রাজিবুল ইসলাম

  ২৬ জানুয়ারি, ২০২১

দেশের মাটিতে প্রথমবার বাংলাওয়াশ উইন্ডিজ

দেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধবলধোলাইয়ের লজ্জা দিল বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিতে নেয় টাইগাররা। বর্তমান বাংলাদেশ জাতীয় দলের সবচেয়ে সিনিয়র খেলোয়াড় তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বরাবরই ভালো কিছুর জন্য তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে বাংলাদেশ। তবে একই সঙ্গে এ চার তারকা জ্বলে ওঠেন খুব কম সময়ই। উইন্ডিজের বিপক্ষে এদিন চার তারকাই জ্বলে উঠেছেন। চারজনই তুলে নিয়েছেন হাফসেঞ্চুরি। তাতে উইন্ডিজকে বড় লক্ষ্যই ছুড়ে দেয় স্বাগতিকরা। এরপর বোলারদের সৌজন্যে বড় জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে টাইগাররা।

গতকাল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে উইন্ডিজকে ১২০ রানের ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। যা এ মাঠে রানের ব্যবধানে টাইগারদের সবচেয়ে বড় জয়। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ২৯৭ রান করে টাইগাররা। জবাবে ৪৪.২ ওভারে ১৭৭ রানে গুটিয়ে যায় দলটি। ফলে হোয়াইটওয়াশই হয় ক্যারিবিয়ানরা। ২০০৯ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো টাইগারদের কাছে ধবলধোলাই হলো দলটি। সেবার অবশ্য ক্যারিবিয়ানদের মাটিতে করেছিল তারা। এ নিয়ে মোট ১৪ বার এ কীর্তি গড়তে পারল বাংলাদেশ।

এদিন বাংলাদেশের এ চার তারকা তামিম, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ করেছেন ৬৪ রান করে। মাহমুদউল্লাহ অবশ্য অপরাজিত থেকেছেন। আর সাকিবের ব্যাট থেকে আসে ৫১ রান। এর আগে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে এ চার তারকা একসঙ্গে ফিফটি করেছিলেন।

চলতি সফরে নিজেদের সেরা দলটি আনতে পারেনি উইন্ডিজ। করোনাভাইরাসের কারণে তারকা খেলোয়াড়রা স্বেচ্ছায় বিশ্রাম নিয়েছেন। দ্বিতীয় সারির দল বাংলাদেশে এসে শুরু থেকেই সংগ্রাম করেছে। মিরপুরে আগের দুই ম্যাচেই ১৫০ করতে পারেনি তারা। সেই দলটির সামনে এদিন ছিল ২৯৮ রানের বিশাল চ্যালেঞ্জ। আর সে চ্যালেঞ্জে শুরু থেকেই চাপে ছিল দলটি।

শুরুতে দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে ক্যারিবিয়ানদের বড় চাপে ফেলে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। দলীয় ৭ রানেই দারুণ এক ডেলিভারিতে কিজর্ন ওটলিকে উইকেটরক্ষক মুশফিকের তালুবন্দি করেন এ পেসার। এরপর আরেক ওপেনার সুনীল আমব্রিসকেও ফেলেন এলবিডব্লিউর ফাঁদে। এরপর ক্যারিবিয়ান শিবিরে আঘাত হানেন আগের ম্যাচের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। কাইল মেয়ার্সকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তিনি। ফলে ৪৭ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে দলটি।

তৃতীয় উইকেটে অধিনায়ক জেসন মোহামেদ কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন এনক্রুমাহ বোনারকে নিয়ে। রানের গতি সচল না থাকলেও ১১ ওভার ব্যাট করেন এ দুই ব্যাটসম্যান। ২২ রানের জুটি ভাঙেন সাইফউদ্দিন। এরপর বনারকেও তুলে নেন তিনি। উইন্ডিজ তখন ১০০ রানও ছুঁতে পারেনি। এরপর রোভমান পাওয়েল এক প্রান্তে চেষ্টা চালিয়ে যান। ৪৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। কিন্তু সৌম্যর বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়লে কার্যত শেষ হয়ে যায় তাদের আশা। এরপর রেমন রেইফার, আলজেরি জোসেফদের ব্যাট কেবল হারের ব্যবধানই কমিয়েছে।

ইনজুরি থেকে ফেরার পর এদিন দারুণ বোলিং করেছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ৫১ রানের খরচায় পেয়েছেন ২টি উইকেট। এ ছাড়া মোস্তাফিজ ও মিরাজ পেয়েছেন দুটি করে উইকেট।

এর আগে সাগরিকায় দিনের শুরুটা অবশ্য সহজ ছিল না বাংলাদেশের জন্যও। ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে শুরুতে সংগ্রাম করতে হয় টাইগারদের। দলীয় ৩৮ রানেই দুই উইকেটের পতন। লিটন দাস তো বিদায় নেন খালি হাতে। তিন নম্বরে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েও পারেননি। তৃতীয় উইকেটে সাকিবকে নিয়ে দলের হাল ধরেন তামিম। যদিও নিজের প্রথম বলেই বিদায় নিতে পারতেন সাকিব। মেয়ার্সের অফ স্টাম্পে রাখা বল লেগে ঘোরাতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু অল্পের জন্য তা ধরতে পারেননি মেয়ার্স।

সে যাত্রায় বাঁচলেও রানের জন্য প্রচুর সংগ্রাম করতে হয় সাকিবকে। ভুগতে হয়েছে তামিমকেও। ১১৬ বলে ৯৩ রানের জুটি গড়েন এ দুই ব্যাটসম্যান। একই দিনে এ জুটি নিজেদের দুই হাজার রানও পূরণ করে। শুরুতে ধুঁকলেও ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে সাবলীল ব্যাটিং শুরু করেছিলেন তামিম। জেসন মোহাম্মদের বলে দারুণ একটি ছক্কা মেরে ভালো কিছুর আভাস দিচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই জোসেফের বলে পুল করতে গিয়ে আকিলের হাতে ধরা পড়ে সাজঘরে ফেরেন এ ওপেনার। ৮০ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় সাজান নিজের ইনিংস। এদিন জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৫০০ রান পূরণ করেন অধিনায়ক।

অধিনায়কের বিদায়ের পর সাকিবের সঙ্গে ইনিংস মেরামতের কাজে নামেন মুশফিক। ৩৮ রানের জুটিও গড়েছিলেন। তবে ফিফটি করার পরেই বোল্ড হয়ে যান সাকিব। রেমন রেফারেরস্লোয়ারে বিভ্রান্ত হয়ে লাইন মিস করেন তিনি। নিজের স্বভাববিরুদ্ধ ব্যাটিং করে ৮১ বলের ইনিংসে চার মারেন মাত্র ৩টি। পরে রানের গতি বাড়াতে কিছুটা আগ্রাসী ব্যাট চালাতে থাকেন মুশফিক। রিফারের বলে ছক্কা মারার পর আরো একটি হাঁকাতে গিয়ে ঠিকভাবে লাগাতে না পারলে কভারে ধরা পড়েন তিনি। ৫৫ বলের ইনিংসে ৪টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান।

মুশফিকের আধুরা কাজটি পরে করেন মাহমুদউল্লাহ। শেষ দিকে ঝড় তুলে দলের ইনিংস ৩০০ ছুঁইছুঁই করার মূল কৃতিত্বই তার। শেষ পর্যন্ত ব্যাট করে ৪২ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় করেন ৬৪ রান। উইন্ডিজের পক্ষে দুটি উইকেট উইকেট নিয়েছেন জোসেফ ও রেইফার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ

২৯৭/৬, ৫০.০ ওভার

মাহমুদউল্লাহ ৬৪, মুশফিক ৬৪

জোসেফ ৪৮/২, রেইফার ৬১/২

ওয়েস্ট ইন্ডিজ

১৭৭/১০, ৪৪.২ ওভার

পাওয়েল ৪৭, বোনার ৩১

সাইফ ৫১/৩, মিরাজ ১৮/২

ফল : বাংলাদেশ ১২০ রানে জয়ী

ম্যাচসেরা : মুশফিক (বাংলাদেশ)

সিরিজসেরা : সাকিব (বাংলাদেশ)

সিরিজ : বাংলাদেশ ৩-০ তে জয়ী

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close