কাজী আবুল মনসুর, চট্টগ্রাম

  ২৩ জানুয়ারি, ২০২১

চসিক নির্বাচন

সংঘাতের শঙ্কা

৭২৩ কেন্দ্রের মধ্যে ৪১০টি ঝুঁকিপূর্ণ

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে সংঘাত বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে এরই মধ্যে। ওইসব ঘটনায় নগরীর দুটি থানায় মামলাও হয়েছে। উত্তেজনা বাড়ছে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ক্ষমতাসীন দলের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের ঘিরে। সহিংসতার আশঙ্কায় ৭২৩ কেন্দ্রের মধ্যে ৪১০টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন।

জানা যায়, বিভিন্ন ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ অনেক মামলা আছে। নানা অভিযোগের কারণেই দলের সমর্থন পাননি তারা। দলীয় নির্দেশ না মেনে প্রার্থী হয়েছেন তারা কাউন্সিলর পদে। ওইসব ওয়ার্ডে হাঙ্গামা হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এরই মধ্যে নির্বাচনী সহিংসতায় একজন নিহত হওয়ার ঘটনায় এক ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীকে কারাগারে নেওয়া হয়েছে। ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধে আগে থেকেই খুন, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ ছিল।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনের দিন সংঘাত হতে পারেÑ এমন ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ১নং দক্ষিণ পাহাড়তলী, ২নং জালালাবাদ, ৯নং উত্তর পাহাড়তলী, ১১নং দক্ষিণ কাট্টলী, ১২নং সরাইপাড়া, ১৪নং লালখান বাজার, ১৮নং পূর্ব বাকলিয়া, ২৭নং দক্ষিণ আগ্রাবাদ, ২৮নং পাঠানটুলী, ৩০নং পূর্ব মাদারবাড়ী, ৩১নং আলকরণ, ৩৩নং ফিরিঙ্গিবাজার, ৩৪নং পাথরঘাটা।

নির্বাচন ঘিরে সংঘর্ষের আশঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে চার স্তরের নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন সিএমপি কমিশনার। একই সঙ্গে সংঘাত এড়াতে নির্বাচনের দিন বিজিবিকে মাঠে রাখার সিদ্ধান্ত রয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)।

সিএমপি কমিশনার সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীর প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘নগরীর ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫টি ওয়ার্ডকে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডের অতীত ইতিহাস মাথায় রেখে আমরা কেন্দ্রগুলোকে ঝুঁকি, গুরুত্বপূর্ণ অথবা সাধারণ নির্ধারণ করে থাকি। সে হিসেবে নিরাপত্তাব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে। জনগণ যাতে নিরাপদে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, তার জন্য সব ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হবে।’

রিটার্নিং অফিসার চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান অবশ্য প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে অতীতের মতো সুষ্ঠু, সংঘাতমুক্ত একটি নির্বাচন উপহার দেওয়ার সব চেষ্টাই চালাচ্ছি। নির্বাচনী সংঘাতের বিষয়টি সব সময় কমিশনের নজরে রয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে নির্বাচন যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, তার জন্য সব ব্যবস্থাই করা হচ্ছে। সব ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানে রয়েছে নির্বাচন কমিশন।’

নগরীর কাট্টলী ওয়ার্ডে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে মারা গিয়েছিল একজন। নির্বাচনে অন্যতম স্পর্শকাতর ২৮নং পাঠানটুলী ওয়ার্ড। সেখানে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী আবদুল কাদেরের বিরুদ্ধে খুন, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। দল থেকে এবার তাকে সমর্থন দেওয়া না হলেও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে দীর্ঘদিন আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছিলেন কাদের। সম্প্রতি এ ওয়ার্ডে নির্বাচনী প্রচারকালে আজগর আলী বাবুল নামে একজন খুন হলে কাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর বেশ কয়েক দিন তার পক্ষে এলাকায় গণসংযোগ হয়নি। তবে কারাগার থেকে নির্দেশনা পেয়ে তার পক্ষে স্ত্রী নুসরাত জাহান মাঠে নামেন। কাদেরের সমর্থকরাও নুসরাতকে নিয়ে প্রচার শুরু করেছেন।

জানা গেছে, চসিক নির্বাচনে ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৪টিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দলের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীরা। এরমধ্যে ১৩টি ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলররা দলীয় সমর্থন পাননি। অবশ্য ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন হিরণ তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। বাকি ১২ ওয়ার্ডে মুখোমুখি অবস্থানে আছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও দলের সাবেক কাউন্সিলররা। এরমধ্যে ৩১নং ওয়ার্ডের প্রার্থী তারেক সোলায়মান সেলিম মারা গেলে সেখানে নির্বাচন স্থগিত করা হয়।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের সঙ্গে দলীয় সমর্থনপুষ্ট প্রার্থীদের সংঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে কিছু ওয়ার্ডে। আবার কোনো কোনো ওয়ার্ডে বিএনপির প্রার্থীদের সঙ্গেও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংঘাত হতে পারে। এরই মধ্যে নগরীর কাজীর দেউড়ি এলাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগের অভিযোগ, বিএনপির কার্যালয় নাসিমন ভবন থেকে ছাত্রদল, যুবদল রাতে হামলা করছে। তারা বুধবার রাতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী রেজাউল করিমের একটি নির্বাচনী ক্যাম্পও ভেঙেছে। এ ঘটনায় ৩৫ নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। বিএনপির ১০ নেতাকর্মী গ্রেপ্তারও হয়েছে। অপরদিকে কোতোয়ালি থানার ওসি নেজাম উদ্দিনকে অপসারণের দাবি তুলেছেন বিএনপির প্রার্থী। এমনকি ওসি নেজামকে না সরালে নির্বাচন বর্জন করার হুমকিও দিয়েছেন মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত হোসেন।

বিএনপি মনে করছে, নির্বাচনে তাদের হারানোর কিছু নেই। এই নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি। কাউন্সিলর পদে সাধারণ ও সংরক্ষিত ৫৪ ওয়ার্ডের মধ্যে ৪৮টিতে ৮০ জনেরও বেশি প্রার্থী আছেন, যারা আওয়ামী লীগের ব্যানারে সক্রিয়। মূলত ওয়ার্ডগুলোতে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কাজ করছেন আওয়ামী লীগের লোকজনই। আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী নিয়ে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বিপাকে পড়েছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close