প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৭ জানুয়ারি, ২০২১

আন্দোলনের পতাকা উড়ল লালকেল্লায়

* ব্যারিকেড ভেঙে কৃষকদের ট্রাক্টর মিছিল নয়াদিল্লিতে * কাঁদানে গ্যাস, লাঠিচার্জ কিছুই দমাতে পারেনি তাদের * পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ, ট্রাক্টর উল্টে নিহত ১

ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে ট্রাক্টর মিছিল নিয়ে রাজধানী নয়াদিল্লিতে ঢুকে পড়েছেন আন্দোলনরত কৃষকরা। লালকেল্লায় পৌঁছে গেল কৃষকদের মিছিল। শুধু পৌঁছে গেল তাই নয়, লালকেল্লায় পৌঁছে কৃষক আন্দোলনের পতাকা উড়িয়ে দিলেন তারা। সংঘর্ষ, কাঁদানে গ্যাস, লাঠিচার্জ কিছু দিয়েই পুলিশ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারল না প্রতিবাদী কৃষকদের। তিন সীমানায় সব ব্যারিকেড গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো গতকাল মঙ্গলবার। পুলিশের ঘোষিত পথে গেল না হাজার হাজার ট্রাক্টর। পথ পাল্টে লালকেল্লায় গিয়ে কৃষকদের মধ্য থেকে আওয়াজ উঠল ‘অকুপাই দিল্লি’।

নয়াদিল্লিতে ঢুকতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে বিতর্কিত কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত কৃষকদের। ‘নতুন বাজারবান্ধব’ সংস্কারের বিরুদ্ধে হাজার হাজার কৃষক ট্রাক্টর চালিয়ে রাজধানী শহরে ঢোকার চেষ্টা করেন। কয়েক জায়গায় কৃষকরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলেন এবং তাদের জন্য নির্ধারিত রুটে না গিয়ে অন্য দিক দিয়ে এগিয়ে যান।

পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে দিল্লির ডিডিইউ মার্গে ট্রাক্টর উল্টে একজন নিহত হন। আন্দোলনকারী কৃষকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হওয়ায় নয়াদিল্লির কয়েকটি এলাকায় এবং আশপাশের কয়েকটি স্থানে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইয়ের বরাত দিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, দিল্লিতে হাজার হাজার বিক্ষোভকারীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যেই ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলো। খবরে আরো বলা হয়েছে, কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে গতকাল ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে কৃষকদের প্রতিবাদী ট্রাক্টর মিছিল পূর্বনির্ধারিত রুট থেকে সরে গিয়ে রাজধানী শহরের ঐতিহাসিক লালকেল্লাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রবেশ করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে।

ভারতের ইতিহাসে অন্যতম দীর্ঘ এই কৃষক আন্দোলন চলছে প্রায় দুই মাস ধরে।

সরকার প্রস্তাবিত আইনটি আপাতত স্থগিত রাখার কথা জানিয়েছে; কিন্তু কৃষকরা বলছে, তারা আইন বাতিল চান।

এর আগে নয়াদিল্লির সীমান্তে প্রায় দুই মাস অবস্থান ধর্মঘট করেছিলেন কৃষকরা।

কয়েক দফা আলোচনার পর পুলিশ গতকালের সমাবেশের অনুমতি দিয়েছিল এই শর্তে যে তারা কোনোভাবেই প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানের বিঘ্ন ঘটাবেন না।

নয়াদিল্লির ছয়টি প্রবেশপথ থেকে কর্মসূচি শুরুর কথা ছিল কৃষকদের। কিন্তু পুলিশ সব পথই অবরোধ করে রেখে কর্মসূচি পালনের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট রুট ঠিক করে দেয়।

সিংঘু, টিকরি ও গাজীপুরÑ এই তিনটি জায়গায় কৃষকরা ব্যারিকেড ভেঙে, পায়ে হেঁটে ও ট্রাক্টরে করে মিছিল শুরু করেন।

গাজীপুর সীমান্তে একজন কৃষক বিবিসিকে বলেন, ‘মোদিকে অবশ্যই এই কালো আইন ফিরিয়ে নিতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, কৃষকরা সবাই সীমান্ত অতিক্রম করে দিল্লি অভিমুখে এগিয়ে যাচ্ছে।

পুলিশের ঘোষণা ছিল, দুপুর ১২টা নাগাদ কৃষকদের মিছিল নির্দিষ্ট তিনটি রুটে গিয়ে আবার উৎসস্থলে ফিরে যাবে। কিন্তু বাস্তবে ঘটল উল্টো। সকাল ৮টা থেকে দ্রুতগতিতে নয়াদিল্লির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে মিছিল। পুলিশের বাধা কেউ মানেননি। আর তাই নিয়ে উত্তপ্ত হয়েছে নয়াদিল্লির নয়ডা মোড়, আইটিও মোড়, এসবিটি এলাকা।

একাধিক ফুটেজে দেখা গেছে, কৃষকদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। চালায় লাঠিও। পাল্টা কৃপাণ হাতেও কৃষকদের দেখা যায়। সকাল ১০টায় নয়ডা মোড়ের চিত্রটা ছিল এমনই। পুলিশ লাঠি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি।

আইটিও মোড়ে দেখা যায়, কীভাবে ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যেতে চাইছিলেন কৃষকরা। সেখানেও জড়ো হয় বিপুল সংখ্যক ট্রাক্টর। মূলত সীমানা এলাকায় বেশি পুলিশ মোতায়েন থাকার কারণে নয়াদিল্লির কেন্দ্রে পুলিশের আঁটুনি দুর্বল হয়ে পড়েছিল। সে কারণে বিনা বাধায় এগিয়ে যেতে থাকেন কৃষকরা। আইটিও মোড় থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে দিল্লি পুলিশের সদর দপ্তর। সেখানে গিয়ে প্রতিবাদরত কৃষকরা হাজির হন কি না তা নিয়ে বাড়তে থাকে চিন্তা।

কৃষকনেতা রাকেশ টিকায়েত বলেন, ‘দিল্লিতে পৌঁছে গেলেও সেখানে বসে আন্দোলনের কোনো পরিকল্পনা বা লালকেল্লা যাওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত কৃষক সংগঠনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি। কৃষকরা দিল্লি যাবেন, আবার শান্তিপূর্ণ পথে ফিরে এসে পূর্বে যেখানে আন্দোলন করছিলেন, সেখানেই আন্দোলন করবেন।’

কিন্তু খুব একটা আত্মবিশ্বাসী শোনায়নি রাকেশ টিকায়েতের গলাও। তিনিও বুঝতে পেরেছেন, এই বিপুল জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। সে কারণেই দিল্লি পুলিশও পড়ে প্রবল চ্যালেঞ্জের মুখে। আইটিও মোড়ে একটি বাস দখল করে নেন কৃষকরা। সেখানে পুলিশের সঙ্গে শুরু হয় সংঘর্ষ। লাঠি হাতে দুপক্ষই তেড়ে আসে। কিন্তু বিপুল সংখ্যক কৃষকের উপস্থিতি থাকায় পুলিশকে রীতিমতো অসহায় দেখায় দুপুরের এই সংঘর্ষে। এই পরিস্থিতিতে দিল্লির মেট্রো পরিষেবা কিছু অংশে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

যে আইন নিয়ে কৃষকরা এত বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তাতে কৃষিকে উন্মুক্ত বাজার ব্যবস্থার আওতায় নেওয়া হয়েছে। আর এটিই কৃষকদের ক্ষুব্ধ করেছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তার নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার সংস্কারের পক্ষে। সূত্র : বিবিসি, এনডিটিভি, ইন্ডিয়া টুডে ও আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close