নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন আজ
প্রথম টিকা নেবেন নার্স রুনু
দেশের ইতিহাসে প্রথম নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) টিকা নেবেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু বেরোনিকা কস্তা। তার সঙ্গে টিকা নেবেন আরো দুজন সিনিয়র স্টাফ নার্স মুন্নী খাতুন ও রিনা সরকারও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টায় ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। আজই ২৫ জনকে ওই টিকা দেওয়া হবে। ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, সাংবাদিক, পুলিশ ও সেনাসদস্যদের মধ্যে যারা টিকা পাবেন তাদের ৫ জনের টিকা দেওয়া দেখবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর টিকা নেবেন আরো ২০ জন।
চিকিৎসক হিসেবে প্রথম টিকা নেবেন মেডিসিন বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. আহমেদ লুৎফর মবিন। ভ্যাকসিনেটর হিসেবে টিকাদানের জন্য সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু আক্তার ও দীপালি ইয়াসমিনের নাম রয়েছে।
প্রথম টিকা গ্রহীতা হিসেবে রুনু বেরোনিকার নাম থাকলেও তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ না থাকলে তালিকার অন্য দুজনের একজনকে টিকা দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে রুনু বেরোনিকা কস্তা গণমাধ্যমকে বলেন, হাসপাতাল পরিচালক তাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। তবে প্রথম টিকা গ্রহীতা হিসেবে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে অনুভূতি জানাতে রাজি হননি।
এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে একযোগে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করা হবে। গতকাল মঙ্গলবার কুর্মিটোলা হাসপাতালে টিকার স্থান পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি জানান, কুর্মিটোলা ছাড়া আরো ৩ থেকে ৪টি হাসপাতালে টিকাদান শুরু হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন। এর মাধ্যমেই দেশে টিকা দেওয়া শুরু হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী যুক্ত হয়ে প্রথম পাঁচজনকে টিকা দেওয়া দেখবেন।’
মন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের টিকার জন্য নিবন্ধন কার্যক্রমও চালু হয়ে যাবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালে ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে টিকা দেওয়া হবে। সারা দেশে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি। প্রথম যারা টিকা পাবেন তাদের মধ্যে ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়াও পুলিশ, সেনাবাহিনী, গণমাধ্যমকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ থাকবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার নভেল করোনাভাইরাসের টিকা বাংলাদেশে দেওয়া হবে। সরকার সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে যে তিন কোটি ডোজ টিকা কিনছে তার প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ গত সোমবার দেশে পৌঁছেছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর প্রথম চালানের টিকা মানবদেহে প্রয়োগের অনুমতিও দিয়েছে।
এছাড়া সিরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত আরো ২০ লাখ ডোজ টিকা ভারত সরকারের উপহার হিসেবে পেয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে যেহেতু এ টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়নি, তাই প্রথম দফায় ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের ওপর প্রয়োগ করে দেখা হবে। সব ঠিক থাকলে ৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে সারা দেশে টিকাদান।
সেজন্য হাতে থাকা ওই ৭০ লাখ টিকার বেশির ভাগ অংশ বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারির কথা বলা হলেও আমরা ৭ তারিখেই সারা দেশে শুরু করার চিন্তা করছি।’
যারা এই টিকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে ‘বিভ্রান্তিকর’ কথা বলছেন, তাদের উদ্দেশে জাহিদ মালেক বলেন, ‘টিকা আনা হয়েছে বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষা করতে, শরীরে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। এজন্য গত ৯ মাস ধরে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। কাজেই করোনাভাইরাসের টিকা সরকারের কাছে কোনো রাজনীতি নয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘এটা মানুষের জীবনরক্ষা করতে আনা হয়েছে। যারা এই টিকা নিয়ে বিরূপ প্রচার চালাচ্ছেন, তারা ভালো কাজ করছেন না। তারা এদেশের মানুষের মঙ্গল কামনা করলে এটা নিয়ে বিরূপ প্রচারণা চালাবেন না।’
শুরুতেই টিকা নিতে যাওয়া ডিএমসি চিকিৎসকের আহ্বান : টিকাদান কার্যক্রম চালাতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালও। কাল থেকে কোভিডের টিকা দিতে সার্বিক প্রস্তুতি শেষ করেছে কর্তৃপক্ষ। চারটি বুথসহ সেখানে করা হয়েছে পোস্ট ভ্যাকসিন ওয়েটিং জোন। কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু হলে টিকা নিয়ে যে গুজব আছে তা মানুষ বিশ্বাস করবে না বলে জানান টিকা নিতে যাওয়া প্রথম চিকিৎসক।
শুরুতেই ডিএমসির যে চিকিৎসক নেবেন তিনি হলেন সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এ বি এম জামাল। গতকাল তিনি গণমাধ্যমকে জানান, টিকার মাধ্যমে মহামারি মুক্তির পথে অগ্রসর হবে দেশ। তিনি বলেন, ‘সবারই ভ্যাকসিনটা নেওয়া উচিত। এটা একটা সৌভাগ্যের ব্যাপার। এই যে আমরা করোনা থেকে অনেক মানুষকে হারিয়েছি জ্ঞানীগুণী, বিখ্যাত মানুষকে হারিয়েছি, আমরা আর কাউকে হারাতে চাই না। আর কাউকে হারাতে না চাইলে আমাদের কাছে একটাই বিকল্প আছে ভ্যাকসিন নেওয়া।’
মহামারিকে পরাস্ত করতে সমাজের সবাইকে নির্ভয়ে টিকাদান কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান দেশের শীর্ষ এ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, ‘আনন্দঘন পরিবেশে ভ্যাকসিন কার্যক্রম পরিবেশটা শুরু হোক এবং সবাই নিতে আসুক। সেই প্রস্তুতির জন্য যা যা প্রয়োজন তার জন্য সব কিছু করা হবে।’ তিনি বলেন, টিকাদান কার্যক্রম শুরু হলে মানুষের মধ্যে একটি ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে। তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসকরাই তো আগে ভ্যাকসিন নিচ্ছেন। আমার ধারণা ভ্যাকসিন নেওয়া কার্যক্রম শুরু হলে নেগেটিভ কিছু বিষয় আসছে বা গুজবের কথাই যদি বলি ওই দিনের পর আর থাকবে না।’
"