নিজস্ব প্রতিবেদক
কেনা টিকার প্রথম চালান দেশে
ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে সরকারিভাবে কেনা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ দেশে এসেছে। এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিশেষ উড়োজাহাজ টিকার চালান নিয়ে গতকাল সোমবার সকাল ১১টার দিকে ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়।
এই টিকা আনা হচ্ছে বাংলাদেশে সিরাম ইনস্টিটিউটের ‘এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর’ বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মাধ্যমে। নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রতিষেধক হিসেবে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ‘কোভিশিল্ড’ তৈরি হচ্ছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটেও।
গতকাল সকাল ১০টা ৫৬ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৫০ লাখ ডোজ টিকা নিয়ে অবতরণ করে এয়ার ইন্ডিয়ার উড়োজাহাজ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ও বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালসের কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। টিকার বাক্স টঙ্গীতে বেক্সিমকোর ওয়্যারহাউসে নিয়ে যাওয়ার জন্য আগেই ৯টি ফ্রিজার ভ্যান বিমানবন্দরে প্রস্তুত ছিল। পরে বিমানবন্দর থেকে ফ্রিজার ভ্যানে টিকা নেওয়া হয়েছে টঙ্গীতে বেক্সিমকো ফার্মার ওয়্যারহাউসে। সেখানে টিকার মান যাচাইয়ের জন্য নমুনা পরীক্ষা করবে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেন ‘সিরাম ইনস্টিটিউট আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ২১ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে ৫০ লাখ ডোজ টিকা আসবে। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পাঠানো ৫০ লাখ ডোজ টিকা আমরা আজ গ্রহণ করলাম।’ তিনি জানান, স্যাম্পল ওষুধ প্রশাসনের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার পর সব প্রক্রিয়া শেষে চার-পাঁচ দিনের মধ্যে দেশের সব জেলায় করোনা ভ্যাকসিন পৌঁছে যাবে। বেক্সিমকো ফার্মার এমডি বলেন, ত্রুটি, ডেমেজ, শর্টেজসহ কোনো সমস্যা থাকলে, সেগুলো বেক্সিমকো ফার্মা নিয়ে নেবে। সেগুলোর দায় বেক্সিমকোর। তিনি বলেন, ‘এটাকে আমরা এখন নিয়ে যাব টঙ্গীতে আমাদের নতুন ওয়্যারহাউসে। কোল্ড চেইন মেনটেইন করে সেখানে টিকা রাখা হবে।’
নাজমুল হাসান জানান, ওয়্যারহাউস থেকে প্রতিটি ব্যাচের টিকার নমুনা পাঠানো হবে সরকারের ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে। পরীক্ষার পর সবকিছু ঠিক থাকলে ছাড়পত্র দেওয়া হবে। ছাড়পত্র পাওয়ার পর টিকাগুলো ৬৪ জেলায় পৌঁছে দেবে বেক্সিমকো। তিনি বলেন, ‘আমরা অ্যাপ্রুভাল পাওয়ার পর সরকার যেখানে পাঠাতে বলবে, সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আমার ধারণা, চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে তারা যেখানে পৌঁছে দিতে বলেছেন আমরা সেখানে পৌঁছে দিতে পারব।’
নাজমুল হাসান জানান, টিকার প্রতিটি কার্টনে একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস রাখা আছে। এই ডিভাইস প্রতি পনেরো মিনিট পরপর সিরাম ইনস্টিটিউটে তাপমাত্রার হালনাগাদ তথ্য পাঠাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা টিকার কার্টনগুলো প্রথম দেখবেন। এরপর প্রতিটি কার্টন খোলা হবে। সেখানে টেম্পারেচার মনিটরিং ডিভাইস দেওয়া আছে প্রতিটি কার্টনের ভেতরে। টিকা পৌঁছে দেওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হলে দায় বেক্সিমকো নেবে।’
বেক্সিমকো ফার্মার এমডি বলেন, পুরো সময় ওই টিকা দুই থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার কথা। সেটা যাতে হয়, সে কারণেই কার্টনে ওই ডিভাইস রাখা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের দেখাতে হবে যে পুনে থেকে মুম্বাই, সেখান থেকে ঢাকা হয়ে আমাদের ওয়্যারহাউস এবং সেখান থেকে জেলাপর্যায়ে পৌঁছাতে কোথাও কোনো কোল্ড চেইন ব্রেক হয়নি। যদি কোনো ড্যামেজ, শর্টেজ বা কোনো ধরনের সমস্যা থাকে, তাহলে আমরা তা চেঞ্জ করে দেব। টিকা নিয়ে সব ধরনের দায়িত্ব বেক্সিমকোর।’
এর আগে ২০ জানুয়ারি দেশে আসে ভারত সরকারের উপহার দেওয়া ২০ লাখ টিকা। সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, কোভিডের টিকার তিন কোটি ডোজ পর্যায়ক্রমে আনবে বেক্সিমকো ফার্মা।
সরকার, সিরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মধ্যকার ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে এই টিকা কেনা হয়েছে।
টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, ভারত থেকে কেনা টিকার প্রথম চালান নিয়ে নিজস্ব ফ্রিজার ভ্যান বেক্সিমকোর টঙ্গীর ওয়্যারহাউসে পৌঁছায় দুপুর ১টায়।
টিকা মজুদ করার সময় উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ দক্ষিণ) মোহাম্মদ ইলতুৎ মিস, সহকারী কমিশনার (টঙ্গী জোন) আশরাফুল ইসলাম, টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি শাহ আলম।
বেক্সিমকোর ওয়ারহাউসের চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজা বলেন, ‘আমরা ভ্যাকসিন মজুদ করেছি। পর্যায়ক্রমে ৬৪ জেলায় সরবরাহ করা হবে।’
"