নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৪ জানুয়ারি, ২০২১

৬৬,১৮৯ পরিবার পেল জমি ও ঘর

মুজিববর্ষে ঘর উপহার বড় উৎসব : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সবার জন্য নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা করাই হবে মুজিববর্ষের লক্ষ্য, যাতে দেশের প্রতিটি মানুষ উন্নত জীবনযাপন করতে পারে। মুজিববর্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে ঘর দিতে পারার চেয়ে বড় কোনো উৎসব আর কিছুই হতে পারে না। আজ আমার অত্যন্ত আনন্দের দিন, কারণ একদিনে এত ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও ঘর দিতে পেরেছি। মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভূমি-গৃহহীন পরিবারের মধ্যে ঘর বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি এ দিন তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। গণভবনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (পিএমও) এবং সারা দেশের ৪৯২টি উপজেলা ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিল। অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো সরাসরি সম্প্রচার করে। এ দিন ৬৬ হাজার ১৮৯টি ভূমি-গৃহহীন পরিবারকে জমি ও ঘর দেওয়া হয় এবং ৩ হাজার ৭১৫টি পরিবারকে ব্যারাকে পুনর্বাসন করা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, মুজিববর্ষের অনেক কর্মসূচি আমাদের ছিল। সেগুলো আমরা করোনাভাইরাসের কারণে করতে পারিনি। তবে এই মহামারি একদিকে আশীর্বাদও হয়েছে। কারণ আমরা গৃহহীনদের ঘর করে দেওয়ায় নজর দিতে পেরেছি। আজ এটাই আমাদের সব চেয়ে বড় উৎসব।

করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের স্থবিরতায় ঘরগুলো হস্তান্তরকালে সশরীরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকতে না পারার আক্ষেপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইচ্ছা ছিল নিজ হাতে আপনাদের কাছে বাড়ির দলিল তুলে দেব। কিন্তু এই করোনাভাইরাসের কারণে সেটা করতে পারলাম না। তবে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছিলাম বলেই আপনাদের সামনে এভাবে হাজির হতে পেরেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে; তারপরেও সীমিত আকারে আমরা করে দিচ্ছি এবং একটা ঠিকানা আমি সব মানুষের জন্য করে দেব। কারণ আমি বিশ্বাস করি, যখন এই মানুষগুলো ঘরে থাকবে তখন আমার বাবা এবং মা-যারা সারাটা জীবন এ দেশের জন্য তাগ স্বীকার করে গেছেন তাদের আত্মা শান্তি পাবে।

শেখ হাসিনা বলেন, লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে এ দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, তাদের আত্মাটা অন্তত শান্তি পাবে। কারণ এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাটাই ছিল আমার বাবার একমাত্র লক্ষ্য।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া যখন ক্ষমতায় ছিল, ৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদেরও কক্সবাজার এবং পিরোজপুরে আমরা ফ্ল্যাট করে দিয়েছি অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্তদেরও ঘর করে দিয়েছি এবং সেখানে শিগগিরই আরো ১০০ ভবন করা হবে। এছাড়া শিগগিরই আরো এক লাখ ঘর আমরা করে দেব।

অনুষ্ঠানে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি পরিবেশিত হয়। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার কাঁঠালতলা গ্রাম; নীলফামারির সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুর গ্রাম; হবিগঞ্জের চুনারুঘাট এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার উপকারভোগীদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সারাদেশের বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপকারভোগীদের বাড়ির চাবি এবং দলিল হস্তান্তর করেন। পিএমও সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী এই স্বল্প সময়ে সফলভাবে গৃহনির্মাণ এবং কাগজপত্র তৈরির মতো জটিল কাজ ঠিকাদার নিয়োগ না দিয়ে সম্পন্ন করতে পারায় জেলা প্রশাসন এবং তার দপ্তর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত দ্রুত সময়ে পৃথিবীর কোনো দেশে কোনো সরকার একসঙ্গে ৬৬ হাজার ১৮৯টি ঘর করে দিয়েছে কিনা আমার জানা নেই। সেজন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা তার সাড়ে তিন বছরের দেশ পরিচালনায় যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ পুনর্গঠনকালে যে সংবিধান প্রণয়ন করেন তার ১৫(ক) অনুচ্ছেদে দেশের প্রতিটি নাগরিকের বাসস্থান পাওয়ার অধিকারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে যান। জাতির পিতা গৃহহীন-অসহায় মানুষের পুনর্বাসনে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালী জেলার (বর্তমান লক্ষ্মীপুর জেলা) চরপোড়াগাছা গ্রাম পরিদর্শনে যান এবং ভূমি ও গৃহহীন অসহায় মানুষের পুনর্বাসনের নির্দেশ দেন এবং তার নির্দেশনাতেই ভূমি ও গৃহহীন, ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হয়।

এ দিন ভিক্ষুক, ছিন্নমূল এবং বিধবাসহ ৬৬ হাজার ১৮৯টি ভূমি-গৃহহীন পরিবারকে জমি ও ঘর দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ৩ হাজার ৭১৫টি পরিবারকে ব্যারাকে পুনর্বাসন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অধীন আশ্রয়ণ প্রকল্প মুজিববর্ষ উদযাপনকালে ২১ জেলার ৩৬ উপজেলায় ৪৪টি প্রকল্পের অধীনে ৭৪৩টি ব্যারাক নির্মাণ করে ৩ হাজার ৭১৫টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করছে। এরই মধ্যে সারা দেশের ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি ভূমি-গৃহহীন পরিবারের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এ তালিকা অনুযায়ী গৃহ নির্মাণ ও পরিবার পুনর্বাসনের কার্যক্রম চলবে।

উপকারভোগী প্রতিটি পরিবারকে দুই শতক জমির রেজিস্টার্ড মালিকানা দলিল হস্তান্তরসহ নতুন খতিয়ান এবং সনদ হস্তান্তর করা হয়। প্রতিটি জমি এবং বাড়ির মালিকানা স্বামী-স্ত্রীর যৌথ নামে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি দুই রুমের সেমিপাকা টিনশেড বাড়িতে রান্নাঘর, টয়লেট, বারান্দাসহ বিদ্যুৎ ও পানির নাগরিক সুবিধা রয়েছে। গ্রোথ সেন্টারের পাশে হওয়ায় প্রকল্প এলাকায় পাকা রাস্তা, স্কুল, মসজিদ-মাদ্রাসা এবং বাজার রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close