নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ৭ কলেজ

দাবির মুখে পরীক্ষার ঘোষণা

শিক্ষার্থীদের অবরোধে তীব্র যানজট ঢাকার কয়েক রাস্তায়

শর্তসাপেক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি সরকারি কলেজের চলমান ও ঘোষিত পরীক্ষা নির্ধারিত সময়েই হবে। তবে পরীক্ষা চলাকালীন হোস্টেল খোলা হবে না এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গতকাল বুধবার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের অধ্যক্ষদের এক ভার্চুয়াল সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বৈঠক শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও সাত কলেজের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আজকের সভার সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী সাত কলেজের পরীক্ষাগুলো রুটিন অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে। তবে ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত পরীক্ষার সময়সূচি পরে জানানো হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘সাত কলেজের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরীক্ষা স্থগিত থাকবে। আগামী ২৪ মে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর এসব প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা নেওয়া হবে।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শর্তসাপেক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সাত সরকারি কলেজের পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শর্তের মধ্যে আছেÑ পরীক্ষা চলাকালে হল খোলা যাবে না এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও দাবির বিষয়ে জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজ (বুধবার) সন্ধ্যা ৬টায় সভা হওয়ার কথা থাকলেও আন্দোলনের কারণে দুপুরেই শুরু হয়। ভার্চুয়ালি এ সভায় যুক্ত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও সাত কলেজের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, সাত কলেজের সমন্বয়কসহ কলেজের অধ্যক্ষরা।

গত মঙ্গলবার পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করার পর এর প্রতিবাদে সেই রাত থেকেই আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। আগের রাতের কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর নীলক্ষেত এলাকায় গতকাল সকাল ৯টায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। এতে ওই সড়কসহ আশপাশের সব রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে শিক্ষার্থীরা সায়েন্সল্যাব মোড়েও অবস্থান নিলে ওই এলাকায়ও তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

দুপুর ১২টার দিকে সেখানে যান সাত কলেজের সমন্বয়ক ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার। তিনি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আজ সন্ধ্যা ৬টায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে সাত কলেজের অধ্যক্ষ এবং ঢাবি উপাচার্যের সমন্বিত বৈঠকে পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

তবে সমন্বয়কের আশ্বাস আমলে নেননি শিক্ষার্থীরা। তারা ওই সময় ‘ভুয়া, ভুয়া’ এবং ‘মানি না, মানব না’ স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের দাবি, পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত এখনই দিতে হবে। তবেই তারা আন্দোলন স্থগিত করবেন।

শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে একপর্যায়ে সাত কলেজের সমন্বয়ক ও ইডেন কলেজের কিছু শিক্ষক নীলক্ষেত মোড়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরে অধ্যক্ষসহ অন্য শিক্ষকদেরও ঘিরে রাখেন শিক্ষার্থীরা। তারা বিভিন্ন সেøাগান দিতে থাকেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ পাহারায় শিক্ষকরা কলেজে ফিরে যান। তবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছিলেন। ওই সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, তাদের দাবি না মানলে পুরো ঢাকা অচল করে দেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বারবার অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের কারণে তাদের শিক্ষাজীবনের অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। পরে দাবি মেনে নেওয়ার এবং পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।

২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয় ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এই কলেজগুলোয় শিক্ষার্থী প্রায় দুই লাখ।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর চাপ কমিয়ে শিক্ষার মান বাড়াতে কলেজগুলোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হলেও সমস্যা এখনো দূর হয়নি। শিক্ষার্থীরা বলছেন, কলেজগুলোর বড় সমস্যা হলো ঠিক সময়ে পরীক্ষা না নেওয়া এবং দেরিতে ফল প্রকাশ।

বিশ্বব্যাপী কোভিড মহামারি শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালের মার্চ থেকে দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ আছে। পরে জুলাই থেকে অনলাইন, টেলিভিশন কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে বিকল্প শিক্ষাদানের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা খুব একটা সাফল্য পায়নি। এর মধ্যে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার কমে আসা এবং টিকাদান শুরু হওয়ার প্রেক্ষাপটে কর্তৃপক্ষ স্কুলগুলো খুলে দেওয়ার বিষয়ে প্রাথমিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। আগামী ২৪ মে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হবে এবং তার আগে ১৭ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close