশন আলজাজিরার ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ প্রতিবেদন নিয়ে আরেক সাংবাদিকের প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই, কিছু বলারও নেই। একটা চ্যানেলে কী বলছে না বলছে, সেটা দেশের মানুষ বিচার করবে। কতটুকু মিথ্যা, কতটা বানোয়াট, তারা বিচার করবে।’

বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-, যুদ্ধাপরাধ, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারের কথা তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যাদের বিচার হয়েছে, তারা-তাদের পরিবার কি চুপ করে বসে থাকবে? তাদেরও কিছু ইন্ধন আছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা অদ্ভুত কিছু মিথস্ক্রিয়া দেখা যায়। আল্ট্রা লেফট-আল্ট্র রাইট মাঝেমধ্যে এক হয়ে যায়। কোন চ্যানেল কী বলল না বলল, সেটা শুনে তো আমার রাজনীতি না। দেশের মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম, সেটাই আমার রাজনীতি। যারা বলতে থাকছে বলতে থাকুক। বলতে থাকাই তো তাদের কাজ।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close