মিনহাজুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

  ২৫ জানুয়ারি, ২০২১

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন

দ্বন্দ্ব কাটিয়ে মাঠে আ.লীগ কর্মী সংকটে বিএনপি

আর একদিন পরই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচন। আজ সোমবার মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে টানা ১৮ দিনের প্রচার। আগামী শুক্রবার মধ্যরাত পর্যন্ত সব ধরনের সভা-সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাই শেষ মুহূর্তের প্রচারে জমজমাট নির্বাচনী পরিবেশ। কোন্দল মিটিয়ে শেষ মুহূর্তে একহয়ে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

অপরদিকে বিএনপির প্রার্থী শাহাদত হোসেনসহ নগর বিএনপি এবং থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের বেশিরভাগ নেতাকর্মী বিভিন্ন মামলার আসামি। ফলে দলটির নেতাকর্মীরা কেন্দ্রে এজেন্ট হতে চাইছেন না।

চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগে থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনসহ ২০ জন। তাদের কর্মী-সমর্থকরা সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন কয়েকবার। তবে মনোনয়ন পান নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম রেজাউল করিম চৌধুরী। সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে রেজাউল করিম চৌধুরীর সঙ্গে একহয়ে প্রচার চালাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রার্থী নিয়ে দলের নেতাদের মধ্যেই দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। এখন প্রার্থী নিয়ে আর কোনো বিভেদ নেই। কিন্তু কেউ প্রকাশ্য এখন বিরোধিতা না করলেও গোপনে করছেন।

আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া জানান, কেন্দ্রীয় নেতারা চট্টগ্রামে আসার পর নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে। নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা নিষ্ক্রিয়ভাব থাকলেও এখন এক কাতারে এসে নৌকার জন্য কাজ করছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম জানান, বিএনপির কর্মী কোনো সংকট নেই। বর্তমান সরকারের আমলে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। যার কারণে মানুষের মধ্যে ভোটের যে আমেজ, উৎসব থাকে সেটা নেই। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে।

এদিকে চসিক নির্বাচনে বিএনপির নগর সভাপতি ডা. শাহাদতসহ চারজন দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদন করেছিলেন। তবে দলটির কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের চূড়ান্ত সভায় নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদত হোসেনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। এতে বিএনপিতে গ্রুপিং সৃষ্টি না হলেও মাঠে কর্মী সংকট রয়েছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচন বানচাল করার জন্য আওয়ামী লীগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করছে দাবি করে আসছে বিএনপি। গত দুই-তিনদিন ধরে পতেঙ্গা থেকে শুরু করে কালুরঘাট পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে হানা দেওয়ার অভিযোগ করে দলটি। ২০ থেকে ৩০ জনের গ্রুপ নিয়ে বাড়ি ঘেরাও করছে, আর বিএনপি নেতাকর্মীদের এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলছে। যেখানে নেতাকর্মীরা অনুপস্থিত, সেখানে বিএনপির নেতাকর্মীদের পরিবারকে হেনস্তা করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন বিএনপি।

এছাড়াও ভাঙচুর, সহিংসতা, হত্যাসহ নানা মামলা আছে বিএনপির ৩৪ প্রার্থীর ওপর। সেই তালিকায় আছেন মেয়র প্রার্থী নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনসহ পাঁচ নারী ও ২৮ সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী। এই তিন পদে বিএনপির ৩৪ প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মোট মামলা রয়েছে ২৩৮টি। শুধু বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধেই মামলা রয়েছে ৪৮টি। ৩৩ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে রয়েছে ১৯০টি। সাধারণ পুরুষ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ১৭৬টি আর সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা রয়েছে।

গত কয়েক দিনে চসিক নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সংঘাতের ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। যেগুলোতে আসামি করা হয়েছে বিএনপি ও এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মীকে। এর মধ্যে নগরীর কোতোয়ালি থানায় করা মামলায় ৩৫ জন, বাকলিয়ায় ২৪ জন এবং আকবর শাহ থানায় ৮১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন।

অপরদিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর কাজ করছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম ও নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর। গত এক সপ্তাহ ধরে চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহিদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সুলতান সালাহ উদ্দীন টুকু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, ব্যারিস্টার মীর হেলালসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা ডা. শাহাদাতের পক্ষে মাঠে নেমেছেন।

চসিক নির্বাচন আগামী ২৭ জানুয়ারি আগে নির্ধারিত ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ৪ হাজার ৮৮৬টি কক্ষে ভোটগ্রহণে দায়িত্ব পালন করবেন ৭৩৫ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৪ হাজার ৮৮৬ সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও ৯ হাজার ৭৭২ পোলিং কর্মকর্তা।

চসিক এলাকার ১৭, ১৮ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, প্রার্থীদের প্রচারের আওয়াজ তুলনামূলক কম, বরং বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাওয়ার প্রবণতা বেশি। এর মধ্যে বিএনিপর মনোনীত প্রার্থী শঙ্কার কথা বললেও আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্রসহ অন্য প্রার্থীরা বললেন, পরিবেশ ভালোই আছে।

১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ ওয়ার্ডে বিএনপির মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী এ কে এম আরিফুল ইসলাম ডিউক বলেন, আমার প্রচার চলছে। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি, ভোট চাচ্ছি। কিন্তু প্রতিপক্ষের হুমকি-ধামকি, ক্যাম্প ভেঙে দেওয়া, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার মতো সমস্যা রয়েছে। নির্বাচনের দিন এসব ঘটনা আরো বেশি হওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।

তবে এমন কোনো অভিযোগ নেই একই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের প্রার্থী শহীদুল ইসলামের। তিনি বলেন, পরিবেশ আগের চেয়ে অন্তত ভালো। কয়েকজন ভোটার জানালেন, তাদের মধ্যে শঙ্কাও আছে, আবার নির্বাচনের আমেজও আছে। তবে প্রচারের তীব্র আওয়াজে খানিকটা বিরক্ত তারা।

চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও চসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, যেকোনো সময়ের চেয়ে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় আছে। প্রার্থীরা তাদের প্রচার চালাচ্ছেন। আমাদের কাছে যেসব অভিযোগ আসছে, তা দ্রুত সমাধান করছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close